বিশেষ প্রতিনিধিঃ খাদিজা আক্তার।
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায় শিশু শ্রমিকের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। শিশুশ্রম আর শিশু নির্যাতন প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আইনি বিধান থাকলেও নেই কোন প্রয়োগ। ফলে রামগতি-কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন দোকানপাট, গণপরিবহন, হোটেল-রেস্তোরা, কাঁচাবাজার ও বাসাবাড়িসহ দারিদ্র্যের কারণে এসব শিশু শিক্ষার আলো থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
শিশু শ্রমিকরা পেটের তাগিদে অল্প বেতনে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যাচ্ছে। ফলে ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা কার্যক্রম। শিশুশ্রমের প্রধান কারণ দারিদ্র্য। বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনায় অনেক শিশু শ্রমিক চিরজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। দরিদ্র হতভাগ্য এই শিশু শ্রমিকদের পুনর্বাসনে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর পর্যাপ্ত কোন উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ সচেতন মহলের। আবার এই শিশুরা বর্তমানে পেটের তাগিদে অটোরিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন।
শিশুদের স্কুলে নিয়ে আসা এবং ধরে রাখার জন্য ব্যাপকহারে উপবৃত্তি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি থাকলেও শিক্ষা বিভাগের তেমন কোন কার্যকর ভ‚মিকা চোখে পড়ছে না। ফলে যে বয়সে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার কথা সে বয়সের শিশুরা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ ও অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছে।
দরিদ্রতার জালে আবদ্ধ এসব শিশু বিভিন্ন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, ক্ষুদ্র কারখানা, হোটেল, রেস্তোরাঁ, চা- দোকান, ওয়ার্কসপ, পুরান গাড়ি মেরামত, অটোরিকশা চালানো, ফার্নিচার, মিলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কঠোর পরিশ্রমের কাজ করছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে। নসিমন-করিমন, রিকশা, ভ্যান চালানো, বাস-ট্রাক, পিকআপ ও বিভিন্ন ধরনের গাড়ির হেলপার, ইট পাথর ভাঙা, ওয়েল্ডিং-এর কাজসহ নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট, চরলরেন্স, করইতলা, তোরাবগঞ্জ, করুনানগর, ফজুমিয়ারহাট, চরবসু, ইসলামগঞ্জ, মতিরহাট, চৌধুরীবাজার, মুন্সীরহাট, মাতাব্বরহাট এবং রামগতি উপজেলার জমিদারহাট, আলেকজান্ডার, বালুচর জনতা বাজার, রামদয়াল বাজার, হাজিগঞ্জ, বান্দেরহাট, আযাদনগর, আদর্শ বাজার, সৈয়দ মৌলভীবাজার, চৌধুরী বাজার, বিবিরহাট, রামগতি বাজারসহ ছোট বড় সবধরনের হাটবাজার ও রাস্তার পাশে গড়ে উঠা ছোট ছোট দোকানের সামনে অধিকাংশ রিকশা ও অটোরিকশার ড্রাইভার শিশু।
একদিকে পরিবারের দারিদ্র্য অপরদিকে করোনাভাইরাসের কারণে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন সচেতন মহল। এসব এলাকার অধিকাংশ শিশুরা অল্প বয়সে লেখাপড়ার পরিবর্তে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। অনেক শিশু মাদরাসা ও স্কুলের চিন্তা বাদ দিয়ে অটোরিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন। আবার নেশা জাতীয় ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডে ও জড়িয়ে পড়েছেন অনেকেই।
ফজুমিয়ারহাট এলাকার মরিয়ন আক্তার ও আবুল খায়ের নামের দুই জন অভিভাবক জানান, অভাবের তাড়নায় তারা কিস্তিতে অটোরিকশা ক্রয় করে শিশুদের হাতে করে তুলে দেন। চরবসু এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান মানিক জানান, শিশু শ্রমের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নানা বিড়ম্বনার শিকার হয়ে শিশুরা ঝুঁকি নিয়ে কঠিন পেশায় যুক্ত করে শ্রম দিতে দেখা গেছে। করোনা পরিস্থিতিতে উদ্বেগ হারে তা বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের একটি অংশ পরিবারের অভাবের কারণেই এসব পেশা বেছে নেয়। অভিভাবকদের অসচেতনতা ও আর্থিক সঙ্কট এর জন্য প্রধান দায়ী বলে উল্লেখ করা যেতে পারে। উপবৃত্তির টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি ও শতভাগ নিশ্চিত করা গেলে শিশু শ্রমের হার কমানো যেতে পারে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহা. মফিজুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো এখন খোলা হচ্ছে। আশাকরি আমরা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় ঝরে পড়া শিশুদের স্কুল ও মাদরাসা মুখী করতে পারবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান বলেন, করোনা মহামারী কারণে দীর্ঘদিন মাদরাসা ও স্কুল বন্ধ থাকায় এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। শিশুদের স্কুলমুখী করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হবে।
0 Comments