শীতলক্ষ্যা নদীর দুইপাড়ে অবৈধ দখলদারিত্বের কারণে সংকুচিত হয়ে পড়েছে বহমান শীতলক্ষ্যা নদী। এবার শীতলক্ষ্যা নদীর (পশ্চিম পাড়) নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের অংশে প্রশাসনের সেই অসহায়ত্ব দেখা দিয়েছে। যে কারণ নদীর মাঝে ড্রেজার মেশিন ও পাইপ বসিয়ে বালুর ব্যবসা করলেও উচ্ছেদ করছে না সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর কোন পক্ষই।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম পাড় থেকে শুরু একেবারে নদীর মধ্য অংশ পর্যন্ত ড্রেজারের অবৈধ ভাসমান ঘাট বসিয়ে ট্রলার দিয়ে দিনে-রাতে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নদীর পশ্চিম পাড় থেকে ড্রেজারের ভাসমান মেশিন নদীর একেবারে মাঝে বসানো হয়েছে। যার কারণে নদীর ড্রেজার বসানো ওই অংশ দিয়ে ড্রেজারের পাাইপের কারণে নৌযান চলাচল করতে পারছে না। এতে নদী সংকুচিত হয়ে পড়ায় যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে জেনেও উল্টো পথে নৌযানগুলো চলতে বাধ্য হচ্ছে।
ঘটনাস্থলে যোগাযোগ করে জানা যায়, নদীর মধ্য অংশে এভাবে ড্রেজারের অবৈধ ভাসমান ঘাট বসিয়ে বালুর ব্যবসা করছেন জনৈক তাজিম বাবু। তিনি এলাকার বহুল আলোচিত-সমালোচিত সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও জেলার চাঞ্চল্যকর সাতখুন মামলার মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী নূর হোসেনের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) অনুমোদন না নিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এভাবে নদীর মধ্য অংশ দখল করে ড্রেজার বসিয়ে তিনি ডেমরা-নারায়ণগঞ্জ সড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের রংধনু সিনেমা হলের পাশে গদী বসিয়ে দীর্ঘদিন যাবত এ বালুর ব্যবসা চালাচ্ছেন। তার এসকল দৃশ্যমান অবৈধ দখলদারত্বের বিরূদ্ধে অদৃশ্যমান কারণে কোনো প্রকারের পদক্ষেপ নিচ্ছে না বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ।
এদিকে এলাকাবাসী জানায়, আওয়ামী লীগ নেতা তাজিম বাবু গত কয়েক বছর যাবত শীতলক্ষ্যায় ভাসমান ড্রেজার বসিয়ে বাল্কহেড থেকে বালু পাইপের মাধ্যমে রংধনু সিনেমা হলের পাশে বালুর গদিতে আনে। সেই বালু ট্টাক দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ, ডেমরাসহ আাশেপাশের এলাকায় বিক্রি করে। বিআইডব্লিউটিএর বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের লোকজন এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের ম্যানেজ করে তিনি নদীর মধ্য অংশ দখল করে রংধনু সিনেমা হলের পাশে বালুর বিশাল স্তুপ করেছেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনোরকমের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে তার বালুর গদির কার্যক্রম। এ ব্যপারে এলাকাবাসী জেলা প্রশাসক ও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক শেখ মাসুদ কামাল জানান, তিনি বিষয়টি অবগত না। তবে নিয়মিত তাদের অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, কেউ যদি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক তাজিম বাবু জানায়, অন্যান্যরাও শীতলক্ষ্যা নদীতে ড্রেজার বসিয়ে ব্যবসা করছে। আমিও ব্যবসা করছি। এতে সমস্য কোথায় ?
উল্লেখ্য যে, মাঝেমধ্যে অবৈধ ড্রেজারসহ নদীর তীরে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা লোকদেখানো অভিযানে উচ্ছেদ করা হলেও পরে কয়েকদিনের মধ্যে আগের রূপ ফিরে পায় শীতলক্ষ্যার দু`পাড়। এতে বারবার বিড়ম্বনার শিকার হয় স্থানীয় এলাকাবাসী।
0 Comments