৪০ বছর বয়সেও চলে ছাত্রলীগের রাজনীতি। ফতুল্লায় ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় হতাশায় কর্মীরা


 রিপোটঃ পলাশ সেন





নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখানো পর্যন্ত শুধুমাত্র রুপগঞ্জ, সোনারগাঁ উপজেলা ছাড়া অন্য উপজেলার কমিটি দিতে পারেনি তারা। বছর শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও কমিটি দিতে না পারাকে জেলা ছাত্রলীগের ব্যর্থতা হিসেবে মনে করছেন জেলার রাজনৈতিক বোদ্ধামহল। থানা কমিটিগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও কয়েকটি থানায় বছরের পর বছর একই পদে বহাল রয়েছেন বয়স্ক ছাত্রনেতারা। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের থানা পর্যায়ের কমিটিগুলোতে বয়স্ক ছাত্রনেতারা আসীন থাকায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা যায়, ২০০৩ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেন তৎকালীন সভাপতি এহসানুল হাসান নিপু ও সাধারণ সম্পাদক জিএম আরাফাত। এরপর ২০১১ সালে সাফায়েত আলম সানিকে সভাপতি ও মিজানুর রহমান সুজনকে সাধারণ সম্পাদক করে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালে আজিজুর রহমান আজিজ ও রাফেল প্রধানকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। অথচ এই পুরো সময় তথা ২০০৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁ থানা কমিটি দিয়েছিলো সানি ও সুজনের নেতৃত্বে থাকা জেলা ছাত্রলীগ। কিছু দিন পূর্বে আজিজ-রাফেলের নেতৃত্বে দেয়া হয় রূপগঞ্জ থানা কমিটি। এছাড়া তৎকালীন নিপু-আরাফাত জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকাকালীন ফতুল্লা, থানায় যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা এখনো ওই একই পদে বহাল আছেন। যাদের অনেকেরই বয়স চল্লিশেরও বেশী। শুধুমাত্র আড়াইহাজার থানা কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়েছিলো তবে সেখানে জেলা ছাত্রলীগের প্রধান্য ছিলো না। দীর্ঘদিন জেলার থানা কমিটিগুলোতে নতুন নেতৃত্ব তৈরী না হওয়াতে জেলার তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটির বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও থানা কমিটি দিতে না পারায় জেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নিয়েও নানা প্রশ্ন তুলছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

আজিজ-রাফেল দায়িত্ব পাওয়ার পর শুধুমাত্র রূপগঞ্জ থানা ছাত্রলীগ কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটির সভাপতি হয়েছেন ফয়সাল আলম শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ ভূইয়া মাসুম, সিনিয়র সহ সভাপতি রিয়াজ আহমেদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয় মামুনুর রশিদকে ।

আড়াইহাজার থানা ছাত্রলীগ কমিটি ওই আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু কেন্দ্র থেকে করিয়ে দিয়েছেন যার সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সুজয় কুমার সাহা। ওই কমিটিতে জেলা ছাত্রলীগের কোন মতামত ছিলো না।

নিপু-আরাফাত জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকাকালীন সোনারগাঁ থানা ছাত্রলীগ কমিটির সভাপতি হাসান রাশেদ ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় রাসেল মাহমুদকে।

ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের কমিটিতে এখানো ১২ বছর আগের কমিটির নেতারাই আসীন রয়েছেন। তারা বিভিন্ন স্থান ও অনুষ্ঠানে নিজেদের ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। ওই কমিটিগুলোর দায়িত্বে যারা আছেন তাদের বেশীরভাগ নেতার বয়স চল্লিশোর্ধ। তবে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২৯ বছর পার হয়ে গেলে কোন নেতাই ছাত্রলীগের কমিটির দায়িত্বে থাকতে পারবে না।

অথচ, ফতুল্লা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মোহাম্মদ শরীফুল হক ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান। যাদের দু’জনেরই বয়স চল্লিশ উর্দ্ধে। নিপু-আরাফাত থাকাকালীন সময় তাদের কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। এখানো পর্যন্ত তারা একই পদে বহাল আছেন।

দীর্ঘদিন যাবৎ একই মুখ একই পদে বহাল আছে। যাদের বয়স অনুযায়ী ছাত্র রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকার কথা নয়। কবে নাগাদ ওই আদু ভাইদের দখলে থাকা থানা কমিটিগুলো হতে পারে এমন প্রশ্ন জানতে চেয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজকে মুঠোফোন করা হলে তিনি  বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পরপরই আমাদের প্রত্যেকটা কমিটি আমরা যাচাই-বাছাই করেছি। নির্বাচনের পরপরই ফতুল্লা থানা কমিটি দেয়া হয়ে যেতো। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের কয়েকদিন পরেই শুরু হয় ডাকসু নির্বাচন। তার কিছু দিন পরেই আবার শুরু হয় উপজেলা নির্বাচন। মূলত এই কারণেই কমিটিগুলো দেয়া হয়নি। তা না হলে বন্দর ও ফতুল্লা থানা কমিটি এতোদিনে হয়ে যেতো। বলাচলে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে এবং আশা করি খুব কম সময়ের মধ্যেই কমিটিগুলো দেয়া হবে।

একই প্রসঙ্গে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাফেল প্রধান বলেন, প্রত্যেকটা উপজেলাতে কমিটি দেয়া হবে। সব উপজেলা কমিটিরই পর্যায়ক্রম চলছে। কেন্দ্র থেকে আমাদের ১ বছরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিতে বলা হয়েছিলো। আর সেটা মোটামোটি কমপ্লিট করা হয়েছে। উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির ব্যাপারে সিভি কালেকশন চলছে। যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চলছে। সবাই তো আর ভালো মানুষের ঘরের ভালো সন্তান নাহ্।

তিনি আরও বলেন, দেশনেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তৃণমূল থেকে খুজে ভালো মানুষ বের করতে। আমরা বাছাই করছি যারা ভালো ও এক্টিভ আছে তাদের। অছাত্র দিয়ে তো আর সংগঠন চালানো যাবে না।

 

অন্যদিকে সচেতন মহলের মতে, এক যুগেরও বেশী ক্ষমতায় থাকার ফলেই দায়িত্ব পালনে অবহেলা ছাত্রলীগের। তা না হলে থানা কমিটিতে কিভাবে ৪০-৪৫ বছরের ছাত্রলীগ নেতা ১০-১২ বছর একই পদে বহাল থাকে। যেখানে ২৯ বছরের বেশী বয়স হলে ছাত্রলীগে থাকার নিয়ম নেই সেখানে কিভাবে আদু ভাইরা দায়িত্ব পালন করে? থানা কমিটিতে এখনো কমিটি না দেয়াটা তাদের ব্যর্র্থতা।

Post a Comment

0 Comments