নড়াইল: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজার কাছে নড়াইল সদর হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে অভিযোগকারী নারীকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে ৮ চিকিৎসক ও দুই মেডিক্যাল প্যাথোলজিস্টকে করা শোকজপত্র প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এমপি মাশরাফির নির্দেশে সোমবার (২০ ডিসেম্বর) এ শোকজ প্রত্যাহার করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আসাদ-উজ-জামান মুন্সী।
তিনি বলেন, চিকিৎসক-কর্মচারীদের সকাল ৮টায় হাসপাতালে আসার কথা থাকলেও গত শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার পরে আসায় ৮ চিকিৎসক ও দুজন মেডিক্যাল প্যাথোলজিস্টকে শোকজ করা হয়েছিল। রোববার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে হাসপাতালে এসে এসব চিকিৎসক ও প্যাথলজিস্টদের শোকজপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন এমপি মাশরাফি। সোমবার (২০ ডিসেম্বর) ওই শোকজ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এদিকে এমপি মাশরাফি হাসপাতালে যাওয়ার পর তার কাছে সেখানে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেছিলেন ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১৫ মাসের এক শিশু রোগীর দাদি। ওই নারীকে সোমবার (২০ ডিসেম্বর) পারভিন নামে হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ের এক কর্মচারী মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আসাদ-উজ-জামান মুন্সী বলেন, ওই নারী এক শিশু রোগীর দাদি হন। তাদের ডিসচার্জ করে দিলেও খাবারের বিষয় নিয়ে এক আউটসোর্সিং কর্মীর (পারভিন) সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, ওই নারী পারভিনকে মারছেন। একপর্যায়ে পারভিনসহ ৪-৫ জন মিলে তাকেও পাল্টা মারধর করেন।
তিনি বলেন, যদিও ওই নারী আগে মেরেছেন, তবুও হাসপাতালে মারধর করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পারভিন নামে ওই আউটসোর্সিং কর্মীকে প্রত্যাহারের জন্য বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনা তদন্তে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান বাবুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি এখনও কোনো ফলাফল আমাকে দেননি। ’
হাসপাতাল সূত্র জানায়, শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) সদরের বাঁশগ্রামের মিনারুল মোল্যার ১৫ মাসের শিশুকন্যা রুকাইয়া ডায়রিয়াজনিত রোগে সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সেখানে ঝটিকা সফরে যান নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফি বিন মর্তুজা। তিনি হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীদের কাছে গেলে রুকাইয়ার দাদি তহমিনা বেগমসহ অনেকেই হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেন। এ কারণে সোমবার দুপুরে তহমিনা বেগমকে হাসপাতালের আয়া পরভীন খানম মারধর করেন।
তহমিনা বেগম অভিযোগ করেন, ‘সোমবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে হাসপাতালের এক আয়া ওয়ার্ডে আসলে তাকে বলি ভাত দাও। তখন ওই আয়া চিৎকার করে বলে তোর নাম নেই, তোরে ভাত দেওয়া যাবে না। তখন আমি বলি যেসব রোগী দুপুরের আগেই বাড়ি চলে গেছে তাদের একজনের খাবার দিলে কী হবে। তখন ওই আয়া বলেন, যেমন কুকুর তেমন মুগুর। এ কথার প্রতিবাদ করলে সে আমার চুলের মুঠি ধরে পায়ের স্যান্ডেল দিয়ে মারছে। ’
তিনি আরও বলেন, শনিবার মাশরাফি আসলে অভিযোগ করেছিলাম হাসপাতালে ময়লা থাকে, ডাক্তাররা ঠিকমতো দেখতেছে না, সেবা দিচ্ছে না, খাবার দেয় না। এইসব কথা বলিছিলাম। সেজন্য ভাত চাওয়ার সময় প্রতিশোধ নিছে ওই আয়া। ’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুরে ছয় বেডের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি ছিল ২৪ জন। সেখানে ১১ জনের দুপুরের খাবার দেওয়া হয়। তার মধ্যে রুকাইয়ার পরিবারের কারও নাম ছিল না।
0 Comments