মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলতে তৎপর সরকার


 

ঢাকা: র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) এবং এই বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান ৭ জন কর্মকর্তার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে নানাবিধ তৎপরতা চালাচ্ছে সরকার। ঢাকা ও ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্র জানায়, উভয় জায়গা থেকেই বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে চিঠি দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সেই চিঠিতে সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে র‍্যাবের ইতিবাচক ভূমিকা তুলে ধরেছেন তিনি। র‍্যাবের এসব ইতিবাচক কার্যক্রম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সাথে কোনোভাবেই যে সাংঘর্ষিক নয়, সেটা বোঝাতে চায় সরকার। তবে গত ২৪ ডিসেম্বর এই চিঠি দেওয়া হলেও এখনো কোনো জবাব আসেনি।

যুক্তরাষ্ট্রে সফরে যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা সামনে রেখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আগামী মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। সফরকালে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিক ও মার্কিন সিনেটরদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এসব বৈঠকে তিনি র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তি তুলে ধরবেন। বৈঠকের মাধ্যমে ইতিবাচক ফলাফল আসতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

লবিস্ট নিয়োগ
র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের লবিস্ট বা কোনো আইনি সংস্থাকে নিয়োগ দিতে তৎপরতা চালাচ্ছে। ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস এ বিষয়ে কাজ করছে। লবিস্ট দ্বারা যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটরদের কাছে সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে চায় সরকার।

সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ
বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো র‍্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপ মোকাবিলা আগে কখনো করেনি বাংলাদেশ। সে কারণে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে অব্যাহতভাবে আলোচনা চালিয়ে যেতে চায়। এ বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপও নিতে চায় সরকার।

ঢাকায় আসছে মার্কিন প্রতিনিধিদল
আগামী দুই-এক মাসের মধ্যেই ঢাকা সফরে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল। সফরকালে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হবে। সে সময়ে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তোলা হতে পারে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর খোলামেলা বক্তব্য
মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন শুরু থেকেই খোলামেলা বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। তিনি বলেছেন, যখনই কোনো দেশ ভালো করে, তখন তার শত্রু বাড়ে, চাপও বাড়ে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরকারিভাবে তেমন কিছুই করেনি। তারা তাদের কাজ করেছে, আমরা আমাদের কাজ করছি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে কঠোরভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছেন ড. মোমেন।

গত বছরের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে র‍্যাব এবং এই বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে পৃথকভাবে এ নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দপ্তর।

নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদও রয়েছেন, যিনি এখন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একই সাথে এটাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বড় ধরনের কূটনৈতিক চাপ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

Post a Comment

0 Comments