সৌদি আরবে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার পর সংসারের খরচ সামলাতে নারীদের মধ্যে ড্রাইভিং পেশায় আশার প্রবণতা বাড়ছে। ২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত সৌদিতে নারীদের গাড়ি চালানোর বৈধতা ছিল না। কিন্তু এখন অনেক নারীই রাইড শেয়ারিং পেশায় আসছেন। এমনই একজন ফাহদা ফাহাদ। তার লেবু রঙা কিয়া গাড়িটিই এখন পরিবারের বাড়তি আয়ের সহায়ক হয়ে উঠেছে।
৫৪ বছর বয়সী ফাহদা একটি হেলথকেয়ার কল সেন্টারে পার্ট-টাইম কাজ করেন। এর বাইরে সুযোগ পেলেই তিনি রাজধানী রিয়াদে রাইড-শেয়ারের কাজ করছেন। শুধুমাত্র নারীদের ব্যবহারের জন্য বিশেষ রাইড-শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে ফাহদা যাত্রী পেয়ে থাকেন।
ফাহদা জানান তার পরিবার দুটি শর্তেই ড্রাইভিংকে তার দ্বিতীয় পেশা হিসেবে সমর্থন দিয়েছে। শর্তগুলো হলো: খুব দূরে কোথাও যাওয়া যাবে না, আর যাত্রী হিসেবে শুধু নারীদের নিতে হবে।
কালো হিজাব ও মুখে মাস্ক পরা ফাহদা বলেন, "আমি বাড়তি কিছু উপার্জনের জন্যই ট্যাক্সি ড্রাইভার হিসেবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই।"
"তিন সন্তানের জন্য আমার বেতন যথেষ্ট নয়। আমার মেয়েটিও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন," বলেন তিনি।
নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া- সৌদির সামাজিক সংস্কারের অংশ হলেও অর্থনৈতিক দিক থেকেও বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। সৌদিতে জীবনযাত্রা নির্বাহের ব্যয় দিন দিন বাড়ছে।
ফাহদা জানান নিয়মিত চাকরি থেকে তিনি চার হাজার সৌদি রিয়াল পেলেও তা তার জন্য যথেষ্ট নয়। ড্রাইভিং থেকে তিনি আরও আড়াই হাজারের মতো অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
ফাহদা বেলা দুটোয় অফিস শুরুর আগেই ভাড়া নিয়ে থাকেন। কখনো কখনো রাত ১০টায় বাড়ি ফেরার পথেও যাত্রী দেন। বাধাধরা সময়ে ছাড়াই কাজ করা যায় বলে তিনি সন্তুষ্ট।
ফোনে নতুন রাইডের অফার দেখতে দেখতেই তিনি বলেন, "অবসরপ্রাপ্ত স্বামীর মাসের বিভিন্ন বিল পরিশোধে ও সন্তানদের স্কুলের খরচ বহন করতে আমাকে সাহায্য করছে এই কাজ।"
তেলনির্ভরতা কমাতে সচেষ্ট সৌদিতে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে। ২০২০ সালের জুলাইয়ে দেশটি মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশে উন্নীত করেছে।
গত ডিসেম্বরে আগের বছরের তুলনায় দেশটির পরিবহন ব্যয় ৭.২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। সামগ্রিক ভোক্তা ব্যয়ও ১.২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
একই সময়ে সৌদি নারীদের কর্মক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। এ সময় কয়েক লাখ নারী চাকরি পেয়েছেন।
গত বছর সরকারি পরিসংখ্যানে প্রথমবারের মতো দেখা গেছে যে, সৌদির কর্মশক্তির এক-তৃতীয়াংশের বেশি নারী।
বর্তমানে সৌদির রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, জুতার দোকান, ফিলিং স্টেশনে নারীরা কাজ করতে শুরু করেছেন। আগে এসব জায়গায় অভিবাসীরা কাজ করলেও সরকারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এসব কর্মসংস্থানে সৌদিদের আনা হচ্ছে। জাতীয়ভাবে এই 'সৌদিকরণে'র অংশ হিসেবে নারীরাও কাজ পাচ্ছেন।
ঐতিহ্যগতভাবেই সৌদি নারীরা আত্মীয়-স্বজনের বাইরে পুরুষদের সঙ্গে মিশতে পারেন না।
৩০ বছর বয়সী তিন সন্তানের মা ইনসাফ (ছদ্মনাম) জানান, সম্প্রতি স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি পেশা হিসেবে ড্রাইভিং বেছে নিয়েছেন।
এএফপিকে ইনসাফ বলেন, "আমার স্বামী আমাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা করে যেতে পারেননি। আর তাই সন্তানদের জন্য আমাকেই কাজে যেতে হচ্ছে।"
"আমি স্বামীর রেখে যাওয়া গাড়িটি ব্যবহার করেই পাড়ার নারী ও শিশুদের শপিং মল বা স্কুলে পৌঁছে দিই," বলেন তিনি।
"ড্রাইভার হিসেবে জীবন আমাকে নতুন করে বাঁচার সুযোগ দিয়েছে," বলেন ইনসাফ।
২০১৮ সালের পর সৌদি আরবে দুই লাখের বেশি নারী লাইসেন্স সংগ্রহ করেছে। একই সঙ্গে গত বছর গাড়ি বিক্রিও ৫ শতাংশ বেড়েছে।
২৯ বছর বয়সী মিশরীয় নারী যাত্রী আয়া দিয়াব জানান, নারীদের গাড়িতে উঠতে তিনি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক নারী যাত্রীও একই ধরনের কথা জানান। ফাহাদের গাড়ির যাত্রী হিসেবে তার পাশের সিটে ওঠে ওই নারী বলেন, "আমার মনে হয় যেন আমি আমার বোনের সঙ্গে যাই।"
0 Comments