স্বাধীনতার ৫০ বছরেও স্বীকৃতি মিলেনি কুতুবদিয়ার মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত শেখ মকবুল আহমদ সিকদারের


 সৈয়দ মুনিরুল হক নোবেলঃ

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০টি বছর পেরিয়ে গেলেও আজও স্বীকৃতি মিলেনি বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের দ্বীপাঞ্চল কুতুবদিয়ার তৎকালীন জমিদার মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বঙ্গবন্ধুর সহচর শেখ মকবুল আহমদ সিকদারের।
তিনি কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের আলী আকবর ডেইল ঘাটকুল পাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম জমিদার পরিবারে মরহুম সাহেব আলী সিকদার ও মরহুমা মোস্তফা খাতুনের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। 
বলা বাহুল্য, বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর এই শেখ মকবুল আহমদ সিকদারের সুযোগ্য নেতৃত্বেই কুতুবদিয়ায় স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেন এ দ্বীপবাসীরা। এখবর ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি অল্প সময়ের ব্যবধানে পৌঁছে যায় স্বাধীনতাবিরোধীদের কানে। আর তারাও বসে থাকেনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে দ্রুততর সময়ে পৌঁছে দেয় এ খবর। এদিকে পাকিস্তানী মিলিটারী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদররা একজোট হয়ে রাতের আঁধারে অপারেশন কিলিং মিশনে নামে মকবুল আহমদ সিকদারের বাড়িতে। অপরদিকে কিলিং মিশনের গোপন পরিকল্পনার খবর অপারেশনের আগমুহূর্তে জানতে পেরে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবনের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে রাতের আঁধারে মুক্তিকামী অনুগত জেলেদের নৌকায় চেপে ভয়াল উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে স্বাধীনতার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখেন মহান এ স্বাধীনতার সংগঠক। সেখান থেকেই নেতৃত্ব দেন কুতুবদিয়ার মুক্তিকামী মানুষের। কিন্ত তার জন্য চরম মাশুল দিতে হয় তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে। সেই রাতে ততকালীন মকবুল আহমদ সিকদারের ১৭ কক্ষবিশিষ্ট দোতলা দালানঘরে চলে ব্যাপক লুটতরাজ আর ধ্বংসের তান্ডবলীলা। ঘরের ভিতরে থাকা সবকিছু এমনকি দালানের ইটকাঠ সব লুটে নেয় রাজাকারের দল। সবকিছু লুটপাটের পর করে অগ্নিসংযোগ। মধ্যযুগীয় কায়দায় বিভৎস ও নির্মম তান্ডবে কেঁপে ওঠে পুরো কুতুবদিয়া। ২৭ জানুয়ারি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক 
দায়েরকৃত মামলার ৩নং আসামী শেখ মকবুল আহমদ সিকদারকে মারতে না পেরে মরিয়া হয়ে ওঠে কুতুবদিয়ার কুখ্যাত রাজাকার হাশেম ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। 
এদিকে সেদিন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ মকবুল আহমদ সিকদারের বাড়ির ভয়াবহ তান্ডবলীলার ধ্বংসাবশেষ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে রাজাকারদের নির্মমতার সাক্ষী হয়ে আজও পিলারগুলো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে এ জাতিকে অভিসম্পাত দিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে স্বাধীনতার ৪৫ বছর এ ইউনিয়ন পরিষদ দখল করেছিল বিএনপির দুই নেতা যথাক্রমে এটিএম নূরুল বশর চৌধুরী ও তার ভাই ফিরোজ খান। তাদের প্রত্যক্ষ মদদে মুক্তিযুদ্ধের এই জ্বলজ্বলে ইতিহাসকে ধামাচাপা দেয়া হয়। স্বীকৃতি তো দুরের কথা এমনকি একটা প্রত্যয়ন পত্রও দেয়া হয়নি তার পরিবারকে। এদিকে কালের বিবর্তনে এ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, ২৭ জানুয়ারি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক দায়েরকৃত মামলার ১নং আসামী বিকম নুরুচ্ছাফা। অথচ তিনিও স্বার্থান্ধের মতো কূপমন্ডুকতায় ভুগে তাঁর বিষয়ে বিএনপির চেয়ারম্যানগণের পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। এই ইতিহাস লোপাটের নেপথ্য নায়ক হিসেবে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করেন। তবু সত্য কখনও চাপা থাকে না বিধায় শেষরক্ষা হয়নি সেই  প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের। এবার নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান হিসেবে এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আলহাজ্ব মোঃ জাহাঙ্গীর সিকদার বি.এ। তারপর তিনিই প্রথম এ বঞ্চিত পরিবারকে প্রত্যয়ন করেন। এরপর তার অবদানের কথা জাতির সামনে তুলে ধরতে তার পুত্র ইমরুল কায়েস বুলবুল কাজ করে যাচ্ছেন। তার দাবি তার পিতার স্বীকৃতি ও মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত তাদের বাড়ির ধ্বংসাবশেষকে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের আওতায় এনে ঐতিহাসিক এ নিদর্শনকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা।
আর এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মরহুম মকবুল আহমদ সিকদারের পূত্র মোঃ ইমরুল কায়েস বুলবুল।

Post a Comment

0 Comments