নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় রূপসী নামে একটি রপ্তানীমুখী পোশাক কারখানার প্রায় এক হাজার শ্রমিক বেতন ভাতার দাবিতে তিন ঘণ্টা লিংক রোড অবরোধ করে রাখে।
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) দুপুরে নানা ভাবে শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করলে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে।
এসময় পুলিশ লাঠি চার্জ আর টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। এরপর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত শিবু মার্কেট এলাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড অবরোধ করে রাখে শ্রমিকরা। প্রায় ৩ ঘণ্টার সড়ক অবরোধে দীর্ঘ যানজটে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।
শ্রমিকরা জানান, ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকায় অবস্থিত রূপসী গার্মেন্টে প্রায় চার হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এ শ্রমিকদের মধ্যে কেউ তিন মাসের আবার কেউ দুই মাসের বেতন পাবে।
শ্রমিকদের দাবি, মালিক পক্ষ তাদের এক মাসের বেতন আটকালে বসবাস ও খাওয়া দাওয়ায় মারাত্মক সমস্যায় পড়তে হয়। এরমধ্যে মালিকপক্ষ কয়েক মাস যাবত বেতন ভাতা দেয় না। এতে শ্রমিকদের নানা সমস্যায় পড়ে কারখানায় কাজ করতে হয়। আর সমস্যার বিষয়টি মালিক পক্ষকে বার বার জানিয়ে ব্যর্থ হয়ে বিক্ষোভ করতে শ্রমিকরা বাধ্য হয়েছেন।
শ্রমিকরা জানান, পুলিশের লাঠিচার্জে অনেক শ্রমিক আহত হয়েছে। ভয়ে কারো নাম প্রকাশ করেনি। শ্রমিকদের বেতন ভাতা না পাওয়ার সমস্যা পুলিশ বুঝতে পারলে হয়তো এমন আচরণ করতেন না।
পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি এমএ শাহিন বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসেই শ্রমিকদের বেতন ভাতা নিয়ে টালবাহানা করেন। এখন তিন মাসের বেতন বকেয়া পড়েছে। এ বেতন বৃহস্পতিবার দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মালিকপক্ষ না দিয়ে আবারো ৭ এপ্রিল বেতন ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এতে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এক পর্যায়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক-সার্কেল নাজমুল হাসান মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ৬ এপ্রিল বেতন ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেন। এতে শ্রমিকরা না মেনে বিক্ষোভ চালাতে থাকেন। পরে লাঠি চার্জ ও টিয়ারসেল নিক্ষেপসহ বেশ কয় রাউন্ড গুলি করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেন পুলিশ। পুলিশের এ আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই। এতে অন্তত ১০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান জানান, শিল্প পুলিশের সমন্বয়ে থানা পুলিশ বিক্ষোভরত শ্রমিকদের শান্ত করে মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকরা তাতে রাজি না, তাৎক্ষনিক বেতন ভাতা দাবি করেন। বেতন ভাতা না পেলে সড়ক ছাড়বে না। এসময় শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে দিপঙ্কর নামে একজন এএসআই আহত হয়েছে। পরে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তিনি আরও জানান, যানজট আর জনদুর্ভোগের বিষয়টি চিন্তা করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে কিছু টিয়ারসেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। একই সঙ্গে শর্টগানের গুলিও ছোড়া হয়েছে। নিক্ষেপ করা গোলা বারুদের সংখ্যা হিসেব করে পরে জানানো হবে।
0 Comments