জেবি বাংলা নিউজ ২৪ ডেস্কঃ বকেয়া বেতন দিতে না পারায় পরীক্ষার হল থেকে এক ছাত্রকে অপমান করে বের দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এক মাসের বকেয়া বেতন দিতে না পারায় স্কুলটির খণ্ডকালীন শিক্ষক যুগল দাস ওই শিক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে বের করে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরে ওই স্কুলছাত্র লজ্জায়, অপমানে ও ভয়ে আর স্কুলে যেতে চাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তার পিতা আলমগীর হোসেন। ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও জমি ব্যবসায়ী রেজাউল করিম এবং প্রধান শিক্ষক ব্রজেন্দ্রনাথের নির্দেশেই ওই শিক্ষক এমন আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ স্কুলছাত্রের বাবার।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা চলছে। ওই শিক্ষার্থীর পিতা আলমগীর হোসেন গত ২৮ মার্চ স্কুলে গিয়ে নিজের অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা জানিয়ে বেতন দেওয়ার জন্য আরো কয়েকদিন সময় দিতে অনুরোধ করেন সংশ্লিষ্টদের নিকট। এর পরেরদিন ওই শিক্ষার্থী পরীক্ষার হলে গেলে পরীক্ষা শুরুর মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে তাকে অপমান করে বের করে দেন যুগল দাস। ওই শিক্ষার্থী লজ্জায়, ক্ষোভে বাসায় এসে ঘটনাটি তার পিতাকে জানায়।
এ ব্যাপারে আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলে দুই-তিনটা প্রশ্নের উত্তর লেখার পরেই তাকে অপমান করে বের করে দেওয়া হয়েছে। তারা আমাকে স্কুলে তলব করতে পারতো। ও আমার কাছে এসে খুব কান্না করেছে। এখন সে লজ্জায়-ভয়ে আর স্কুলেও যেতে চাচ্ছে না। পাগলা স্কুলে প্রায়ই এরকম ঘটনা ঘটে। ওই শিক্ষক রেজাউল করিমের নির্দেশেই এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। একইদিনে দশম শ্রেণির এক মেয়ে শিক্ষার্থী বেতন দিতে না পারায় তাকেও বেঞ্চের ওপর কানে ধরিয়ে দাঁড় করে রাখা হয়েছিল বলে জানতে পেরেছি।’
স্কুলছাত্রের বাবার অভিযোগ, ‘পাগলা উচ্চ বিদ্যালয় অনিয়ম-দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। এর আগেও দুর্নীতির টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ম্যানেজিং কমিটির দুই সদস্য রেজাউল করিম ও জুয়েল খান প্রকাশ্যে মারামারিতে লিপ্ত হয়। করোনাকালেও রেজাউল করিম জোরজুলুম করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন আদায় করেছে। অনেক অসহায় অভিভাবক বেতন দিতে বাধ্য হয়েছে। স্কুলের ফলাফলও ভীষণ বাজে। যে স্কুলে পরীক্ষা চলাকালীন আমার ছেলেকে বের করে দেওয়া হলো, আমি সেই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আর আস্থা রাখতে পারি না। রেজাউল করিমের যদি শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতো, তাহলে সে এইসব অপকর্ম করতে পারতো না। কিছুদিন আগেও সে এক শিক্ষার্থীকে মেরে গুরুতর জখম করেছে।’
আলমগীর আরো বলেন, ‘স্কুলের আর্থিক হিসাবের কোনো স্বচ্ছতা নেই। এমনকি শিক্ষার্থীদের পুরনো ডায়েরি দিয়েও জনপ্রতি একশো টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে। অবশ্যই তারা ক্ষমতাধর বলেই তাদের বিচার হচ্ছে না। প্রধান শিক্ষক মাননীয় সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের নাম ব্যবহার করছেন। তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তিনি জোরপূর্বক চেয়ার দখল করে রেখেছেন। আমার ছেলের সাথে যে অবিচার হয়েছে, আমি সাংসদ শামীম ওসমানের কাছে তার বিচার চাই। পাশাপাশি এই স্কুলের শিক্ষার মান যাতে উন্নত হয়, সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হয় সেটিই আমাদের চাওয়া।’
অভিযুক্ত শিক্ষক যুগল দাস ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য রেজাউল করিমের বক্তব্য জানতে তাদের মোবাইলে কল করা হলেও তা রিসিভ না করায় বক্তব্য গ্রহণ সম্ভব হয়নি।
0 Comments