কপালে টিপ পরা নিয়ে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় এক শিক্ষককে হেনস্তার ঘটনায় এখনও কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ।


 বেশ কিছু ভিডিও সংগ্রহ করা হলেও এখন পর্যন্ত ‘স্পষ্ট কিছু মেলেনি’ বলে পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য।

টিপ পরায় পুলিশের হেনস্তার শিকার হওয়ার কথা জানিয়ে ঢাকার তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দার শনিবার শেরেবাংলা নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

পুলিশের পোশাক পরা একজনের বিরুদ্ধে ‘ইভটিজিং’ এবং ‘প্রাণনাশের চেষ্টা’র অভিযোগ করা হয়েছে ওই জিডিতে।

শনিবার ওই খবর প্রকাশিত হলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। হেনস্থাকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রোববার সংসদে দাবি জানান সংসদ সদস্য, অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের (তেজগাঁও-জোন) অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার রুবাইয়াত জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা বিষয়টি ‘খুবই গুরুত্বের সঙ্গে’ দেখছেন।

“আমরা এ নিয়ে কজি করছি, তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি।”

যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আদৌ পুলিশ সদস্য নাকি অন্য কেউ, সে বিষয়েও এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।

শেরেবাংলা নগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাহাঙ্গীর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “সংগ্রহ করা ভিডিওতে স্পষ্ট করে কিছু বোঝা যাচ্ছে না, তবে পুলিশ সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে।


আমরা এখনও তদন্ত করে দেখছি, আদৌ এটা কোনো পুলিশ সদস্য, না অন্য কোনো সংস্থার লোক, সে বিষয়টি স্পষ্ট না হয়ে বলা যাবে না।”

পুলিশ কর্ককর্তারা বলছেন, ওই এলাকায় কোন কোন ইউনিটের পুলিশ সদস্য ডিউটিতে ছিলেন, তার একটি তালিকা তৈরির চেষ্টা চলছে।

তবে শিক্ষক লতা সমাদ্দার মোটর সাইকেলের যে নম্বর পুলিশকে দিয়েছেন, সে ব্যাপারে প্রাথমিক তদন্ত শেষে পুলিশ বলছে, ওই নম্বরের ‘ল’ সিরিজের একটি এবং ‘হ’ সিরিজের আরেকটি মোটর সাইকেল আছে।

‘ল’ সিরিজের বাইকটি ২০১৬ সালে গুলশান থেকে চুরি হয়ে গেলে সে সময় থানায় অভিযোগ করা হয়। এরপর মালিক তার মোটর সাইকেলটি পাননি। পুলিশ এই মালিকের সঙ্গে কথা বলেছে।

একই নম্বরের ‘হ’ সিরিজের মোটর সাইকেলটি যার নামে নিবন্ধন করা, তিন বছর আগে তিনি মিরপুরে এক বাসায় ভাড়া থাকতেন।

পুলিশ সেই বাসায় গিয়ে জানতে পারে, প্রায় তিন মাস থাকার পর ওই ব্যক্তি বাসা পরিবর্তন করেছেন। বাড়িওয়ালা তার কোনো ঠিকানা বা মোবাইল নম্বর দিতে পারেননি। তবে বাড়িওয়ালার সঙ্গে কথা বলে পুলিশ মনে করছে, ওই ব্যক্তি পুলিশ সদস্য নয়।


মোটরসাইকেল নম্বরটির কোনো একটি অংক ভুল হয়ে থাকতে পারে, সে সম্ভাবনাও মাথায় রাখছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

যে জায়গায় শিক্ষককে হেনস্তা করা হয়েছে, সেই জায়গা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সব পথ এবং দূরবর্তী সব সিসি ক্যামেরার ভিডিও সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে বলে তারা জানিয়েছেন।

থানায় দেওয়া অভিযোগে লতা সমাদ্দার লিখেছেন, শনিবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার বাসা থেকে রিকশায় ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমার সামনে নামেন। সেখান থেকে হেঁটে তেজগাঁও কলেজে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন।

তখন সেজান পয়েন্টের সামনে থেমে থাকা একটি মোটরসাইকেলের উপর পুলিশের পোশাক পরা এক ব্যক্তি বসে ছিলেন। ওই মোটরসাইকেলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে ওই ব্যক্তি লতার কপালে টিপ পরা নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন।

এক পর্যায়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন পুলিশের পোশাক পরা ওই ব্যক্তি। পেছনে ফিরে ঘটনার প্রতিবাদ করায় ফের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয় শিক্ষক লতাকে। তাকে উদ্দেশ্য করে 'টিপ পরছোস কেন' মন্তব্য করেন ওই ব্যক্তি।

লতার অভিযোগ, তিনি প্রতিবাদ করায় পুলিশের ওই সদস্য মোটরসাইকেল চালিয়ে তার গায়ের উপর উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। সরে গিয়ে রক্ষা পেলেও আহত হন তিনি। পরে পাশেই দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশকে তিনি বিস্তারিত জানান।

যে এলাকায় শিক্ষক লতা সমাদ্দারকে হেনস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে সেই এলাকাটি ট্রাফিকের তেজগাঁও বিভাগের। থানায় দেওয়া অভিযোগের বর্ণনা অনুযায়ী ট্রাফিকের কোনো পুলিশ সদস্য ওই এলাকায় ওই সময় ডিউটি করছিলেন কিনা জানতে চাওয়া হয়েছিল ট্রাফিকের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার সাহেদ আল মাসুদের কাছে।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বিষয়টি অত্যান্ত স্পর্শকাতর। গুরুত্বের সাথে আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, অভিযোগ করা শারীরিক বর্ণনা অনুযায়ী ট্রাফিকের সে রকম কোনো সদস্য সেখানে ডিউটি করছিলেন না। বরং লতা সমাদ্দার কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের পরামর্শেই থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন।

"তারপরও আমরা খোঁজ রাখছি, তদন্ত যারা করছেন তাদের সহযোগিতা করছি।"

Post a Comment

0 Comments