এনায়েতনগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সারাবছরই হাঁটুজল থাকে


 জেবি বাংলা নিউজ ২৪ ডেস্কঃ

এখন সারাবছরই যেন হাঁটুজল থাকে নারায়ণগঞ্জের এনায়েতনগর স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে। এর আগের বছরগুলোতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি জলাবদ্ধতার কবলে পড়লেও কিছুদিন পর সেই পানি সরে যেত। তবে প্রায় বছরখানেক ধরে সেই পানি আর নামছে না।

এমন অবস্থায় ভবন সংলগ্ন উঁচু স্থানে টিনশেডের ছোট একটি ঘর তুলে রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেখানে রয়েছে সাপের উপদ্রব। তার ওপর নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। যে কারণে গ্রীষ্মকালে মাথার সামান্য উপড়ে থাকা টিনের তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন সেবাদানকারী ও সেবাগ্রহীতারা। ফলে ব্যাহত হচ্ছে এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সেবা। কিন্তু বিষয়টি যেন দেখার কেউ নেই।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফতুল্লার পঞ্চবটি মোড় সংলগ্ন এলাকায় এনায়েতনগর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটির অবস্থান। এর সামান্য দূরেই রয়েছে বিসিক হোসিয়ারি শিল্পনগরী। যেখানে কমপক্ষে ৭০০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। কর্মরত আছেন প্রায় সোয়া দুই লাখ শ্রমিক।

পাশাপাশি পঞ্চবটি এলাকায় গড়ে উঠেছে আরও কয়েকশো শিল্পপ্রতিষ্ঠান, যেখানে লাখো শ্রমিকের কর্মসংস্থান। ফলে শ্রমঘন এলাকা হিসেবে সাধারণ মানুষের সেবায় এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশ ভালো না থাকায় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদটি খালি। তবে ভিজিটর অফিসার, ফার্মাসিস্ট, এমএলএসএস ও আয়া কর্মরত আছেন। তারা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা, ওষুধ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী দিয়ে থাকেন। এছাড়া পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের বেশ কয়েকজন মাঠকর্মী রয়েছেন যারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে খাবার বড়ি, কনডম ও ইনজেকটেবলস পাওয়া যায়।

এছাড়া নারীদের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদি অস্থায়ী ক্লিনিক্যাল পদ্ধতি (আইইউডি), দীর্ঘমেয়াদি অস্থায়ী ক্লিনিক্যাল পদ্ধতি (ইমপ্ল্যান্ট) এবং পুরুষ ও নারীদের জন্য স্থায়ী ক্লিনিক্যাল পদ্ধতি চিকিৎসাসেবা বিনামূল্যে দেওয়া হয়। পাশাপাশি অন্তঃসত্ত্বা মায়ের স্বাস্থ্যসেবাসহ শিশুদেরও স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এখানে বিনামূল্যে বয়োসন্ধিকালীন সেবাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবাও দেওয়া হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, সমতলভূমি থেকে নিচু হওয়ায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি হাঁটু পানিতে তলিয়ে গেছে। বছরখানেক আগে মাঝে মধ্যে পানি জমে থাকলেও কিছুদিন পর সেই পানি সরে যেত। কিন্তু এখন আর পানি সরছে না। যে কারণে এনায়েতনগর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কার্যালয় ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এই অবস্থায় কার্যালয়ের সামনের সড়কের পাশে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সেখানে একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সেই টিনশেড ঘরের মেঝেটি পাকা না হওয়ায় সেখানে রয়েছে সাপের উপদ্রব। প্রায়ই গর্ত থেকে সাপ বের হয়। পাশাপাশি জলাবদ্ধতার কারণে পাকা ভবনটি পরিত্যক্ত হওয়ায় টিনশেড ঘরটিতে এখনো বিদ্যুতের কোনো সংযোগ দেওয়া যায়নি। যে কারণে রোগীসহ সেবাদানকারীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ভিজিটর অফিসার (এফডব্লিউভি) সালেহা আক্তার বলেন, এই স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা, মা ও শিশুদের সেবা এবং পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতিসেবা দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে রোগীদের আয়রন ট্যাবলেট ও জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা এখানে নানা সমস্যায় রয়েছি। মূল কার্যালয়টি ব্যবহারের অনুপযোগী। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় পাশে একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করলেও সেখানে প্রায়ই সাপের উপদ্রব দেখা যায়। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় গরমের সময়ে কাজ করতে অনেক কষ্ট হয়। রোগীদের ঠিকমতো সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রদীপ চন্দ্র রায় বলেন, আমরা এই বিষয়টি নিয়ে অনেকবার সব জায়গায় চিঠি দিয়েছি। এখন যারা কাজ করবেন তারা কেন করছেন না সেটা আমাদের জানা নেই।


নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিবার পরিকল্পনার উপ-পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ভবনটি এখনো পানির নিচে রয়েছে। যার কারণে এটা সরিয়ে চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় একটি ঘর নির্মাণ করে নরমাল সেবা দেওয়া হচ্ছে। ক্লিনিক্যাল সেবা দেওয়ার মতো পরিবেশ নেই। এই অবস্থায় কোনোমতে কার্যক্রম চলছে।


তিনি আরও বলেন, আমরা এ বিষয়ে ওপর মহলকে জানিয়েছি। তারা ভিজিট করেছেন। আগামী অর্থবছরে নতুন ভবন যেন করা যায় সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা চলছে। বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কারণে এই এলাকাটি জনবহুল। যার কারণে এই জনসাধারণের নূন্যতম সেবা দেওয়ার জন্য এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র চালু রাখা জরুরি।


এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এটা নিয়ে সবারই চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। কিন্তু পানি সরানোর কোনো জায়গা নেই। আমাদের ইচ্ছা আছে কিন্তু কোনো উপায় নেই। আমার সাধ্যমতো আমি চেষ্টা করেছি। সামনে একটি ঘর করে দিয়েছি। যাতে করে অস্থায়ীভাবে সেবাটা দেওয়া যায়।

Post a Comment

0 Comments