নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ১৪ নং ওয়ার্ডে
গত ১১ এপ্রিল রাতে দেওভোগ জিউস পুকুর পাড় এলাকায় অধিপত্য বিস্তার কে কেন্দ্র করে সাবেক উক্ত ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান ও তার ভাই সোহেল প্রধানের লোকজনদের সাথে বর্তমান কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনিরের লোকজনদের মারামারির ঘটনা হয়।
আর এরই সূত্রধরে প্রতিশোধ নিতে গত ১১ মে রাতে নিহত শুভ্রত মন্ডল (২২) কে তার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে নৃশংস ভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয় এবং একপর্যায়ে শুভ্রতর অবস্থা গুরুতর দেখে তার বাসার সামনে ফেলে দিয়ে যাওয়া হয় যার ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধম্যে ভাইরাল হয়েছে।
অতঃপর সুব্রতর পরিবারের সদস্যরা দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতাল ভিক্টোরিয়া নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার অবস্থা আশংকাজনক দেখতে পেয়ে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন, অবশেষে সুব্রত মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ২৩ মে ভোরবেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
তবে মারা যাবার আগে একটি ভিডিওতে সুব্রত হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে প্রত্যেকের নাম বলে যান।
এছাড়া সুব্রত মারা যাবার পর তার বোন সম্পা রানী মন্ডল নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় ১) সায়েম ভূইয়া ওরফে ইয়াবা সায়েম (৩০), ২) সাজিদ ভূইয়া (৩৬), উভয় পিতাঃ সাদরুল আলম ভূইয়া। ৩) নাঈম উদ্দিন বাবু (৩০), পিতাঃ নাছির উদ্দিন। ৪) দোলন (২৫), পিতাঃ মৃত বাইজিদ। ৫) আলামিন (২৫), পিতাঃমৃত শহীদ মিয়া। ৬) নোমান (২২), পিতাঃ নিজাম। ৭) প্রনয় (২২), পিতাঃ নারায়ণ চন্দ্র। ৮) রাকেশ (২০), পিতাঃ রবি চান। ৯) সুদেব ঘোষ (৩২), পিতাঃ মৃত বাসুদেব ঘোষ।
১০) অনিক রাজিব সাহা (২৯), পিতাঃ সেন্টু সাহা।
১১) মানিক (২৫), পিতাঃ অজ্ঞাত।
সহ ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে অভিযোগ করেন, যা পরবর্তীতে মামলার এজাহার কপিতেও উল্লেখ্য হয়।
তবে ২৬ মে ভোর রাত থেকেই ১৪ নং ওয়ার্ডের ভূইয়ারবাগ, নন্দিপাড়া, দিঘির পাড়, দেওভোগ আখড়া, পালপাড়ার বিভিন্ন যায়গায় সুব্রত হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই বলে দেয়ালে দেয়ালে পোষ্টার লাগানো দেখা যায়,
যেখানে কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনিরের ছবি হুকুমের আসামী ও ১২ জনের নাম সহ ছবি হত্যাকারী আসামীদের তালিকায় রয়েছে।
আর এরপর থেকেই স্থানীয় এলাকাসীদের মধ্যে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে,
কেননা মারা যাবার আগে সুব্রতর স্বীকারোক্তির ভিডিও, এমনকি তার বোন হাসপাতালে কান্নার মুহুত্বের ভিডিও এবং মামলার এজাহার কপিতে যে নাম গুলো ছিলো না, পোষ্টারে নতুন করে অনেকের
নাম ছবি যুক্ত করে প্রকাশ করা হয়েছে।
যারা এই হত্যার সাথে জড়িত না বলে দাবি করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভুক্তভোগী জানান,
সাবেক কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান ও তার ছোট ভাই সোহেল প্রধান নির্বাচনে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এই ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।
অসহায় নিরপরাধ মানুষদের মামলা হামলার ভয় দেখিয়ে নানান ব্লেকমেইল করে যাচ্ছে।
এছাড়া তাদের বড় ভাতিজা সাবেক জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি দর্পন প্রধান মামলা থেকে বাঁচিয়ে দিবে বলে অনেকের কাছে মোটা অংকের টাকাও দাবি করছে, আর না হলে মামলায় ফাসিয়ে দেওয়া হবে বলে একের পর এক হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় এক চা-দোকানদার জানান,
কমিশনারের ভাই হওয়ায় সোহেল প্রধান নানান সময় নিরীহ মানুষের সাথে অত্যাচার করতো,
গত এপ্রিল মাসেও তার লোকজন নিয়ে দিঘিরপাড় এসে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হিন্দুদের বাড়িঘর ভাংচুর করেছে।
আর একজন স্থানীয় ভোক্তভোগীর মা জানান,
আমার ছেলে তোলারাম কলেজে পড়াশুনা করছে,
এবং এই মারামারির দিন সে এলাকায়ও ছিলো না।
এমনকি সুব্রত কে যারা হত্যা করছে তাদের সাথেও তার মনমালিন্য থাকায় সুসম্পর্ক ছিলো না।
তবে এতটুক জানি কিছু দিন আগে সোহেল তার ভাইয়ের পক্ষে নির্বাচনে মিছিল মিটিং না করায় আমার ছেলেকে রাস্তায় একা পেয়ে অযথা থাপ্পর মেরেছিলো ও অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছিলো।
আর সেই প্রতিশোধের রোষানলের কারনেই লোকজন দিয়ে পোষ্টার লাগিয়ে অপ-প্রচার করে আমাদের মান সন্মান ক্ষুন্ন করতে চাচ্ছে।
রাত ভর নির্যাতনে সুব্রত হত্যায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামী মানিকের পরিবারের একজন সদস্য জানান যে,
শফিউদ্দিনের ছোট ভাই সোহেল প্রধানের শ্যালকরাই (শ্বশুর বাড়ির আত্বীয়) সুব্রতকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেছে যা কিনা এলাকার সবাই জানে,
এখন আত্বীয় স্বজনদের বাঁচানোর জন্য নিরীহ মানিক কে ১১ নাম্বার আসামী বানিয়ে ধরাইয়া দিছে।
মানিক তার বাসার সামনে সারাদিন মটর সাইকেল মেরামতরের কাজ করে এবং সে নির্দোষ।
স্থানীয়দের ভাষ্য মতে জানা যায় শফিউদ্দিন প্রধান ও তার ছোট ভাই সোহেল প্রধানই তাদের লোকজন দিয়ে এই পোষ্টার দেয়ালে লাগিয়েছে,
যা মামলার বাদী অথবা নিহত সুব্রত মন্ডলের পরিবার নিজেরাও জানে না।
শুরুতে সুব্রত হত্যার বিচার দাবিতে এলাকার সর্বস্তরের মানুষ ঐক্যবধ্য থাকলেও ক্রমশ তা সমালোচনার দিকে মোড় নিচ্ছে ও সকলের মাঝে আতংক সৃষ্টি হচ্ছে।
তাই এই বিষয়ে অনেকেই প্রকাশ্যে মিডিয়ার সামনে এসে কথা বলতে ভয় পাচ্ছে।
তবে এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন যে-
নৃশংস সুব্রত হত্যার প্রকৃত আসামী যে বা যারাই হউক, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করাই আমাদের একমাত্র দাবি।
সেই সাথে অসহায় নিরপরাধ কোন মানুষরা যেনো ষড়যন্ত্র মূলক মিথ্যা মামলার হয়রানি না হয় সেইদিকে প্রশাসনের সুষ্ঠ তদন্তের দাবি।
0 Comments