পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সিলেটে মহানগরসহ জেলায় মোট ৪১টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নগরে ছয়টি ও জেলার ১৩টি উপজেলায় ৩৫টি পশুর হাট বসবে।
সিলেট জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে বুধবার (২৯ জুন) বিকেল সাড়ে ৩টায় ঈদুল আজহা উদযাপন ও অস্থায়ী পশুর হাট স্থাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
তবে সিলেটে বন্যার পানিতে নগরের সবচেয়ে বড় পশুর হাট কাজিরবাজার তলিয়ে যাওয়ায় এ হাটে পশু বিক্রি করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বন্যায় এখনো তলিয়েছে আছে সেই হাটটি। এ কারণে এখনো হাট বসেনি সেখানে। কবে হাট বসবে, তা বলতে পারছেন না কেউ। এছাড়া বেশিরভাগ স্থায়ী পশুর হাটের অবস্থাও একই।
আগামী ১০ জুলাই পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। এ অবস্থায় কোরবানির ঈদের বাকি আর মাত্র ৯ দিন। এখনো জেলার বেশিরভাগ হাটগুলো পানিতে নিমজ্জিত থাকায় পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা।
কোরবানির জন্য সিলেটে দুই লক্ষাধিক গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো রুস্তুম আলী।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানান, সিলেট জেলায় ৩৫টি ও নগরে ছয়টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর জন্য প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া জেলা ও নগরের স্থায়ী পশুর হাটগুলোতে ঈদের পশুর হাট বসবে। অনুমোদনের বাইরে কোথাও কোরবানির পশুর হাট বসানো হলে জেলা প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, নগরের আটটি স্থানে পশুর হাট বসাতে জেলা প্রশাসক বরাবর প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে ছয়টি হাটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে বন্যার কারণে এবার হাট বসতে কিছুটা দেরি হচ্ছে।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালবাজার এলাকার খামারি আব্দুস সাত্তার জানান, তিনি প্রায় ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে খামার করেছেন। তার বিক্রির উপযুক্ত ৪০টি গরু রয়েছে। এই ঈদে সেগুলো বিক্রি করবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু এখনো হাট না বসায় তিনি লোকসানের শঙ্কায় আছেন।
শেষদিকে হাট বসলেও আশানুরূপ ব্যবসা হবে না জানিয়ে আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘বন্যায় সব মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত। এখন জীবন বাঁচানোই দায় হয়ে উঠেছে অনেকের। কোরবানি দেওয়ার মতো পয়সা বেশিরভাগ মানুষেরই হাতে নেই। এ কারণে এবার পশু বিক্রি কমে যাবে। আবার বিক্রি হলেও আশানুরূপ দাম পাওয়া যাবে না।’
‘বন্যার পানি উঠে যাওয়ায় খামারেও এখন গরু রাখা যাচ্ছে না। গো-খাদ্যের সংকটও রয়েছে। গরুগুলো না পারছি রাখতে, না পারছি বিক্রি করতে’, যোগ করেন এ খামারি।
নগররের কাজিরবাজার পশুর হাট কর্তৃপক্ষ জানায়, '১৬ জুন থেকে ৮-৯ দিন কাজিরবাজার পশুর হাটটি পানিতে তলিয়ে ছিল। কয়েকদিন আগে পানি নেমেছিল। তবে বুধবার রাত থেকে আবার সুরমা নদীতে পানি বাড়ায় হাটেও পানি উঠেছে। সবমিলিয়ে প্রায় ১৫ দিন ধরে এই হাটের সব কাজ বন্ধ।'
কাজিরবাজার পশুর হাটের ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন লোলন বলেন, 'সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার খামারি ও ব্যবসায়ীরা ট্রাকে করে পশু নিয়ে আসেন। এবার বন্যার বেশিরভাগ সড়ক তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে কেউ পশু নিয়েও আসতে পারছেন না।'
তিনি বলেন, 'এবারের বন্যায় স্থানীয়রা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কারও পালিত পশু মারাও গেছে। সড়ক ভেঙে যাওয়ার কারণে অনেকে পশুর গাড়ি নিয়ে নাও আসতে পারে। তাই কোরবানির হাটে পশু ওঠা ও দামের ক্ষেত্রে এবার প্রভাব পড়তে পারে।'
0 Comments