জামালপুরে সুকৌশলে বাজারজাত করা হচ্ছে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ভ্যাটবিহীন বুলেট বিড়ি


 সৈয়দ মুনিরুল হক নোবেল (জামালপুর জেলা প্রতিনিধি)

জামালপুরে সদরের প্রায় প্রতিটি হাট বাজার স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত নকল ব্যান্ডরোল ও ব্যান্ডরোলবিহীন বুলেট বিড়িতে সয়লাব হয়ে গেছে। এছাড়াও অধিক মুনাফার আশায় এরা নকল আজিজ বিড়ি তৈরি করছে। জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের রাঙামাটিয়ার বুলেট বিড়ির মালিক শেখ ফরিদ প্রশাসনের দৃষ্টি এড়িয়ে অবৈধভাবে তার বিড়ির ব্যবসা পরিচালনা করে লুটে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকার সরকারি রাজস্ব। প্রশাসন বলছে বুলেট বিড়ি প্রস্তুত ও বিক্রি স্থগিত রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, জামালপুর সদর উপজেলার বুলেট বিড়ি দীর্ঘদিন ধরেই গোপনে বাজারজাত করা হচ্ছে। জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর বাজার, গোদাশিমলা বাজার, পাবই বাজার, বারুয়ামারী, তুলশিপুর বাজার, শাহবাজপুর ও সরিষাবাড়ি উপজেলার বাউসী বাঙালী বাজারসহ আশপাশের বিভিন্ন দোকানে এ বিড়িতে সয়লাব হয়ে পড়েছে। এর মালিক শেখ ফরিদ আগে অন্যের বাড়িতে শ্রমিকের কাজ করতো। এক পর্যায়ে সে নিজ নামে বিড়ি লাইসেন্স (নং- ০০৩০৫৯২৯৭০৪০৭) নিয়ে বিড়ির ব্যবসা শুরু করে। এতে সরকারের রাজস্ব ফাকি দিয়ে বিড়ি বিক্রির ফলে অল্পদিনেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়। এছাড়াও সে ভ্যাট অফিসে নিজ বাড়িতে তামাক শুকানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও তার বাড়িতে ইট দিয়ে পাকা করা চাতাল (খোলা) তৈরি করা হয়নি।
রংপুর থেকে চোরাই পথে তামাক তার হাতে আসে। এ তামাকের মধ্যে নকল আজিজ ও বুলেট বিড়ির কাগজ ও নকল ব্যান্ডরোল থাকে। প্রতারক শেখ ফরিদ শুধু বুলেট বিড়িই নয়, চোরাই পথে আসা নকল কাগজ ও ব্যান্ডরোল দিয়ে আজিজ বিড়িও তৈরি করে গোপনে বাজারজাত করে আসছে সে।
অন্যদিকে বুলেট বিড়ির মালিক শেখ ফরিদ এসব কাজ বাড়িতে করে না। তার বিড়ি তৈরির কারিগর রাঙামাটিয়া দক্ষিণপাড়ার হামেদ আলী, পশ্চিমবন্দের রহমতের জামাই, ফজলুল হক কালুসহ অন্যরা প্রতিদিন ৩০থেকে ৪০ হাজার কাটি বিড়ি বাজারজাত করে থাকে। তার প্রতি প্যাকেট (২৫টি) বিড়ির মূল্য ৫ টাকা আর সরকার কর্তৃক প্রতিটি বিড়ির ব্যান্ডরোল ট্যাক্স ৮ টাকার উপরে নির্ধারিত করা আছে। সে হিসাবে প্রতিটি বিড়ির প্যাকেট ন্যূনতম ১৫ থেকে ১৭ টাকা বিক্রির কথা থাকলেও বুলেট বিড়ির প্যাকেট বিক্রি করছে মাত্র ৫ টাকা করে। এভাবে প্রতারণার ফলে সে অল্প দিনেই গাড়ি বাড়ির মালিক বনে গেছে। তার দাপটে এখন এলাকায় সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, প্রতিমাসে এসব অসাধু বিড়ি ব্যবসায়ী ও কোম্পানির কারণে জামালপুর থেকে বছরে ৫০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এছাড়াও বুলেট বিড়ি প্রতারণা করে ক্রেতাদের অধিকার ক্ষুন্ন করে বিড়ি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে বাজারে নকল ও ভূয়া ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে ব্যবসা করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার পাশাপাশি জনগণের সাথেও প্রতারণা করে আসছে।
এ বিষয়ে জামালপুর কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তা জোবায়দা খানম বলেন, আমাদের তালিকায় বুলেট বিড়ির কার্যক্রম স্থাগিত রয়েছে। তবে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নকল ব্যান্ডরোল ও ব্যান্ডরোলবিহীন বিড়ি কোম্পানি তাদের ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Post a Comment

0 Comments