মতলবে স্বর্ণালংকারসহ প্রায় এক কোটি টাকা নিয়ে বীমা কর্মী উধাও


মেহেদী হাসান শুভ (চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি)

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিন উপজেলার চরমুকুন্দি গ্রামের কোহিনূর আক্তার (৩৫) নামক এক বীমা কর্মী অর্ধশত গ্রাহক এবং এলাকার শতাধিক মহিলার কাছ থেকে প্রতারণা করে কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। এছাড়া ওই বাড়ীর কয়েকজন মহিলার কাছ থেকে আনুমানিক ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিযে গেছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। কুহিনূর আক্তার ওই গ্রামের ডেঙ্গু বেপারীর মেয়ে এবং তার স্বামীর নাম মোঃ আব্দুল হাই ও মায়ের নাম কদর জান। স্বামী সৌদী প্রবাসী। সে মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ইসলামী বীমা (তাকাফুল) এর মতলব দক্ষিণ উপজলার একজন মাঠ কর্মী হিসেবে দীর্ঘ বছর যাবৎ কাজ করে আসছেন। অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে ওই গ্রামের নারী ও পুরুষদের সাথে প্রতারণা করে স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় কুহিনূর আক্তার।গত ৪ মাস যাবৎ তার সেমিপাকা ঘরে তালা লাগিয়ে দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে উধাও হয়ে আছেন। তবে তার ব্যবহৃত ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। এলাকায় গিয়ে জানা যায়, কোহিনুর আক্তার দীর্ঘদিন যাবত মেঘনা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীর ইসলামী বীমা (তাকাফুল) এ মাঠ কর্মী হিসেবে চাকরী করতেন। চরমুকুন্দী, কলাদী, চরনিলক্ষীসহ আশপাশে গ্রামের ৫০ থেকে ৬৫ জনের কাছ থেকে ১২ বছর মেয়াদী দ্বিগুণ লাভ দেখিয়ে ২০/২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এছাড়াও বিভিন্ন এনজিও থেকে উঠানো টাকাও অধিক মুনাফার বিনিময়ে ২৫/৩০ জনের নিকট থেকে ১৫/২০ লাখ টাকা নেয় কুহিনূর আক্তার । এলাকার ৬/৭ জন ভুক্তভোগী মহিলা বলেন,সে প্রথমে বাড়ীর বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যথাসময়ে পরিশোধ করায় তাদের মাঝে আত্ববিশ্বাস সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে এলাকার অসংখ্য মহিলাকে দিয়ে ব্র্যাক,উদ্দীপন,সিসিডি,ব্যুরো বাংলাদেশসহ কয়েকটি এনজিও থেকে টাকা উত্তোলন করে অধিক মুনাফার বিনিময়ে তা হাতিয়ে নেয়।তবে এ ঋণের বিষয়টি মহিলারা নিজের কাছে গোপন রাখতো।তাই কুহিনূর আক্তারের সাথে লেনদেনের বিষয়ে একে অপরের সাথে শেয়ার করেনি।যার কারনে কুহিনূর আক্তার অসংখ্য মহিলার সাথে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এ বিষয়ে গত ছয় মাস আগে এলাকায় একটি সালিশি বৈঠক হয়।সেখানে সে সকল বিষয়ে শিকার করেন এবং মানুষের পাওনা টাকা পরিশোধ, স্বর্ণালঙ্কার ফেরত দেয়া এবং বীমার দলীল ও মেয়াদোত্তীর্নদের টাকা দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এর দুমাস পর সে তার সন্তানদেরকে নিয়ে হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। এ বিষয়ে আবুল কালামের স্ত্রী জোৎস্না বেগম বলেন, কুহিনূর আক্তারের নিকট ৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পাবে। বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে ৩ ভরী ওজনের স্বর্নালংকার নিয়ে আর ফেরত দেয়নি।ফেরত চাইলে বলে তার মায়ের ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য কোন এক স্বর্নের দোকানে রেখে টাকা নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। এছাড়াও তিনি মিজান পাটোয়ারীর স্ত্রী লাকী আক্তারের কাছ থেকে ১০ ভরী স্বর্নালংকার ও ১ লক্ষ টাকা, রশিদের স্ত্রী শাহানারা বেগমের ২ লক্ষ টাকা, আবু জাহেরের স্ত্রী রোজিনার ১লক্ষ টাকা, বোরহানের স্ত্রী পারুলের নামে TMS থেকে ৩ লক্ষ লুন ও নগদ ১ লক্ষ টাকা,নবকলস গ্রামের শাহনাজ বেগমের কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা ও দেরভরী স্বর্নালংকার, মৃত ফজলুল হকের ছেলে শুক্কুরের ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, মজিব সরকারের স্ত্রী ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, রাসেলের স্ত্রী সেফালীর ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা, সের ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ২লক্ষ টাকা,ইসলামী ব্যাংক ও মেঘনা লাইফ ইন্সুইরেন্স আরো ২ লক্ষ টাকা, রুবেলের স্ত্রী রিমার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা, নাজিম উদ্দীনের স্ত্রী ময়নার ৬০ হাজার টাকা, গিয়াসউদ্দিন স্ত্রী ফাতেমার কাছ থেকে সাতআনা ওজনের একটি চেইন, শাবনুর আক্তারের ৬০ হাজার টাকা, সিডুমিয়ার ৪২ হাজার, তাহমিনার ৬৩ হাজার, তাজুল ইসলামের ৩১ হাজার, সেলিম পাটোয়ারীর স্ত্রী রিনা আক্তারের নামে সমিতি থেকে ৩ লক্ষ টাকাসহ আরো অনেকের কাছ থেকে । ভুক্তভোগী মিজান পাটোয়ারী বলেন,কুহিনূর বাড়ীতে থেকে মহিলাদের সাথে খুব ভাল ও সুসম্পর্ক রেখে সে তার নানা ধরনের কৌশলের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। তবে সে যার কাছ থেকে টাকা নেয় সেটি অন্যকে বলেনি। এ ক্ষেত্রে কোন মহিলাও কারো সাথে জানা জানি করেনি। এ সুযোগটি সে কাজে লাগিয়ে প্রতারণা করেছিল। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিছুর রহমান আনু বলেন, কয়েক মাস আগে এ বিষয়ে তাকে নিয়ে বসা হয়েছিল। তখন সে মানুষের কাছ থেকে নেয়া টাকা পরিশোধ করবে বলে অঙ্গীকার করেছিল।গত কয়েকদিন আগে জেনেছি কুহিনূর আক্তার এলাকায় নেই। মেঘনা লাইফ ইনসুরেন্স কোম্পানির ইসলামী বীমা (তাকাফুল) অফিসের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।তবে কোম্পানির অনয় অফিসারের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, ইসলামি বীমা তাকাফুল এর অফিস মতলবে নেই।কয়পক বছর আগে ছিল।কুহিনুর আক্তার নামে কাউকে তার চিনেন না।

Post a Comment

0 Comments