সদাসদীর জমিদারবাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদীতে তিনটি জমিদারবাড়ি। সবচেয়ে বড় বাড়িটি গোপাল সর্দারের। বাড়িগুলো ঘুরে এসে জানালেন এস এম শাহাদাত


 গোপালদীতে তিনজন জমিদার ছিলেন। তাঁদের একজন গোপাল সর্দার, যাঁর নামানুসারে গোপালদী। অত্র এলাকার বড় জমিদার ছিলেন তিনি। সদাসদী গ্রামে ছিল তাঁর বাড়ি। তাঁর বাবা প্রসন্নকুমার সর্দার। সবশেষ গোপাল সর্দারের ছোট ছেলে খোকন সর্দার স্বাধীনতার পর দেশ ছেড়ে চলে যান। গোপাল সর্দারের বাড়ির বিশাল দোতলা দালানটি এখনো দণ্ডায়মান। 



দোতলা দালানটি কারুকার্যময়। যদিও অনেক স্থানে কারুকার্য নষ্ট হতে চলেছে। আগের রং বা সৌন্দর্যও নেই। তবু এখনো চোখ কাড়ে। দালানের সামনের দিকে সুদৃশ্য বারান্দা। বারান্দার পিলারগুলো এখনো অক্ষত। প্রতিটি পিলার কারুকার্যখচিত। ভেতরের প্রতিটি কক্ষেই নকশা করা দরজা-জানালা।



মূল ভবনের সামনে উঠান। উঠানের তিন পাশে আরো তিনটি ভবন। সর্দারবাড়ির উত্তর দিকে পুকুর ঘাট। বিরাট পুকুর। পুকুরের চারদিকে ঘাট। তবে আগে শুধু দক্ষিণেই দুটি শানবাঁধানো ঘাট ছিল। একটিতে পুরুষ, অন্যটিতে মেয়েরা গোসল করত। ঘাটের সিঁড়িগুলো এখনো রয়েছে। তবে ভাঙাচোরা। আড়াইহাজার উপজেলা থেকে সাত-আট কিলোমিটার পূর্বে প্রায় ৬০ শতাংশ জমির ওপর বাড়িটি। ১৩২৩ বঙ্গাব্দে গড়ে তোলা এই ভবন কালের প্রবাহে আজ নড়বড়ে।



সদাসদীর আরেকটি জমিদারবাড়ি হলো ভুঁঞাদের। তাঁরা দুই ভাই—হরিচন্দ্র ভুঁঞা ও রামকানাই ভুঁঞা। তাঁদের জামাই ঋষিকাজ বাবুও ছিলেন জমিদার। এই বাড়ির সর্বশেষ জমিদার জগবন্ধু বাবু। তবে জমিদারি দেখাশোনা করতেন তাঁর স্ত্রী বিনোদিনী সাহা। তিন বাড়ির ভবনগুলোর সব কিছুই আজ ধ্বংসের দিকে। দেয়ালে দেয়ালে জন্মেছে পরগাছা। জড়িয়ে ধরেছে শেকড়বাকড়। কয়েক জায়গায় দেয়াল ভেঙে পড়েছে, খসে পড়েছে পলেস্তারা।


বাড়িগুলো দেখতে দূরদূরান্ত থেকে পর্যটক আসে। মুগ্ধ হয়ে দেখে। সময় কাটিয়ে যায়। স্থানীয়রা বলে, দ্রুত সংস্কার না করলে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বাড়িগুলো অচিরেই মাটিতে লুটিয়ে পড়বে। 



আড়াইহাজারের নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া খান বলেন, ‘এই ভবনগুলো সংরক্ষণ করার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। জবাব না আসায় পুনরায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করি শিগগিরই আড়াইহাজার উপজেলার সব পুরাকীর্তি সংরক্ষণের কাজে হাত দিতে পারব।’ আড়াইহাজারের বাসিন্দা বেলাল হোসাইন বলেন, ‘সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে সদাসদী জমিদারবাড়িগুলো পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।’

Post a Comment

0 Comments