বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বমুখী জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে প্রতিদিন একঘন্টা করে লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই খাতের ভর্তুকি এবং ডলার সংকট মোকাবেলায় জ্বালানি তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধের পাশাপাশি, সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন- জ্বালানি তেল সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে সপ্তাহে একদিন পাম্প বন্ধ রাখলে কোন সমস্যা বা ক্ষতি হবে না। তবে পাম্পে তেল সরবরাহে রেশনিং বা পরিমাণ কমানো হলে সমস্যার কারণ হতে পারে। তবে অর্থনীতির স্বার্থে সরকারের সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীদের সিদ্ধান্ত
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস এন্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স এসোসিয়েশনের নারায়ণগঞ্জ জেলা আহবায়ক মিজানুর রহমান মিজান প্রধান বলেন, সরকারের যে কোন সিদ্ধান্ত আমরা মানতে বাধ্য। কারণ সরকারের সিদ্ধান্তই হয় আমাদের সিদ্ধান্ত। জ্বালানি তেলের এই সংকটময় সময়ে কিভাবে এটা মোকাবিলা করা যায় এটাই আসল লক্ষ। তেল উত্তোলন কিন্তু শুধু পেট্রোল পাম্প করে না আরও অনেক সংস্থা জ্বালানি তেল উত্তোলন করে – যেমন পাম্প, এজেন্ট, বড় বড় কোম্পানীগুলো এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ডিপু থেকে তেল উত্তোলন করে থাকে। এখানে আমাদের কথা হলো, আমরা সপ্তাহে একদিন পাম্প বন্ধ রাখলাম কিন্ত অন্যান্য যারা আছে তাদের কি পারবে বন্ধ রাখতে । তাদের বন্ধ না হলে ভোক্তা আমাদের বিকল্প হিসেবে তাদের কাছে যাবে। এতে সংকট মুক্ত করা যাবে না। আর পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখলে ভোক্তারা একদিন আগেই প্রয়োজনীয় তেল সংরক্ষণ করে রাখবে।
তিনি বলেন, আসলে পেট্রোল পাম্প বন্ধ রেখে আমাদের সংকট বা সমস্যা সমাধান হবে না। আমাদের মূল কথা জ্বালানি সাশ্রয় করতে হবে। আমাদের উচিৎ জ্বালাতি তেল ব্যবহার সঠিক ওয়েতে কিভাবে কমিয়ে আনা যায় সেই পরিকল্পনা করা দরকার। আমাদের দেশে যানজট অন্যতম একটি সমস্যা। একটা গাড়ি যখন জ্যামে পড়ে তখন অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ হয়। দেশের ২০%-২৫ % ভাগ জ্বালানি তেল নষ্ট হয় যানজটের কারণে। যানজট দূর করা গেলে ২০%-২৫℅ ভাগ জ্বালানি সাশ্রয় করা সম্ভব। এছাড়া সরকারি যে অফিসারদের গাড়ি আছে সেগুলো সরকারি কাজ ছাড়াও ব্যাক্তিগত কাজে ব্যবহার করা হয় এবং এক গাড়িতে এককের অদিক কর্মকর্তা ব্যবহার করে জ্বালানি সংকট মোকাবিলা করা যায়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বিভিন্ন অফিস আদালত কিন্তু দিনের আলোতে শেষ করা যায়। অফিস টাইম কমিয়ে এনে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী করা যায়। বাংলাদেশে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখের বেশী ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা আছে। এগুলো প্রায় ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা রাস্তায় চলাচল করে। এই অটো গুলোর একটা নিদ্রিষ্ট সময়ের (সকাল ৭ টা থেকে রাত ৯ টা) মধ্যে নিয়ে আসলেও কিন্তু বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী করা সম্ভব। জ্বালানি বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে মানুষের মধ্যে একটি সচেতনতা মূলক পরিকল্পনা করতে হবে।
মিজানুর রহমান মিজান প্রধান বলেন, জ্বালানি তেল সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে সপ্তাহে একদিন পাম্প বন্ধ রাখলে কোন সমস্যা বা ক্ষতি হবে না। তবে পাম্পে তেল সরবরাহে রেশনিং বা পরিমাণ কমানো হলে সমস্যার কারণ হতে পারে। আমার কাছে মনে হয় পেট্রোল পাম্প বন্ধ করার থেকে মানুষকে কৌশলী করার পরিকল্পনা করা উচিৎ। সরকারের এই বিষয়টা বিবেচনা করার আহ্বান করছি।
0 Comments