চাঁদপুরে থামছে না অবৈধ বালু উত্তোলন


 মোঃ কামরুল হাসান (চাঁদপুর সদর উপজেলা প্রতিনিধি)

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদী থেকে দিন-রাত অবাধে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। অসংখ্য অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন ও ক্রয়-বিক্রয় চলাচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। এতে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার নির্দেশ দেয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প, প্রস্তাবিত ইকোনমিক জোন ও প্রস্তাবিত হাইটেক পার্কসহ চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার বাড়িঘর ও ফসলি জমি। এরই মধ্যে উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের বাহেরচর, নাছিরাকান্দি, কাউয়ারচর’সহ আশ্রয়ন প্রকল্প নদীতে বিলীন হওয়ার হুমকিতে রয়েছে। মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলও রয়েছ হুমকির মুখে। রোববার (২৪ জুলাই) সকালে ইউএনও আশরাফুল হাসান বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে মেঘনা নদীতে অভিযান চালান। এ সময় মতল উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে মা ড্রেজিং প্রকল্পের মালিককে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, ২জন ড্রেজারের শ্রমিক ও ড্রেজার আটক করা হয়। পরে মুচলেক নিয়ে ড্রেজার শ্রমিক ও ড্রেজার ছেড়ে দেওয়া হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. হেদায়েত উল্ল্যাহ, মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ পরিদর্শক মনিরুজ্জামান। জানা যায়, মুন্সিগঞ্জ জেলার চরআব্দুল্লাহপুর স্থানে সরকারীভাবে ইজারাকৃত বালু মহল এর নামে চাঁদপুরের মতলবের মেঘনা নদীর তীর ঘেঁসে প্রায়ই অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। বালু উত্তোলনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে রাতের আধারে মতলব উত্তরের মেঘনা নদীর তীর ঘেঁসে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে নিচ্ছে বালুখোর চক্র। এতে করে নদীর তীরের গ্রামগুলি বিলিন হওয়ার আশঙ্কায় নিরঘুম রাত কাটাচ্ছে নাদীর পাড়ের গ্রামবাসী। সরেজমিন আরো দেখা যায়, অবৈধভাবে প্রতিদিন ভোর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত প্রায় ২৪ ঘণ্টাই ৩০-৩৫টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর তা শত শত ভলগেড, কার্গো ও ট্রলার দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। যে চক্রটি বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে তাদের এ-সংক্রান্ত কোনো অনুমতি বা অনুমোদনও নেই। প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে লাখ লাখ টাকার বালু। পেশিশক্তির বলে সিন্ডিকেটটি অবৈধভাবে বালু বিক্রি করে আসছে। এ জন্য বৃহত্তর মতলববাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ, তীব্র অসন্তোষ ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এরই আগে মাঝে মধ্যে নামকাওয়াস্তে কিছুু অভিযান হলেও অবৈধ এ কাজ বন্ধ হয়নি। স্থানীয়রা জানান, মেঘনা নদীর নাছিরাকান্দি চর থেকে মুন্সিগঞ্জের আফসার উদ্দিন চেয়ারম্যান, মতলব উত্তরের কাজী মিজানুর রহমান ও কাজী মতিনের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট গ্রুপ প্রতিদিন ৩০-৩৫ টি ড্রেজার বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনকে হাত করে মেঘনা নদী থেকে প্রতিদিন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। কলাকান্দা ইউপির চেয়ারম্যান ছোবহান সরকান সুভা বলেন, বালু খেকো সিন্ডিকেট গ্রুপের সদস্যরা দীর্ঘদিন থেকে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন। প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় এ বালু উত্তোলন হয়ে আসছে। কোনো ব্যক্তি তাদের কথা শুনছেন না। প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। মতলব উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি মো. হেদায়েত উল্ল্যাহ বলেন, উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের নাছিরাকান্দি এলাকায় অবৈধভাবে ড্রেজারের মাধ্যমে মাটি উত্তোলনের প্রস্তুতিকালে ঘটনাস্থলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, আইনের ড্রেজার মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন প্রতিরোধে উপজেলা প্রশাসন, কর্তৃক মোবাইল কোর্ট নিয়মিতভাবে অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক মনিরুজ্জামান বলেন, মুন্সিগঞ্জ জেলার চরআব্দুল্লাহপুর স্থানে সরকারীভাবে ইজারাকৃত বালু মহল এর নামে চাঁদপুরের মতলবের মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সংবাদ পাওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আশরাফুল হাসানের নেতৃত্বে, সহকারী কমিশনার ভুমি ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট হেদায়েত উল্লাহ ও আমিসহ আমাদের নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির সঙ্গিয় ফোর্স অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে সরেজমিনে মা ড্রেজিং প্রকল্প নামে একটি ড্রেজার মুন্সিগঞ্জ জেলার চরআব্দুল্লাহপুর এলাকা থেকে তারা বালু উত্তোলন না করে মতলবের মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সময় ড্রেজারটি আটক করা হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আশরাফুল হাসান ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ওই ড্রেজারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ড্রেজারটি ছেড়ে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য মতলব উত্তরের মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। বালু খোর চক্র দীর্ঘদিন যাবৎ অবাধে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। এতে ভাঙনের হুমকিতে সেচ প্রকল্পের বাঁধ। প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত নৌ-যান জব্দ করা হলেও কোনোভাবেই মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। ওই চক্রটির নেই কোনো বালু উত্তোলনের অনুমতি বা অনুমোদন। চাঁদপুরের মেঘনা নদীর তলদেশ থেকে একটি চক্র দীর্ঘদিন যাবৎ অবাধে অপরিকল্পিত অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর তীরে দেখা দিয়েছে ভাঙন।

Post a Comment

0 Comments