প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে অন্তত ২০ বার। প্রতিটিতেই কোনোরকমে প্রাণে বেঁচে গেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। দৈবক্রমে তিনি বেঁচে গেলেও বারবারই হতাহতের ঘটনা, কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে আছে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের পাতায়। তার ওপর হত্যাচেষ্টার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ক্ষমতায় কিংবা ক্ষমতার বাইরে থাকলেও সবসময়ই তিনি টার্গেট ছিলেন ঘাতকের বুলেট-বোমার।
পিতৃহারা কন্যা হয়ে পিতার স্বপ্নপূরণে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরেছিলেন শেখ হাসিনা। যে বুলেট জাতির পিতাসহ পরিবারের সবাইকে পৃথিবীছাড়া করেছিল, সেই বুলেটই শেখ হাসিনার পিছু নেয় দেশের মাটিতে পা রাখার পর থেকেই।
বঙ্গবন্ধুকন্যার ওপর প্রথম আক্রমণ হয় ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। ওইদিন চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানের খুব কাছে আটদলীয় জোটের মিছিলে শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে পুলিশ ও বিডিআর গুলি ছোড়ে। পরের বছর ১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট শেখ হাসিনা বাড়িতে থাকা অবস্থায় বুলেট-গ্রেনেড ছোড়া হয় ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনে। এ যাত্রাতেও ব্যর্থ হয় হামলাকারীরা।
১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উপনির্বাচনে ভোট দেয়ার পর কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে গাড়ি থেকে নামার পরপরই তার ওপর গুলি চালিয়ে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ১৯৯৪ সালে দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে রাজনৈতিক সফরে গেলে ২৩ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরদী ও নাটোর রেলস্টেশনে তার ওপর আবারও হামলা হয়। গুলি ছোড়া হয় তার সমাবেশে।
১৯৯৫ সালের ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর রাসেল স্কয়ারে এবং ১৯৯৬ একই কায়দায় তার ওপর হামলা চালানো হয় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে। নিজ নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়াতেও ভয়াবহ হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ২০০০ সালে জনসভাস্থল ও হ্যালিপ্যাডে ৭৬ কেজি বোমা পুঁতে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিগোষ্ঠী হরকাতুল জিহাদ-হুজি।
পরের বছরই আবারও সক্রিয় হয় হুজি। ২০০১ সালে ২৯ মে খুলনার রূপসা সেতুর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করতে যাওয়ার কথা ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সেখানেও বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল তাকে হত্যা করতে।
ওই বছরই ২৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচনী প্রচারে সিলেটে গেলে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জনসভার মঞ্চের পাশেই ঘটে বোমা হামলা। ২০০২ সালের ৪ মার্চ নওগাঁয় বিএমসি সরকারি মহিলা কলেজের সামনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা চালান হয়।
এ ছাড়া, সাতক্ষীরার কলারোয়া থেকে যশোর ফেরার পথে বিএনপি অফিসের সামনে বাস রেখে ব্যারিকেড দিয়ে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা হলেও রক্ষা পান তিনি। ২০০৪ সালের ২ এপ্রিল বরিশালের গৌরনদীতে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে গুলিবর্ষণ করে ঘাতকচক্র। চেষ্টা করা হয়েছে প্রশিক্ষিত নারী জঙ্গি দিয়ে মানববোমায় তাকে হত্যার।
তার ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যাচেষ্টা হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। ওই দিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে শান্তি সমাবেশস্থলে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। অল্পের জন্য বেঁচে যান তৎকালীন বিরোধী দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। ওই হামলায় ঝরে যায় ২৪ নেতাকর্মীর প্রাণ।
২০১১ সালে শ্রীলঙ্কার একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করেছিল শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য। ২০১৫ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার পথে কারওরান বাজারে তার গাড়িবহরে বোমা হামলা চালানোর চেষ্টা চালায় জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ জঙ্গিগোষ্ঠী।
২০১৬ সালের জুনে তাকে বহনকারী বিমান হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের রানওয়েতে ধাতব পদার্থের উপস্থিতি থাকায় নামতে গিয়ে আবার ওপরে উঠে যায়। ধারণা করা হয়েছিল ওই বস্তুর আঘাতে ছিন্ন ভিন্ন হবে তার বিমান। এরপর ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর সরকারি সফরে হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে বিমানের নাট ঢিল করে রাখা হয়েছিল তাকে হত্যার পরিকল্পনায়।
সবশেষ ২০১৭ সালেও শোকের মাসে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা। বারবার হামলার পরও বুলেট-বোমা আর কুটচালের শত বাধা ডিঙিয়ে যিনি বাংলাদেশকে টেনে তুলছেন খাদের কিনার থেকে সমৃদ্ধির পথে।
0 Comments