মেহেদী হাসান শুভ চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধিঃ-
চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে প্রবাসী স্বামীর কাছ থেকে টাকা আদায় করতে দেড় বছরের শিশুসন্তানকে পাশবিক নির্যাতন করেছেন এক মা। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। পরে নির্যাতিত ওই শিশুকে উদ্ধার করেছে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ।
শিশুটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আজ বুধবার দুপুরে মাসহ ওই শিশুকে আদালতের হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহরাস্তি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মান্নান।
শাহরাস্তি উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামের নূরুল আমিনের কন্যা পারভীন আক্তারের (২৩) কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার আশিয়াদারি গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে প্রবাসী মহিনউদ্দিনের সঙ্গে তিন বছর আগে বিয়ে হয়। তাঁদের সংসারে ফাহাদ (২) নামের একটি শিশুসন্তান রয়েছে। বিয়ের এক বছর পর থেকে তাঁদের দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। এ নিয়ে স্ত্রী পারভীন আক্তার বাবার বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। চাঁদপুর লিগ্যাল এইড কার্যালয়ের সিদ্ধান্তমতে ভরণপোষণ বাবদ প্রতি মাসে স্বামীর কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
প্রবাসী স্বামী মহিনউদ্দিন ঠিকমতো ওই টাকা না দিতে পারায় সম্প্রতি পারভীন তাঁদের দুই বছরের শিশুসন্তানকে নির্যাতন করে তার ভিডিও ধারণ করে স্বামীকে পাঠান। শিশুটির বাবা ওই ভিডিও দেখে সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মনোহরগঞ্জ এলাকার বিভিন্নজনকে অনুরোধ করেন। এরই মধ্যে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দৃষ্টিতে আসে।
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টায় শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হুমায়ন রশিদ, ওসি মো. আবদুল মান্নান ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবু ইসহাক, উপজেলার চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জোবায়েদ কবির বাহাদুরকে নিয়ে শিশুটির নানার বাড়ি হাড়িয়া গ্রামের দুলাল মেম্বারের বাড়িতে যান। সেখান থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে তাঁরা শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেন।
শিশুটির মা পারভীন আক্তার জানান, বিয়ের পর থেকে তাঁর স্বামী বহু নারীতে আসক্ত হন। এসবের প্রতিবাদ করায় তিনি তাঁদের ভরণপোষণ বন্ধ করে দেন। স্বামীকে শিক্ষা দিতেই তিনি শিশুসন্তানকে নির্যাতন করে তাঁকে ভিডিও পাঠিয়েছেন।
শিশুটির দাদা আবদুল করিম বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেও পুত্রবধূর উগ্র চলাফেরা বন্ধ করা যায়নি। পুলিশ উদ্ধার না করলে আমার নাতিকে হয়তো মেরেই ফেলত।’
এ বিষয়ে ওসি মো. আবদুল মান্নান বলেন, শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। নিকটাত্মীয় বা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। নির্যাতনকারী মাকে ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইউএনও মো. হুমায়ন রশিদ বলেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি দেখার পর রাতেই শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা পেলে বাকি কাজ করা হবে।
0 Comments