বিএনপিকে কড়া হুমকি শামীম ওসমানের দ্বাদশ নির্বাচন কেন্দ্রীক নাকি সত্যি বিএনপিকে হুংকার!



নিজস্ব সংবাদদাতাঃ-

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক সভা সমাবেশে শুধু বিএনপি নেতাদের প্রতি হুংকার ছুড়ছেন। দিচ্ছেন একের পর এক হুমকি। বিএনপিকে কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না বলে তিনি ঘোষণা দিচ্ছেন। সেই সাথে বিএনপিকে সতর্ক করে দেয়ার জন্য বিশাল সমাবেশের ঘোষণাও দিয়েছেন। কিন্তু কিছুদিন আগেও তার এই সরবতা দেখা যায়নি। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে তার সরবতা নিয়ে জনমনে কিছু প্রশ্নেরও সৃষ্টি হয়েছে। তার এই সরবতা কি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নাকি সত্যিকার অর্থেই বিএনপিকে তিনি ভয় দেখাতে চান তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে।


শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ডিআইটি মাঠে শোক দিবস উপলক্ষে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভার সভার আয়োজন করা হয়। আর এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামীম ওসমান বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘কিছু ক্ষয় হবে। কিছু শামীম ওসমানের লাশ দাফন হবে। কিছু বড় ধরণের ঘটনা ঘটবে। তারপরেও ২০২৪ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হবে। এতটুকু খবর রেখে রাজনীতি করি। বাড়াবাড়ি কইরেন না মা বইলা গো কওয়ার সুযোগ পাবেন না।’


তিনি আরও বলেন, লেভেল ক্রস করবেন না। সবাই বুঝেন আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা শুনি। এজন্য নারায়ণগঞ্জকে ঠান্ডা রাখি। এবার কিন্তু উনার কথা শুনবো না। যে ভাষায় তুমি খেলবা আমরা সে ভাষায় খেলবো এবং জিতবো আমরা। যত ইচ্ছা খেলেন আপনারা। শয়তান কখনও আল্লাহর সাথে জিতে না। সে শুধু শয়তানি করতে পারে। শেখ হাসিনার উপরে আল্লাহর রহমত আছে। লন্ডনে বসে পরামর্শ দেন। যে নেতা মায়ের জন্য আসেন না। আরে মা মরে মরে মায়ের জন্য আসেন না আপনি। আপনি দেশের জন্য কেমনে কি করবেন?

শামীম বলেন, রাজপথ শেখ হাসিনার দখলেই থাকবে। আমাদের শরীরের রক্ত টগবগ করে। যারা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে তাদের দায়িত্ব শেষ। শেখ হাসিনা শুধু আওয়ামী লীগের সম্পদ না, তিনি আগামী দিনের বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ। তাকে আঘাত করলে এ দেশ এমন জায়গায় যাবে যেখান থেকে আমরা আদৌ উঠে আসতে পারব কীনা জানি না। এই সংকটে তারা আঘাত করবে। ক্ষমতায় আসা তাদের মূল টার্গেট না। বাংলাদেশকে তারা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। ওই যে চতুর্দিক কথাটা, এর মানে ঘরে বাইরে সব জায়গায় আছে।


নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ বসে থাকবে না উল্লেখ করে শামীম বলেন, ঢাকায় তারা চ্যালেঞ্জ করছে রাজপথ দখলে নিবে। এ নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের জন্ম। আমার নেত্রীকে গালি দিবা আমরা কী চুপ করে বসে থাকতে পারি। আমাদের শক্তির উৎস হল জনগণ। আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ আছে। আমাদের মনে কষ্ট আছে। আমাদেরও তো প্রতিবাদের রাইট আছে। আমার মাকে কেউ গালি দিলে আমরা প্রতিবাদ করব না? প্রতিবাদের ভাষা সংযত রাখতে হবে। তারা বলে শামীম ওসমানের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে। আমার গায়ে লাগে না। তারা আমার গুনাহ কিনছে। কিন্তু আপনার মাকে নিয়ে বললে আপনি ছাড়বেন?

বিএনপি নেতাদের মেরে আওয়ামী লীগের ওপর দায় চাপানো হবে বলে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, শহরে অনেক কালো টাকা ঢুকেছে। বিএনপির মাঝারি সারির নেতাদের মেরে ফেলা হতে পারে। তাদের মেরে আমাদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা হতে পারে। কয়েকদিন আগে অধ্যাপক মামুনের (জেলা বিএনপির সদস্য সচিব) উপর হামলা করা হয়েছে। একটুর জন্য বেঁচে গেছে। এই এলাকার একজন লোক যার হাতে আমাদের বহু লোক মারা গেছে। তার ছেলের নাম এসেছে।


সম্প্রতি হজ থেকে ফিরেই এবার কিছুটা আটঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছেন শামীম ওসমান। বিগত বছরের তুলনায় এবারের ১৫ আগস্ট শোক দিবসে বেশ তৎপর দেখা গেছে। যদিও আগামী বছরই ভোটের বছর। সে কারণেই এ বছরটাকে গুরুত্ব দিয়েছেন মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।


তারা বলছেন, গত কয়েক বছরেও শোক দিবস কিংবা রাষ্ট্রীয় দিবসে খুব একটা দেখা মিলেনি শামীম ওসমানকে। তবে আসছে বিজয় দিবস থেকে শুরু করে সবগুলো দিবসেই সরব থাকবেন এ এমপি এমনটাই মনে করা হচ্ছে।

তারা বলছেন, গত কয়েক বছরেও শোক দিবস কিংবা রাষ্ট্রীয় দিবসে খুব একটা দেখা মিলেনি শামীম ওসমানকে। তবে আসছে বিজয় দিবস থেকে শুরু করে সবগুলো দিবসেই সরব থাকবেন এ এমপি এমনটাই মনে করা হচ্ছে।


এর আগে গত কয়েক বছর ধরেই নানা ইস্যুতে সমাবেশ ও মাঠে থাকার ঘোষণা ছিল শামীম ওসমানের। কিন্তু গতবছর করোনার কারণে ‘ঘণ্টা বাজানোর’ সমাবেশ আর হয়ে উঠেনি। ওই সময়ে হেফাজতে ইসলামের নেতারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে বেশ বিরোধীতায় ছিলেন। সর্বত্র যখন বিষয়টি আলোচিত তখন শামীম ওসমান ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি সমাবেশের ঘোষণা ছিল। কিন্তু শেষতক আর হয়ে উঠেনি।


এবার আবারও সভা করার ঘোষণা দিয়েছেন শামীম ওসমান। আগামী ২৭ আগস্ট শহরের ২নং রেলগেইট এলাকার আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বিশাল সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন। সে লক্ষ্যে তিনি প্রত্যেক এলাকায় এলাকায় গিয়ে নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য বলছেন।


তবে তার এসকল হুমকি ধমকিকে পাত্তা দিচ্ছেন না বিএনপি নেতারা। ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে ঘোষণা এসে রাজপথে থাকার জন্য। সে লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে থাকার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। তারা শামীম ওসমানের এই বক্তব্যকে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন।


জেলা বিএনপির নেতাদের কেউ কেউ সমাবেশে জবাব দেয়ার কথা বলছেন, কেউ পুলিশ ছাড়া মাঠে নামার কথা বলেছেন আবার কেউ কেউ শামীম ওসমানের এই বক্তব্যকে পেশীশক্তির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন। আর এগুলোই মোকাবেলা করেই বিএনপি রাজপথে ছিল এবং ভবিষ্যতে থাকবে বলেও জানান দিচ্ছেন।

Post a Comment

0 Comments