নারায়ণগঞ্জের আলোচিত-সমালোচিত বিএনপি নেতা জাকির খানকে বিদেশী পিস্তলসহ গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১। শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) ভোরে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য নিশ্চিত করেছে র্যাব-১১'র অধিনায়ক তানভীর মাহমুদ পাশা।
তানভীর মাহমুদ পাশা জানান, "জাকিরের নামে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে পলাতক ছিলেন। সম্প্রতি দেশে ফিরে আত্মগোপন করেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।"
তিনি আরো বলেন, "নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকায় বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী ও মাদকের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন জাকির খান। একই এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে শহরের সোনার বাংলা মার্কেটের পিছনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার মাধ্যমে তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ ২০০৩ সালে তৎকালীন বিএকেএমইএর সহসভাপতি সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলার প্রধান আসামি হওয়ার পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে থাইল্যান্ডে চলে যান। পলাতক থাকা অবস্থায় বিভিন্ন মামলায় আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা প্রদান করেন। গ্রেপ্তার এড়াতে জাকির খান দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন।
তিনি আরো জানান, "প্রাথমিক অনুসন্ধান ও তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, জাকির খানের বিরুদ্ধে ১৯৯৪ সালে সন্ত্রাসমূলক অপরাধ দমন বিশেষ আইনে মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলায় তার ১৭ বছরের সাজা হয়। পরে উচ্চ আদালতে সাজা কমিয়ে ৮ বছর করা হলেও তিনি দেশে-বিদেশে প্রায় ২১ বছর ধরে পলাতক ছিলেন। মূলত ২০০৩ সালে সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলায় আসামি হওয়ার পর থেকেই জাকির খান আত্মগোপন করেন। জিজ্ঞাসাবাদে জাকির খান স্বীকার করেছেন থাইল্যান্ডে পালিয়ে ছিলেন। সম্প্রতি ভারত হয়ে তিনি দেশে আসেন। পরিচয় গোপন করে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় স্বপরিবারে বসবাস করছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর জাকির খানের উত্থান ঘটে। বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে অল্প দিনেই হয়ে উঠে জেলা শহরের ডন। পরে বিএনপি নেতা কামালউদ্দিন মৃধার নেতৃত্বে ১৯৯৪ সালে জাকির খান বিএনপিতে যোগদেয়। নারায়ণগঞ্জ শহরে কায়েম করে ত্রাসের রাজত্ব। ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে শহরের খাজা সুপার মার্কেটে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড হলে কারাগারে যান জাকির খান। কিন্তু রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় তিনি মুক্ত হন। এরপর থেকেই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরীর নাতি হিসেবে শহরে পরিচিত হয়ে ওঠেন জাকির খান।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সাত মাসের মধ্যে কাশীপুর বাংলাবাজার এলাকায় এক ঠিকাদারের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগে করা মামলায় তার ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড হলে একটানা ৪ বছর কারাগারেই ছিলেন জাকির। ১৯৯৯ সালে অল্প সময়ের জন্য কারামুক্ত হয়ে জাকির খান জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পদ পেয়ে যান।
২০০০ সালে শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ থেকে টানবাজার ও নিমতলী যৌনপল্লি উচ্ছেদ করলে জাকির সাম্রাজ্যের আর্থিক মেরুদন্ড ভেঙে যায়। ২০০১ সালে সাবেক তত্তাবধায়ক সরকারের আমলে বিশাল গাড়িবহর নিয়ে অস্ত্রের মহড়া করে আবার কারাবন্দি হন জাকির।
২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরও প্রায় ৫ মাস কারাবন্দি ছিলেন। ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রয়ারি নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকারের ছোট ভাই সাব্বির আলম খন্দকার খুন হন। ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন জাকির খান। এ মামলার পর থেকে বিদেশে পলাতক ছিলেন জাকির খান।
জাকির খান ইন্টারপোলের রেড নোটিশপ্রাপ্ত বলে কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তবে ইন্টারপোলের সাইটে রেড নোটিশের তালিকায় যে ৬২ জন বাংলাদেশি আছেন, তাদের মধ্যে নেই জাকির।
0 Comments