বৃষ্টির পর ১২ ঘণ্টার বেশি পেরিয়ে গেছে। এরপরও ঘর থেকে পানি নামেনি। রাস্তার পানি ঘরে ঢোকা বন্ধ করতে দরজায় দেওয়া হয়েছে অস্থায়ী ইটের বাঁধ। জলাবদ্ধতা দূর করতে অনেকেই মোটর ব্যবহার করেছেন। কিন্তু বেশ কিছু বাড়ির চার পাশেই জমে আছে পানি। রাস্তায় হাঁটু পানি। বসবাসের পাশাপাশি চলাচলেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। সিত্রাং-এর প্রভাবে সোমবার সারাদিনের ভারী বর্ষণের পর ফতুল্লার অধিকাংশ এলাকায় এ অবস্থা তৈরি হয়।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ফতুল্লার বেশ কয়েকটি এলাকায় ভুক্তভোগী মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র উঠে আসে। পানিনিষ্কাশনের সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা না হওয়ায় বৃষ্টি হলেই ফতুল্লার অধিকাংশ সড়ক পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে, শিক্ষাঙ্গনসহ মসজিদ প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। রাস্তাঘাটের পাশাপাশি বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। যাদের ঘরে পানি প্রবেশ করেছে, তারা ফার্নিচার ইট দিয়ে উঁচু করে রেখেছেন। কেউবা দিয়েছেন ঘরের দরজায় ইটের বাঁধ। একযুগেরও বেশি সময় যাবৎ প্রতি বছর এই ভোগান্তিতে চললেও, দেখার যেন কেউ নাই। জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএনডি প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হলেও ফতুল্লাবাসীর দুর্ভোগের সুরাহা হয়নি।
ফতুল্লার শিয়াচর, লামাপাড়া, রামারবাগ,আলীগঞ্জ, নয়ামাটি, চিতাশাল, নুরবাগ, দক্ষিণ দেলপাড়া, দাপাইদ্রাকপুর, লালপুর, পৌষার পুকুর পাড়, কোতালেরবাগ, সস্তাপুর সহ আশপাশের একাধিক এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। এসব এলাকার সড়ক খানাখন্দে ভরা ও জলাবদ্ধতায় বেহাল। ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় ইট দিয়ে ঘরের আসবাপত্র উঁচু করা হয়েছে। ড্রেন থাকা স্বত্তে¡ও পানি নামছে না। আবার অনেক এলাকায় ড্রেন নেই। আবার কিছু এলাকার পানি নিষ্কাশনের খাল থাকলেও তা ভরাট হয়ে গেছে। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে নগরীর বাসা-বাড়ি, দোকান-পাট বৃষ্টির পানিতে তলিয়েছে। বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ বিকালে ফতুল্লার গার্মেন্টস ছুটি হলে হাজার হাজার গার্মেন্টস কর্মী রাস্তার পানি পেরিয়ে বাড়ি ফিরছেন। তাদের মধ্যেই একজন এডভান্স গার্মেন্টেসের কর্মী আয়েশ। এক হাতে বাজার, অন্য হাতে পড়নের জামা উঁিচয়ে ধরেছেন। পথিমধ্যে তার সাথে কথা হলে ভোগান্তির কথা জানিয়ে বলেন, সমস্যার কথা বইলা আর কি হইবো? দেখতেই তো পারতাছেন পানিতে বন্যা হইয়া গেছে। এই কষ্ট কি মালিকে বুঝব? গার্মেন্টস না গেলে বেতন কাটব। জিনিস পত্রের যেই দাম, এমনেই সংসার চালাইতে কষ্ট হয়। বেতন কম পাইলে কষ্ট হইবো।
আনিস হোসেন একজন দিনমজুর। দৈনিক ভিত্তিতে ইটভাঙার কাজ করেন তিনি। দাপা ইদ্রাকপুরের তার ভাড়া বাড়ির ঘরে পানি ডুকেছে। তিনি তার ঘরের দরজায় ইটের বাঁধ দিয়েছিলেন। পানির চাপে আবারো ঘরে পানি ঢোকায় ইট বাড়িয়ে বাঁধ উঁচু করছেন। তিনি বলেন, ভাড়া বাসায় থাকি। ইনকাম কম, ভালো বাসা নিতে পারিনা। এতো বৃষ্টি হইবো বুঝি নাই। কালকে বিকালে ঘরে পানি ঢুকে পড়ছে। পরে সারারাত পানি সেঁচছি। সকালে ইট দিয়া বান দিছি। কোনোভাবে খাটের উপরে বাচ্চাদের নিয়ে আছি। রাস্তাঘাট ডুবে গেছে, বাড়ির রাস্তায় হাঁটু পানি। এই সিজনে কাম কাজ ও তেমন আমাদের থাঁকে না। কি যে একটা অবস্থার মধ্যে আছি সেইটা আমরাই জানি।
রামারবাগ এলাকার বাসিন্ধা মোশারফ বলেন, ‘বৃষ্টির পর প্রায় একদিন পার হয়ে যাচ্ছে। ঘর থেকে পানি এখনো নামেনি। একটু বৃষ্টি হলেই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বছরের পর বছর এই সংকটে রয়েছি আমরা।’
রিকশাচালক শরিফুদ্দিন বলেন, আবহাওয়া খারাপের জন্য দুইদিন বের হই নাই। শরীরটাও খারাপ। জমার টাকা দিতে পারি নাই। মালিক রাগারাগি করেছেন। আজ তাই বের হয়েছি।
আজ সকাল থেকেই ঘূর্ণিঝড়জনিত বৃষ্টি কমেছে। তবে, জলাবদ্ধতায় বিপাকে আছেন এসব মানুষ।
সূত্রঃ নারায়গঞ্জ টাইমস
0 Comments