রাজধানী পল্লবীতে ‘ভইরা দে’ নামে একটি কিশোর গ্যাং পরিচালনা করেন হাসিবুল হাসান অনিক (২৬) নামে এক তরুণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মেসেঞ্জারে এ নামেই রয়েছে তার একটি গ্রুপ, যার মাধ্যমে নিজের অপরাধ পরিচালনা করেন তিনি।
অনিকের কিশোর গ্যাংয়ে আছে ৩০-৪০ জন সদস্য। এর মাধ্যমেই নিজেকে ত্রাস হিসেবে তুলে ধরেছেন তিনি।
তাদের আস্তানা মিরপুর ১১ নম্বরের আদর্শ নগর আড়াই কাঠা ডুইপ প্লট। সেখান থেকেই আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায় তারা।
সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে (গ্রুপসহ) এক স্কুল শিক্ষার্থীসহ তিনজনকে কুপিয়ে আহত করার অভিযোগ ওঠে। রয়েছে মাদক ব্যবসা, হামলা, অস্ত্রের মহড়া পরিচালনার অভিযোগও।
অনিক ও তার গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে আছে মামলাও। কিন্তু পুলিশ তাকে বা তার গ্রুপের সদস্যদের গ্রেফতার করছে না। এ নিয়ে ভুক্তভোগীদের আছে বিস্তর অভিযোগ। কিন্তু পল্লবী থানা পুলিশ বলছে, অনিককে গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা চলছে।
মিরপুর ১১ নম্বর বাউনিয়া বাঁধের বি-ব্লকের ৭ নম্বর লাইনের বাসিন্দা অনিকের এ কিশোর গ্যাং অনেক দিনের পুরনো। কোপানোর ঘটনার মামলা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে গত এক মাসে আরও দুটি মামলা ও একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
জানা গেছে, অনিক ও তার নিকটাত্মীয় ফতেহ, মামুন ও খোকন পল্লবীর শীর্ষ মাদক কারবারি। তাদের বিরুদ্ধেও সংশ্লিষ্ট থানায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। খুব অল্প বয়সেই মাদক বিক্রি করে অগাধ টাকার মালিক হয়েছেন অনিক।
গত ১১ সেপ্টেম্বর স্কুল শিক্ষার্থী আশিকের ওপর হামলা চালায় অনিক ও তার গ্যাংয়ের সদস্যরা। মাদক বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় আশিকের ওপর হামলা চালায় তারা। এমনভাবে তাকে কোপানো হয়, তার পেটের নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে যায়।
পরে ভুক্তভোগী আশিকের মা নাছিমা আক্তার বাদী হয়ে পল্লবী থানায় একটি মামলা করেন। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে অনিকবাহিনী। গত ১৬ সেপ্টেম্বর মিরপুর ১১ নাভানার গলিতে আশিকের বাসায় হামলা করে অনিক ও তার বাহিনীর সদস্যরা। হামলার সিসিটিভি ফুটেজ বাংলানিউজের হাতে রয়েছে।
এরপর গত ২৭ সেপ্টেম্বর আশিকের মামা জুয়েলকে কুপিয়ে আহত করে অনিক অ্যান্ড গং। এর দুদিন পর গত ২৯ সেপ্টেম্বর জুয়েলের বন্ধু পারভেজকেও কোপায় তারা। আশিকসহ আহত তিনজন বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হামলার ঘটনায় জুয়েল ও পারভেজ পৃথক দুটি মামলা করেন। আসামি করা হয় অনিক, মামুন, খোকন, সাকিব, অপি, শাকিল ও হোসনে আরাসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ১০-১২ জনকে।
গ্যাংয়ের এক কিশোর সদস্যের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। নাম না প্রকাশের শর্তে সে জানায়, ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে অনিক ও তার সদস্যরা মিলে ফেসবুক মেসেঞ্জারে ‘ভইরা দে’ নামে একটি গ্রুপ খোলে। যারা তাদের প্রতিপক্ষ, তাদের শায়েস্তা করতেই এ গ্রুপ। এর মাধ্যমেই অনিকের সমস্ত অপরাধ পরিচালিত হয়। যারা তাদের বিরুদ্ধাচরণ করে, তাদের শরীরে রড, চাকু ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। যে কারণেই গ্রুপের নামকরণ করা হয় ভইরা দে। অনিক নিজেই এ মেসেঞ্জার গ্রুপের অ্যাডমিন।
এসব ব্যাপারে কথা বলে ভুক্তভোগী আশিকের স্বজনরা বলেন, অনিকের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা লালমাটিয়া থেকে নাভানার গলিতে প্রতিনিয়ত মহড়া দিচ্ছে। ভুক্তভোগীদের কোনো স্বজনকে সামনে পেলেই হামলা করছে তারা।
আহত আশিকের বাবা জীবন বলেন, সন্ত্রাসী অনিকের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা হয়েছে অথচ সে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ তার কাছে এসে টাকা নিয়ে চলে যায়। আসামিকে গ্রেফতার করে না।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পল্লবী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খালিদ বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগগুলো আসলে ভুল। অনিকসহ মামলার অন্য আসামিদের ধরতে কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছে। এজন্য মামলার বাদীর সহযোগিতাও আমরা চেয়েছি।
পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ ইসলাম বলেন, অনিকের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হয়েছে। তাকে গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। আমাদের অভিযান চলমান আছে। দ্রুতই তাকে গ্রেফতার করা হবে।
0 Comments