নিজস্ব সংবাদদাতা //
নারায়ণগঞ্জের নবীগঞ্জ-হাজীগঞ্জ রুটে ফেরি চলাচলের নামে চলছে প্রহসণ। কেবলমাত্র ১টি ফেরি দিয়ে সার্ভিস চালু রাখায় ভোগান্তিতে দুইপাড়ের হাজার হাজার মানুষ। প্রতিদিন যানবাহনের অত্যাধিক চাপে ফেরিঘাটের দুইপাড়ে তৈরী হয় লম্বা যানজট। নদী পারাপারে যানবাহন ও সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।
নবীগঞ্জ-হাজীগঞ্জ রুটে ফেরি সার্ভিসের প্রথমদিকে চারটি ফেরি থাকলেও বর্তমানে ঘাটে দুটো ফেরি রয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগ, দিনের অধিকাংশ সময় একটি ফেরি চলে। অন্যটি বন্ধ থাকে। যারফলে দীর্ঘসময় যানবাহন এসে ঘাটে দাড়িয়ে থাকে। ঘাটে ফেরি থাকলেও নানা অযুহাতে বন্ধ থাকে ফেরি।
জরুরি প্রয়োজনে অনুরোধ করলে অধিক ভাড়া দিয়ে ফেরি চালুর অভিযোগ রয়েছে। এক ফেরিতে যাতায়াতে যাত্রীদের ঘন্টাখানেক সময়ের অপচয় হয়। যানবাহন নিয়ে একপাড় থেকে অন্যপাড়ে যাওয়া আসায় ঘন্টাখানেক সময় অতিবাহিত হয়। কিন্তু দুটো ফেরি একত্রে সার্ভিস দিলে এই সময় অর্ধেকে নেমে আসে। ভোগান্তি কমে সাচ্ছন্দ্যে যাত্রীরা যাতায়াত করতে পারে।
জানা যায়, সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ফেরি চলে। তবে গাড়ি না থাকলে আরো ঘন্টা দুয়েক পূর্বেই ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। একবারে ফেরিতে (এক ট্রিপ) ১০-১২টি ছোট বড় গাড়ি যাতায়াত করে এক সাথে।
ফেরি ঘন্টায় ২-৩ বার চলাচল করে। এই ঘাটে অতিরিক্ত যাত্রী ও পরিবহনের চাপ থাকার কারণে ফেরি সার্ভিস চালু হয়। কিন্তু ফেরি থাকলেও পর্যাপ্ত সুফল পাচ্ছে না সাধারন মানুষ।
বুধবার ( ১২ অক্টোবর) সরজমিনে দেখা যায়, মানুষের চাহিদা থাকলেও ফেরিঘাটে চলছে একটি ফেরি। ফেরির অপেক্ষায় সড়কে লম্বা যানজট। একপাড় থেকে ফেরি গিয়ে পুনরায় ঘাটে ফিরতে আধঘন্টা সময় অতিবাহিত হয়।
মালামাল থাকলে অনেক যাত্রী নৌকার চেয়ে ফেরিতে যাতায়াতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তাই ভোগান্তি হলেও ফেরির অপেক্ষায় ঘাটে মানুষের ভীড়। কেউ কেউ আবার সময় বাঁচাতে অর্থ ব্যয় করে নৌকা দিয়ে যাতায়াত করছেন।
আশির্ধ্বো হাফিজ উদ্দিন, বন্দরের লাঙ্গলবন্দ এলাকার বাসিন্ধা। পেশায় মসজিদের মুয়াজ্জিন। সস্তাপুর মেয়ের বাড়ি থেকে বন্দরে যেতে হাজীগঞ্জ ফেরি ঘাটে উপস্থিত হন। ঘাটে ফেরি না দেখে পাশের একজন গাড়ির চালককে প্রশ্ন করেন, ফেরি কখন আইবো?
ফেরি এসে আবার চালু করতে ঘন্টাখানেক সময় লাগবে বলে জানান সেই ব্যক্তি। এ কথা শুনে হাতে রাখা দুটো পুটলি ব্যাগ মাটিতে রাখেন। পকেটে হাত দিয়ে দেখেন কত টাকা আছে পকেটে। সাথের একজন অপরিচিত ব্যক্তিকে বলেন, তার ব্যাগগুলোসহ তাকে নৌঘাটের নৌকায় উঠায় দেওয়ার জন্য।
ফেরিঘাটে এই বৃদ্ধার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, নৌকায় উঠতে নামতে কষ্ট হয়, ফেরিতে যাইতে পারলে ভালো হইতো। কেউ একজন ধরলে নৌকায় উঠতে পারুম। কিন্তু সবার সাথে জলদি জলদি নামতে সমস্যা হইয়া যায়। ফেরির জন্য বইসা থাকলে আযান দিতে দেরি হইয়া যাইবে। এই বলেই তিনি নৌকা ঘাটের উদ্দ্যেশ্যে এগিয়ে যায়।
বন্দরের বাসিন্ধা ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান তাদের যাতায়াতের দুর্ভোগের কথা জানিয়ে বলেন, এটা আমাদের জন্য আসলেই কষ্টদায়ক। আমাদের যাতায়াতের সুবিধার ব্যবস্থা করলেও সুফল আমাদের হাতের নাগালে নাই। ফেরি ১ টা চলে।
গাড়ি দিয়ে ফেরি ভরলেই গাড়ি চলবে। আর নয়ত চলবে না। বেশি প্রয়োজনেও ফেরির সুবিধা আমরা পাই না। ব্যবসায়ের মালামাল নিয়ে নৌকা রিজার্ভ করে পারাপার হইতে হয়।
ফেরি সার্ভিসের বর্তমান পরিস্থিতির প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফেরির একজন কর্মচারী বলেন, দুটো ফেরি চালাইলে গাড়ি কম ভরে ফেরি ছাড়তে হয়, ফেরি চালাইয়া লাভ হয়না, লস (ক্ষতি) হয়।
এল্লিগা একটা বেশি চলে। অন্যটা বন্ধ থাকে। আজকা একটা চলতাছে অন্য কারণে, একটা ফেরি নষ্ট। ফেরি ঠিক হইলে ওইটাও চলব।
এদিকে এই ফেরিঘাটের ইজারাদার সাইফুল্লাহ ইসলাম রিয়েলের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তিনি ফোনটি ধরেন নি।
0 Comments