জাকির খানের জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত





নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ব্যবসায়ী হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি জাকির খানের জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। রোববার (২০ নভেম্বর) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক উম্মে সরাবান তহুরার আদালত জামিন নামঞ্জুর করে আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এদিন ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলায় তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু সেদিন কোনো সাক্ষী না আসায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। সেই সঙ্গে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তার জামিন আবেদন করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির বলেন, জাকির খানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ করার কথা ছিল। কিন্তু কোনো সাক্ষী আসেনি। এরআগেও অনেকবার সাক্ষীরা আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন। যেহেতু সাক্ষীরা আসেনি তাই আমরা আদালতের কাছে জামিন আবেদন করেছিলাম। আমাদের আমাদের জামিন নামঞ্জুর করে পরে বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।

অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্দুর রহিম বলেন, ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলায় আসামি জাকির খানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। তবে কোনো সাক্ষী না আসায় আদালত সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন।

এদিকে জাকির খানকে আদালতে আনাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই তার অনুসারীরা উপস্থিত হন। একপর্যায়ে তারা জাকির খানের মুক্তি চেয়ে মিছিলও করেন। সেই সঙ্গে জাকির খানকে কোর্টে তোলার সময়ে তার অনুসারীরা ঘিরে ধরেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও মৃদু লাঠিচার্জ করা হয়।

তবে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) মোহাম্মদ নাজমুল হাসান বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমাদের নিয়মিত ডিউটি হচ্ছে কোনো হাজতি আদালতে আনা হলে পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক থাকে সেদিকটা খেয়াল রাখা।

জাকির খান নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী সাব্বির আলম হত্যা মামলার আসামি ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন। পরিচয় গোপন করে গত এক বছর সপরিবার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাস করছিলেন। পরে গত ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এর আগে সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারি আদালতে জাকির খান, তার দুই ভাই জিকু খান, মামুন খানসহ আটজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার প্রধান আসামি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনকে মামলা থেকে বাদ দেওয়ায় মামলার বাদী তৈমুর আলম খন্দকার সিআইডির দেওয়া অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২৪ জানুয়ারি আদালতে নারাজি পিটিশন দাখিল করেন। পরে অক্টোবর মাসে তৈমুর আবার এ নারাজি প্রত্যাহার করে নেন। তবে এ মামলায় অনেকদিন ধরে সাক্ষীরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসছেন না বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।


কে এই জাকির খান

জাকির খানের বাবা দৌলত খান ছিলেন তৎকালীন টানবাজার পতিতালয়ের গডফাদার। ১৯৮৯ সালে নাসিম ওসমানের (নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি) হাত ধরে জাতীয় পার্টির ছাত্রসমাজে যোগ দিয়ে নারায়ণগঞ্জের ছাত্র রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন।

১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর জাকির খানের সঙ্গে নাসিম ওসমানের বিরোধ বাধে। পরে জাকির খান বিএনপি নেতা কামালউদ্দিন মৃধার নেতৃত্বে ১৯৯৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৫ সালে দেওভোগ এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে শহরের সোনার বাংলা মার্কেটের পেছনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে শহরে পরিচিত পান জাকির খান।

১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে জাকির খান শহরের খাজা সুপার মার্কেটে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড পেয়ে জেলে যান। কিন্তু প্রেসিডেন্টের সাধারণ ক্ষমায় তিনি মুক্ত হন। সে সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরীর নাতি হিসেবে শহরে পরিচিত হয়ে ওঠেন জাকির খান।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সাত মাসের মাথায় কাশীপুর বাংলাবাজার এলাকায় এক ঠিকাদারের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় দ্বিতীয় দফায় জাকির খানের পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। আওয়ামী লীগের চার বছর জাকির খান থাকেন জেলে।

১৯৯৯ সালে স্বল্প সময়ের জন্য জেল থেকে বের হয়ে জাকির খান জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পদটি পেয়ে যান। আওয়ামী লীগের শাসনামলের শেষ দিকে ২০০০ সালে শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ থেকে টানবাজার ও নিমতলী পতিতালয় উচ্ছেদ করলে জাকির খানের পরিবারের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। বিশাল গাড়িবহর নিয়ে অস্ত্রের মহড়া শুরু করলে ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আবার কারাবন্দী হন তিনি। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরও প্রায় পাঁচ মাস তিনি জেলে থাকেন।

২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সাব্বির আলম খন্দকার খুন হওয়ার পর এ মামলার আসামি হওয়ায় তিনি নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে থাইল্যান্ডের সুকুমবিকে কয়েক কোটি টাকা দিয়ে ‘গ্রেস’ নামে ৮ তলা বিশিষ্ট একটি থ্রি-স্টার হোটেল কেনেন।

তবে র‌্যাব জানিয়েছিল গত এক বছর সপরিবার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাস করছিলেন। পরে গত ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

Post a Comment

0 Comments