এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে দুই ধরনের ট্রফি দেওয়া হয়েছে। ১৯২৮ সালে একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় ফিফা। সে জন্য একটি ট্রফি বানাতে ফরাসি স্থপতি অ্যাবেল লাফলারকে দায়িত্ব দেন তখনকার ফিফা সভাপতি জুলে রিমে। উদ্দেশ্য ছিল ১৯৩০ সালে অনুষ্ঠিতব্য উরুগুয়ে বিশ্বকাপ। ৩.৭৮ কিলোগ্রাম ও উচ্চতায় ৩৫ সেন্টিমিটারের ট্রফিটিতে অঙ্কিত ছিল বিজয়ের প্রতীক গ্রিক দেবী ‘নাইকি’র ছবি। ৪ বছরের জন্য ট্রফিটি কাছে রাখতে দেওয়া হতো বিজয়ী দলকে। প্রথম যে দল ট্রফিটি তিনবার জিতবে, তাদের চিরতরে ট্রফিটি দিয়ে দেওয়ার কথা ছিল।
ট্রফিটির প্রথম বিজেতা দল ছিল ১৯৩০ সালের স্বাগতিক উরুগুয়ে। ১৯৩৮ সাল থেকে ১২ বছরের জন্য বন্ধ রাখা হয় এই আয়োজন। কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল সে সময়টাতে। তখন ট্রফিটি ছিল ১৯৩৮ সালের বিশ্বকাপজয়ী ইতালির কাছে। নাৎসি বাহিনীর হাত থকে ট্রফিটিকে রক্ষার জন্য ফিফার সহসভাপতি ও এফআইজিসির (ইতালিয়া ফুটবল ফেডারেশন) সভাপতি অত্তোরিনো বারেসসি একটি ব্যাংক থেকে তুলে রোমে নিয়ে যান ট্রফিটি। তারপর একটি জুতার বাক্সের ভেতরে ভরে লুকিয়ে রাখেন তাঁর বিছানার নিচে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ১৯৪৬ সালে ট্রফিটিকে ফিফার সাবেক সভাপতি জুলে রিমের নামে নামকরণ করা হয় ‘জুলে রিমে ট্রফি’। এর আগে এটিকে ‘ভিক্টোরি’ বলেও ডাকা হতো। যদিও এটাকে ‘বিশ্বকাপ’ বা ‘কোউপ ডু মোন্ড’ নামেই বেশি চিনত সাধারণ মানুষ।
ট্রফি চুরির ঘটনা ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি আলোচিত। ১৯৬৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ইংল্যান্ডে। টুর্নামেন্টের চার মাস আগে আয়োজিত এক উন্মুক্ত প্রদর্শনী থেকে চুরি হয়ে যায় ট্রফিটি। ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালের বিশ্বকাপ জয়ের পর ব্রাজিল যখন ১৯৭০ সালে তৃতীয়বারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়, তখন চিরদিনের জন্য জুলে রিমে ট্রফির মালিক হয়ে যায় ব্রাজিল। কিন্তু সেখান থেকেও ঘটে চুরির ঘটনা। সেই ট্রফিটি আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
জুলে রিমে ট্রফি |
ব্রাজিলকে দেওয়ার পর ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপের জন্য একটি নতুন ট্রফি বানানোর সিদ্ধান্ত নেয় ফিফা। বিভিন্ন দেশের স্থপতির কাছ থেকে ৫৩টি নকশা জমা পড়ে ফিফার কাছে। ১৯৭১ সালের মে মাসে ইতালিয়ান শিল্পী সিলভিও গাজ্জানিগাকের নকশাটি গ্রহণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ইতালির ট্রফি ও মেডেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বার্তোনি, মিলানো (বর্তমানে জিডিই বার্তোনি) থেকে বানানো হয় বিশ্বকাপের বর্তমান ট্রফিটি।
৩৬ সেন্টিমিটারের এই ট্রফিতে হাত উঁচু করে ধরে পৃথিবীকে ধরে রেখেছে দুজন অ্যাথলেট। নজরকাড়া এই ট্রফিতে রয়েছে ১৮ ক্যারেট (৭৫ ভাগ) স্বর্ণ। ভিত্তিতে রয়েছে ম্যালাইকাইট নামক ধাতু। ট্রফিটির ওজন ৬.১ কিলোগ্রাম। এর সামনের দিকে নিচের অংশে ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ কথাটি লেখা আছে। ভেতরের দিকে আছে ১৯৭৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিজয়ী দলগুলোর নাম ও সাল। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের বিজয়ী দলের নাম লেখার পর আরও জায়গা থাকবে ৩টি। অনেকের মতে, ২০৩০ সালে বিশ্বকাপের ১০০ বছর পূর্তির আসরে চ্যাম্পিয়ন দলের নামটিই হবে বর্তমান ট্রফিতে শেষ নাম। এরপর কী হবে, সে ব্যাপারে ফিফা কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
0 Comments