ভোট চুরি করে না আওয়ামী লীগ, জনগণ ভোট দেয়

 





দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের বিরুদ্ধে ভোট চুরির মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ ভোট চুরি করে না। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আমাদের ভোট দেয়।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।


দীর্ঘ চার বছর পর ছাত্রলীগের সম্মেলন ঘিরে গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছিল উৎসবমুখর। সারা দেশ থেকে সংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মী এতে অংশ নেন। বেলা ১১টা ২৮ মিনিটে মঞ্চে আসেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ক্রেস্ট দিয়ে, অভ্যর্থনা উপকমিটির নেতারা ফুল দিয়ে, সংগঠনের নেত্রীরা প্রধানমন্ত্রীকে ব্যাজ ও উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নেন।


সম্মেলনে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পাশাপাশি পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা বন্দর, ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘরসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের ওয়েবসাইট, বিসিএল কমিউনিটি অ্যাপ ও সম্মেলন উপলক্ষে প্রকাশনারও উদ্বোধন করেন। ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

দফতর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি শোক প্রস্তাব পেশ করেন। নিহত ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সম্মেলনে সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালের মে মাসে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ও জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাসী।
এজন্য আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। আওয়ামী লীগ সবসময় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে, জনগণের ভোটের মাধ্যমে এসেছে। গত নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবির কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বিএনপি জিতবে কীভাবে! ২০১৮ সালের নির্বাচন, এক সিটে যদি তিনজনকে নমিনেশন দেয়, একদিকে ফখরুল একজনকে দেয়, রিজভী একজনকে দেয়, আর লন্ডন থেকে তারেক দেয় আরেকজনকে। যে যত টাকা পায়। সেখানে হলো টাকার খেলা। তারপর নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে বলে আমাদের ইলেকশন করতে দিল না! প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির দুজন নেতা আমার কাছে এসে নালিশ করে গেছেন। সিলেটের এনাম চৌধুরী আমার কাছে এসে বলে গেছেন, ‘তারেক রহমান আমার কাছে টাকা চেয়েছে। টাকা দিতে পারি নাই। তাই আমার নমিনেশন বাতিল করে যার কাছ থেকে টাকা পেয়েছে তাকে দিয়েছে। ’ তিনি বলেন, মোরশেদ খান, তিনি নিজে বলেছেন, তার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা চেয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘আমি টাকা দিতে পারব না। ’ ‘তাহলে আপনার নমিনেশন ক্যানসেল। ’ এই হলো তাদের ২০১৮ নির্বাচন। যে টাকা দেবে, সে-ই প্রার্থী। ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে বিএনপির ভরাডুবি হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি বলে দেশের গণতন্ত্র উদ্ধার করবে। তারা যে গণতন্ত্রের কথা বলে, সেটা গণতন্ত্র না। ক্যান্টনমেন্টে বসে গোয়েন্দাদের সহায়তায় বিএনপির জন্ম। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করতেন না। তিনি এ দেশে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ইতিহাস বিকৃত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের স্বাধীনতার ভাষণ, জয় বাংলা স্লোগান তিনি নিষিদ্ধ করেছিলেন। 


সেই দল গণতন্ত্র উদ্ধার করবে! দেশে খুনি, রাজাকার, আলবদর, যুদ্ধাপরাধী ও গ্রেনেড হামলাকারীরা আর যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য সারা দেশে জনমত সৃষ্টি করার জন্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের যোগ্য জবাব দিতে হবে। গুজবে কান না দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, প্রতিটি ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা রয়েছে, তারল্য নিয়ে কোনো গুজবে কান দেবেন না। প্রধানমন্ত্রী বুদ্ধিজীবী শ্রেণির কঠোর সমালোচনা করে বলেন, অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষও জিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে তখন কথা বলেছিলেন। এখনো অনেকে আছেন খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, মানি লন্ডারিং, অস্ত্রকারবারি ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক। খালেদা জিয়াও এতিমের টাকার আত্মসাতের মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এই অপরাধীদের সঙ্গে এখন অনেক জ্ঞানী-গুণীও গণতন্ত্রের কথা বলেন। তারা বুদ্ধিজীবী নন, আসলে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীজীবী। তারা খালেদা-তারেকের সঙ্গে গিয়ে মিলেছেন সরকার উৎখাতের জন্য! বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতাই চায়নি তারা এ দেশের উন্নয়ন কখনই দেখবে না। মানুষ সামনের দিকে আগায়, বিএনপি ক্ষমতায় এলে পেছনে যায়, ভূতের মতো। তারা মনে হয় ভূতের রূপ নিয়েই আসে আমাদের দেশে। আর মানুষের ভোট চুরি করলে মানুষ ছেড়ে দেয় না-এটা খালেদা জিয়ার মনে থাকা উচিত। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের ভোট দেয়। এ দেশে ভোট চুরি, ভোট কারচুপির কালচার দিয়েছে জিয়াউর রহমান। ‘হ্যাঁ-না’ ভোট দিয়ে জনগণের ভোট ছিনিয়ে নিয়েছে। না ব্যালট পাওয়া যায়নি। সব হ্যাঁ ভোট ছিল। বৈশ্বিক মন্দার কথা উল্লেখ করে সবাইকে সাশ্রয়ী ও সঞ্চয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বৈশ্বিক মন্দায় উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। আজকে আমাদের দারিদ্র্যের হার কমে গেছে। মানুষের খাবারের অভাব নেই। আল্লাহর রহমতে উৎপাদনও ভালো হয়েছে। 

প্রতিটি জিনিস আমরা আগে থেকে লক্ষ রাখি এবং ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমি ইংল্যান্ডের কথা জানি, সেখানে দোকানে গেলে একটা পরিবার এক প্যাকেটের বেশি ডিম কিনতে পারবে না। একটার বেশি পাউরুটি কিনতে পারবে না। সবকিছুই রেশন। বিদ্যুতের দাম দেড় শ গুণ বাড়িয়েছে, একটা পরিবারের সবাই একটি রুমের মধ্যে হিটার জ্বালিয়ে বসে থাকে। ঠান্ডায় হিটার না জ্বালিয়ে তো আর টিকতে পারে না। সেই তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ভালো অবস্থায় আছে। তার পরও আমি বলব যখন বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, অর্থাৎ মন্দা দেখা দেয় তার ধাক্কাটা আমাদের দেশে লাগবেই। কাজেই আমাদের আগে থেকেই সতর্ক হতে হবে। খাদ্য যেমন উৎপাদন করতে হবে, বিদ্যুৎ-পানি-জ্বালানি-তেল সবকিছু ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। তিনি বলেন, প্রত্যেককে আমি বলব ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সুইচটা অফ করতে হবে। মোবাইল বা ল্যাপটপ চার্জারের সুইচটা অফ করে দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতায় থেকে দেশটাকে এমন অবস্থা বানিয়েছিল যেন জরুরি অবস্থা (ইমারজেন্সি) ঘোষণা হয়। আর সেই ইমারজেন্সিতেও যারা এসেছিল প্রেসিডেন্ট ছিল বিএনপির, প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন, মইন উদ্দিন সবই বিএনপির সৃষ্টি। ক্ষমতা দখল করে তারা কিন্তু প্রথমে গ্রেফতার করল আমাকে, খালেদা জিয়াকে না। এটাই হচ্ছে আশ্চর্যের বিষয়। কারণ আমি তাদের কিছু কাজের প্রতিবাদ করেছিলাম। তিনি বলেন, তাদের (জরুরি অবস্থার তত্ত্বাবধায়ক সরকার) হাতেই মামলা, সেই মামলায় এরা (খালেদা জিয়া-তারেক রহমান) সাজা পেয়েছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন, আমাদের অনেক জ্ঞানী-গুণী বিএনপির সঙ্গে হাত মেলায়, অনেক তত্ত্বকথা শোনায়, গণতন্ত্রের সবক দেয়, গণতন্ত্র উদ্ধার করতে চায়। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে আমরা উৎখাত করেছি, এরশাদকে উৎখাত করেছি। জিয়াকেও উৎখাত আমরা করতে পারতাম। আন্দোলনটা গড়ে তোলার আগেই অক্কা পেল, নিজের লোকদের হাতেই মারা গেল। ছাত্রদলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়ার পেটোয়া বাহিনী সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতের অন্ধকারে ভিসিকে সরিয়ে নতুন আরেকজনকে বসিয়ে দিয়ে পদটাও দখল করে নেয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই শিক্ষকসহ বহু নেতা-কর্মী হত্যা করে। তাদের অত্যাচার-নির্যাতনে সারা দেশ ছিল নির্যাতিত।

শুধু ক্ষমতায় থাকলেই নয়, ক্ষমতার বাইরে থেকেও অগ্নিসন্ত্রাসের কথা সবার জানা। ২০১৩-২০১৪ সালে প্রায় ৩ হাজার মানুষকে দগ্ধ করে তারা। ৫০০ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। বাস-লঞ্চ-রেল কোনো কিছুই তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। তিনি বলেন, বিএনপির কাজই হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা। খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগকে শিক্ষা দিতে ছাত্রদলই যথেষ্ট’- এর প্রতিবাদে আমি ছাত্রলীগের হাতে বই-খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, শিক্ষা শুধু নিজেরাই গ্রহণ করবে না, গ্রামে গিয়ে নিরক্ষর মানুষকে শিক্ষা দেবে। তারা সেটিই করেছে। আমাকে রিপোর্টও দিয়েছে। আমাদের পেটোয়া বাহিনী লাগে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ৩৫ লাখ মানুষকে ঘর করে দিয়েছে এবং জাতির পিতার এই বাংলাদেশে কেউ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষ খুঁজে বের করার আহ্বান জানান এবং তাদের বৃত্তান্ত দিলে সরকার তাদের পুনর্বাসন করবে বলেও উল্লেখ করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জাতির পিতা সোনার বাংলাদেশ গড়তে যে সোনার মানুষ চেয়েছিলেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরাই সেই সোনার মানুষ হয়ে উঠবে। সম্মেলনে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের কাছে লেখাপড়ার গুরুত্ব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, লেখাপড়া শিখে এ দেশের উপযুক্ত নাগরিক হতে হবে যেন বাংলাদেশের এ উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত থাকে। আমি চাই বাংলাদেশে আমাদের যারা নেতা-কর্মী তারা সেইভাবে গড়ে উঠবে, এ দেশের স্বাধীনতার চেতনা কেউ মুছে ফেলতে না পারে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে না পারে। খুনি, রাজাকার, আলবদর, যুদ্ধাপরাধী এরা যেন কোনো দিন এ দেশে আর ক্ষমতায় আসতে না পারে। সেভাবেই জনমত সৃষ্টি করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে কাজ করতে গেলে প্রযুক্তি-জ্ঞান-সম্পন্ন দক্ষ মানবশক্তি দরকার। কাজেই আমাদের এই যুবসমাজ যারা আমাদের ভবিষ্যৎ, তারাই আমার ২০৪১-এ উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক। কাজেই তাদের আমরা দক্ষ করে গড়ে তুলতে চাই। তারা প্রযুক্তি এবং কারিগরি জ্ঞানে সমৃদ্ধ হবে এবং আমাদের আরও উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। যে যা-ই করুক না কেন, লেখাপড়াটা শিখতে হবে।

লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে হবে। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের দোয়া ও আশীর্বাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকেই যারা মেধাবী তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা যেমন নিজেরা করতে হবে, কারিগরি শিক্ষা নিতে হবে, সেখানে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দিতে হবে। কারণ আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হলে দক্ষ প্রশাসনব্যবস্থার দরকার। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজনীতিও যেমন দরকার, আবার সেইভাবে আমাদের প্রশাসন বা কারিগরি সব ধরনের শিক্ষার দরকার রয়েছে। শেখ হাসিনা জাতির পিতার বক্তব্য ‘আমাদের ইতিহাস ছাত্রলীগের ইতিহাস’ উদ্ধৃত করে বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক প্রতিটি আন্দোলনে শহীদদের তালিকায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীই বেশি। প্রতিটি সংগ্রামেই ছাত্রলীগের অবদান রয়েছে। আগামী দিনেও তারা বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এই আশাই করি। ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ছাত্রলীগ। আমাদের নেতা-কর্মীরাও দাঁড়িয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের লোকও পাশে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, সিলেটে বন্যা হলো সেখানেও পাশে থেকেছেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। সেখানে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী কাজ করছে। সেই দুর্গম এলাকায়ও ত্রাণ নিয়ে ছুটে গেছে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা। করোনাকালে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, দারিদ্র্যের হার ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। কভিডের সময় বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছি। সে সময় মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য ৩৫ লাখ মানুষকে টাকা দিয়েছি। গ্রামে গ্রামে যাতে অর্থের সরবরাহ হয় সে ব্যবস্থা নিয়েছি। শ্রমিকদের বেতন মোবাইলে পৌঁছে দিয়েছি। কৃষককে সর্বাত্মক প্রণোদনা দিয়েছি।

বাংলাদেশ এখন আদর্শ বিনিয়োগের কেন্দ্র : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে আদর্শ স্থান হিসেবে বর্ণনা করে পারস্পরিক সুবিধার্থে বৃহত্তর বিদেশি ও স্থানীয় বিনিয়োগ কামনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বে বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে আদর্শ জায়গা। কারণ আমরা সর্বোচ্চ বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছি। তাই আমি আশা করি বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের দেশে বিনিয়োগ আসবে এবং স্থানীয় জনগণও নিজ দেশে বিনিয়োগ করতে অনুপ্রাণিত হবেন। ’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ৩০০ কোটির বেশি মানুষের বাজার হতে পারে। প্রায় ১৭ কোটি মানুষ আমাদের নিজেদেরই। আর পূর্ব দিকে ৫০ কোটি, উত্তর দিকে ১৫০ কোটি, পশ্চিমে ১০০ কোটি মানুষের বাজার রয়েছে। যোগাযোগ অবকাঠামো বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ থেকে পণ্য পরিবহনে বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে যারা বিনিয়োগ করবেন, তারা সমৃদ্ধ হবেন, আমাদের দেশেরও উন্নতি হবে। ’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোনে (বিএসইজেড) স্থাপিত জাপান অর্থনৈতিক অঞ্চলের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এ অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মনে করি বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে বিনিয়োগের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা। কারণ আমরা সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি। এখানে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বিশেষ ইউটিলিটি সার্ভিস দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। বিনিয়োগবান্ধব আইন বা নীতিমালা করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের প্রতিযোগিতামূলক প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।

বিদ্যুৎ-জ্বালানি অবকাঠামো বিস্তৃত করা হয়েছে। বিভিন্ন সেবা-পরিষেবা প্রদানে ওয়ান স্টপ সার্ভিসও চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি এখানে যাতে বিনিয়োগকারীদের কোনোরকম কালক্ষেপণ না হয় সে ব্যবস্থা সরকার করে দিচ্ছে। ’ ভৌগোলিক অবস্থানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এমন একটা জায়গায় অবস্থান করছে, যেখানে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের একটি সেতুবন্ধ রচনা হতে পারে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি আঞ্চলিক বাজার ধরার সুবিধার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিজস্ব বাজারের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বড় বাজার রয়েছে। পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ উন্নত করেছি। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এবং সুমিতোমো করপোরেশন গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসায়ুকি হায়োডো।



Post a Comment

0 Comments