জয় বা হার নয়, ব্রাজিলের জন্য এই ম্যাচ ছিল নিজেদের বেঞ্চ শক্তি বাজিয়ে দেখার। আগেই শেষ ষোলো নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় কিছু খেলোয়াড়ের জন্য দরকার ছিল বিশ্রামও। সব মিলিয়ে শুরুর একাদশে রীতিমতো ‘পাইকারি পরিবর্তনে’র পথে হেটেছেন তিতে। আগের ম্যাচ থেকে বদল আনেন ৯টি। ৩৯ বছর বয়সী দানি আলভেজকে নেতৃত্ব দিয়ে মাঠে নামিয়ে দেন ৬ দশকের মধ্যে সবচেয়ে কমবয়সী আক্রমণভাগ।
তবে তারুণ্যনির্ভর দলটি ক্যামেরুনের দেয়াল ভাঙতে পারেনি। উল্টো ৯১ মিনিটে গোল হজম করে ১-০ ব্যবধানে হেরে গেছে। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এই প্রথম কোনো আফ্রিকান দলের কাছে হারল ব্রাজিল।
এই হারের পরও অবশ্য ‘জি’ গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ ষোলোয় উঠেছে ব্রাজিল। আর প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছে ক্যামেরুন। সোমবার নকআউট পর্বের ম্যাচে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়া।
লুসাইল স্টেডিয়ামের ম্যাচটিতে নেইমার-রিচার্লিসনবিহীন আক্রমণভাগের দায়িত্বে ছিলেন রদ্রিগো, আন্তনি, গ্যাব্রিয়েল জেসুস ও গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লিরা। ১৯৫৮ বিশ্বকাপের পর এটিই ব্রাজিলের সর্বকনিষ্ঠ আক্রমণভাগ।
২২.৯ বছর গড়ের আক্রমণভাগ নিয়ে শুরু থেকে দাপুটে ফুটবলই খেলেছে ব্রাজিল। প্রথম আধা ঘণ্টার মধ্যে ৫টি কর্নার আদায় করে নেন রদ্রিগো–মার্তিনেল্লিরা। তাদের ঠেকাতে গিয়ে ওই সময়ের মধ্যে ৩টি হলুদ কার্ডও দেখে ক্যামেরুন।
আক্রমণের শুরুটা হয় দ্বিতীয় মিনিট থেকে। বাইলাইনের কাছে চলে যাওয়া রদ্রিগো বল পাঠিয়েছিলেন পেছন দিকে। কিন্তু দ্রুত পৌঁছাতে না পারায় ফ্রেদ যে শটটি নেন, সহজেই তা ক্যামেরুন রক্ষণে আটকে যায়।
১৪ মিনিটে গোলের সুযোগ তৈরি করে দেন ফ্রেদ নিজেই। ক্যামেরুন বক্সে বাড়ানো তাঁর ক্রস খুঁজে নেয় মার্তিনেল্লিকে। সুবিধাজনক জায়গায় থাকা আর্সেনাল ফরোয়ার্ড হেডও নেন ঠিকঠাকমতো। তবে লাফিয়ে কর্নার বিনিময়ে সেটি প্রতিহত করেন ক্যামেরুন গোলকিপার ডেভিস এপাসি।
শুরুর দিকে ক্যামেরুন ব্রাজিল ডি বক্সে পৌঁছাতে পেরেছে মাত্র দুইবার। তবে ১৯ ও ২০তম মিনিটের সেই দুটি আক্রমণেই ছিল গোলের সম্ভাবনা। প্রথমবার তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ছোট ডি বক্সে ঢুকে গিয়েছিলেন ম্যাক্সিম চুপো-মোতিং, তবে শট নেওয়ার আগমুহূর্তে ডিফেন্ডারদের ঘেরাওয়ে আটকে যান তিনি। পরের মিনিটে চুপো-মোতিং ক্রস বাড়ান গোলমুখে থাকা ভিনসেন্ট আবুবকরকে। এ যাত্রায় ব্রাজিলকে উদ্ধার করেন টুর্নামেন্টে প্রথমবার খেলতে নামা গোলকিপার এদেরসন।
হারের হতাশা ব্রুনো ফার্নান্দেজের |
২৮ মিনিটে বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রি কিক পেয়ে যায় ব্রাজিল। তবে রদ্রিগোর নেওয়া শট গোলমুখেই যেতে পারেনি, আটকে যায় ক্যামেরুনের মানব-দেয়ালে। এর চার মিনিট বাদে পাওয়া আরেকটি ফ্রি কিক নেন দানি আলভেজ, এটি চলে যায় গোল বারের ওপর দিয়ে।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ব্রাজিলের আরেকটি ভালো সুযোগ তৈরি করেন মার্তিনেল্লি। তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে গোলমুখে জোরালো যে শটটি নেন, সেটি কর্নারের বিনিময়ে আটকে দেন ক্যামেরুন গোলকিপার।
তবে এক মিনিট বাদে গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল ক্যামেরুন। বা দিক থেকে মুমি এনগামালেউয়ের ক্রস চলে যায় ডি বক্সে থাকা ব্রায়ান এমবেউমোর কাছে। প্রিমিয়ার লিগে খেলা এই ফরোয়ার্ডের হেড ছিল গোলমুখি। ডান দিকে ঝাপিয়ে ব্রাজিলকে বাঁচিয়ে দেন এদেরসন। কাতার বিশ্বকাপে এটিই ব্রাজিলের গোলমুখে প্রথম শট। আগের দুই ম্যাচে সার্বিয়া, সুইজারল্যান্ডের কেউ একটি শটও নিতে পারেনি।
প্রথমার্ধের শেষ দিকের ওই গোল সম্ভাবনায় দ্বিতীয়ার্ধের প্রথমে বেশ উজ্জীবিত ছিল ক্যামেরুন।
৫১ মিনিটে নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া-নেওয়া করে ব্রাজিল রক্ষণে ভীতি তৈরি করেন এমবেউমো, আবুবকররা। তবে ফিনিশিং দূর্বলতায় শেষ পর্যন্ত গোলমুখ খুলতে পারেনি তারা।
৫৬ মিনিটে মার্তিনেল্লিকে আরেকবার গোলবঞ্চিত করেন এপাসি। পরের মিনিটে জটলার ভেতর থেকে নেওয়া মিলিতাওয়ের শট গোলকিপারের হাত ফসকে বেরিয়ে যায়। তবে শেষ মুহূর্তে আবারও দলকে বাঁচিয়ে দেন এপাসি।
এর পর কিছুটা সময় দুই দলই অনেকটা ঝিমিয়ে ছিল। আক্রমণের গতি বাড়ে শেষ দিকে। ৮৪ মিনিটে দারুণ একটা সুযোগ আসে ব্রুনো গিমেরেজের সামনে। রাফিনিয়ার ক্রস থেকে বল পেয়েছিলেন গোলমুখের সামনে। তবে ক্রিস্তোফার উহর বাধায় বল চলে যায় বাইরে।
গোলশূন্য সমতায় শেষ হতে চলা ম্যাচে আচমকাই উত্তেজনা নিয়ে আসেন আবুবকর। ডান দিক থেকে ঢোকা এনগোম এমবেকেলির দুর্দান্ত ক্রস দুই ডিফেন্ডারের মাঝ থেকে নেওয়া হেডে জালে জড়িয়ে দেন তিনি। কাতার বিশ্বকাপে এই প্রথম গোল হজম করে ব্রাজিল।
১০ মিনিট ব্যপ্তির যোগ করা সময়ের বাকিটুকুতে আর সেই গোল শোধ দিতে পারেননি মার্তিনেল্লিরা।
গ্রুপের অপর ম্যাচে সার্বিয়াকে ৩-২ গোলে হারায় সুইজারল্যান্ড। সুইসরা ড্র করলেই গোল ব্যবধানে এগিয়ে শেষ ষোলোয় উঠে যেতে পারত ক্যামেরুন। তবে নিজেদের জয় নিশ্চিত করে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয়েছে সুইজারল্যান্ড। সমান পয়েন্ট নিয়েও গোল ব্যবধানে এগিয়ে গ্রুপসেরা হয়েছে ব্রাজিল।
0 Comments