বর্তমান সমাজে মাদক-জুয়া, খুন-হত্যা, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যুতা, ও চোরাকারবারিসহ বিভিন্ন অপরাধ অনৈতিক কর্মকান্ড যেন নিয়মিত বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এসব অপরাধ কর্মকান্ড এখন সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। সরকার মাদকসহ অপরাধ দমনে বিভিন্ন আইন করেও অপরাধীদেরকে দমাতে পারছেন না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বায়িত্বহীনতার কারণে অপরাধীরা মাদক ব্যবসা ও খুনের মতো জঘন্যতম ঘটনা ঘটিয়েও পার পেয়ে যাচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় সারা দেশের অপরাধ প্রবনতার সাথে তাল মিলিয়ে নবীনগরের বড়িকান্দি ও সলিমগঞ্জ এলাকার অপরাধ সিন্ডিকেটের গডফাদার আবু হানিফ মাষ্টার দের্দাছে অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
জানা যায়, বহুল আলোচিত-সমালোচিত মো. আবু হানিফ মাষ্টার কলেজে শিক্ষকতার আড়ালে সরকারী দলের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে অবৈধ মাদক পাচার, চাঁদাবাজি, সালিশ বাণিজ্য, কলেজে নিসিদ্ধ কোচিং বাণিজ্য, দালালী-ভূমিদস্যুতা, বালুমহাল দখলের চেষ্টা, সোনা চোরাচালান এবং প্রতিদিন কোটি টাকার জুয়ার আসর বসানোসহ বিভিন্ন অপরাধ সিন্ডিকেটের গডফাদারের দ্বায়িত্ব পালন করছে বলে জানান এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী আরো জানান, ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানাধীন বড়িকান্দি ইউনিয়নের ধরাভাঙা গ্রামের সন্তান যাত্রাদলে থেকে বিভিন্ন কু-কর্ম পরিচালনাকারী লুৎফর রহমান লাল মিয়ার সুযোগ্য ছেলে শিতল হত্যাকারী খুনী কুখ্যাত মো. আবু হানিফ মাষ্টার। মুখোশধারী এক ভয়ংকর অপরাধীর নাম আবু হানিফ মাষ্টার। যিনি অর্থের জন্য যা ইচ্ছা তা করতে পারে। হোক বৈধ আর অবৈধ।
উক্ত হানিফ সলিমগঞ্জ কলেজে শরীর চর্চার শিক্ষকতার আড়ালে থেকে আপন ছোট ভাই মানিক ও আপন ছোট বোন আলেয়াসহ আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমে বির্কিত অবৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য তথা মাদক ব্যবসা, চোরাচালানী ও সুধের ব্যবসা করার দায়িত্ব দিয়ে ছোট ভাই-বোনকে মাদক সম্রাট ও মাদক সম্রাজ্ঞী বানিয়েছে। এভাবে দালালী-ভূমিদস্যুতা, চাঁদাবাজিসহ প্রতিদিন কোটি টাকার জুয়া খেলার আসর বসিয়ে ও বিতর্কিত বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড করে অতি অল্প সময়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান কু-খ্যাত আবু হানিফ মাষ্টার। তার শেল্টারের কারণে সলিমগঞ্জে ও বড়িকান্দিতে মাদক দ্রব্য বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে নিত্যপণ্যের (চিড়া-মুড়ির) মতো।
সূত্র আরো জানায়, মুখোশধারী হানিফ মাষ্টার একজন বোবা ডাকাত। তিনি সকল অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থেকেও ভদ্রতার মুখোশে থাকে নিরাপদে। আর সব দোষ হানিফ তার ছোট ভাই মানিকের উপর চাপিয়ে নিজে হয়ে যান পীর সাহেব। হানিফের সহযোগিতা না পেলে মানিক কোনো ভাবেই অবৈধ মাদক ব্যবসা করতে পাড়ত না বলে জানান এলাকাবাসী। হানিফ মাষ্টারের অর্থের স্বার্থের কারণে ছোট ভাই মানিককে অবৈধ মাদক ব্যবসার প্রধান সেনাপতির দ্বায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন। আর মানিক মিয়া অবৈধ মাদক ব্যবসার সকল দায়-দ্বায়িত্ব ও দোষ-ত্রুটি নিজের উপর রেখে, বড় ভাই হানিফ মাষ্টারকে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ার সিঁড়ি হয়েছে ছোট ভাই মাদক সম্রাট মো. মানিক মিয়া। মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, জুয়া খেলা, সালিশ বাণিজ্য, কলেজে নিসিদ্ধ কোচিং বাণিজ্য ও চোরাকারবারীসহ যাবতীয অবৈধ কর্মকান্ড থেকে আসা টাকার আয়-ব্যয় হিসাব থাকে বোবা ডাকাত হানিফ মাষ্টারের কাছে। এভাবেই দূর্নীতিবাজ হানিফ মাষ্টার এখন কোটিপতি। আর এই অবৈধ টাকা দিয়ে এলাকার ভেজাল জমি-জমা বায়না করে নিরীহ মানুষদেরকে করছে হয়রানী।
এদিকে হানিফ চক্রের প্রতিটি অপরাধ কর্মকান্ডের আলাদা-আলাদা ইউনিট রয়েছে। যেমন :- ১. মাদক দ্রব্য ব্যবসার ইউনিট, ২.চাঁদাবাজির ইউনিট, ৩. জমি-জমা দখল বানিজ্য ও দালালী-ভূমিদস্যুতার ইউনিট, ৪. জুয়া খেলার আসর ইউনিট, ৫. কলেজে কোচিং বাণিজ্য ইউনিট, ৬. সালিশ বাণিজ্য ইউনিট, ও ৭. চোরাকারবারী ইউনিট সহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের জন্য ভিন্ন-ভিন্ন ইউনিট সিস্টেম রয়েছে। প্রতিটি ইউনিটে হানিফ মাষ্টার তার আপনজনদেরকে ইউনিট প্রধানের দ্বায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন। তাই তারা কখনো প্রশাসনের হাতে ধরা পড়লে হানিফ মাষ্টারের নাম গোপন রাখেন।
যার ফলে লোক চক্ষুর আড়ালে থেকে ভদ্রতা ও ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে, মুখে হাসি হাসি ভাব রেখে, মানুষের সাথে মিষ্টি-মিষ্টি কথা বলে নির্দ্ধিধায় সকল অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা করছে মো. আবু হানিফ মাষ্টার ওরফে হানিফ দালাল ওরফ জুয়ারী হানিফ ওরফে চামচা হানিফ ওরফে প্রতারক হানিফ, ওরফে কুখ্যাত হানিফ মাষ্টার।
উল্লেখিত ইউনিটের কারো কোনো ঝামেলা বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লে সুচতুর আবু হানিফ মাষ্টার গোপনে যোগাযোগ করে টাকার বিনিময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ম্যানেজ করে, নির্বিঘ্নে তার সকল অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যেতে থাকেন। এবং গড়ে তোলেন টাকার পাহাড়। আর এই অবৈধ টাকা দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাউজিংএ রাখছে কোটি কোটি টাকার ফ্ল্যাট ও ফ্লট। এবং অবৈধ টাকার কারণেই ধরাকে সরাজ্ঞান করে চলছে প্রতারক হানিফ মাষ্টার।
এভাবে হানিফ সমাজে সাধু সেজে ভদ্রতার মুখোশ পড়ে অন্ত আড়ালে থেকে তার অবৈধ ব্যবসা সলিমগঞ্জ ও বড়িকান্দির সীমানা ছাড়িয়ে নরসিংদী ও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলায় বিস্তৃত লাভ করেছে।
এভাবে লেবাস ধারনকারী হানিফ চক্রের অবৈধ ব্যবসা দিনকে দিন বৃদ্ধি পেলেও সুচতুর মুখোশধারী হানিফ মাষ্টার টাকার জুরে থাকে ধরা ছুয়ার বাইরে। সেই সাথে হানিফ মাষ্টার অতি গোপনে সোনা চোরাচালানের মতো বিতর্কিত ভয়ানক ব্যবসাও করে যাচ্ছে বীরদর্পে। এসব অবৈধ ব্যবসা করে অতি অল্প সময়ে হয়ে গেছেন আঙুল ফুলে কলা গাছ। আর এই অবৈধ টাকার গরমে যা ইচ্ছা তা করে যাচ্ছে আবু হানিফ দালাল।
সূত্র আরো জানান, এই বিশাল অপরাধ সাম্রাজ্য ও আধিপাত্য টিকিয়ে রাখতে কথায় কথায় মানুষের উপর আক্রমন, মিথ্যা মামলা-হামলা, খুন-হত্যা করাসহ যে কোনো ঘটনা ঘটাতে পারে পাষন্ড হানিফ মাষ্টার।
এসব মানুষগুলোর জন্ম যেন নিজের স্বার্থের জন্য অন্যসব সাধারণ মানুষের ও সমাজের ক্ষতি করা। এই হানিফ চক্রের দ্বারা এমন কোন নাশকতামূলক কাজ নেই যা করা হয় না। বিনিময়ে কেবল রয়েছে তাদের অর্থের স্বার্থ। আর তাদের অর্থের স্বার্থের জন্যে রাতের অন্ধকার থেকে শুরু করে প্রকাশ্যে দিবালোকে পর্যন্ত যে কোন ঘটনা ঘটাতে প্রস্তুত হানিফ ও হানিফ বাহিনী।
যার ফলে হানিফ গ্রুপ গত ৩ ডিসেম্বর নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের মোক্তারামপুর গ্রামে প্রকাশ্যে দিনের বেলায় নিরীহ অসহায় কৃষক মো. শিতল মিয়া (৬৫)কে নির্মমভাবে দারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এ মর্মান্তিক লোমহর্ষক হ্রদয়বিদারক হত্যাকান্ডে নবীনগরের বড়িকান্দি ও সলিমগঞ্জ এলাকাবাসী আতস্কিত এবং উদ্ধিগ্ন হয়ে পড়েছে।
নিরীহ অসহায় কৃষক মো. শিতল মিয়ার হত্যাকান্ডের উপর ভিত্তি করেই নবীনগরের মোক্তারামপুর ঘটনাস্থল সরেজমিনে ঘুরে এসে এই প্রতিবেদনটি তৈয়ার করেছেন বিশেষ প্রতিবেদক।
শিতল হত্যার নেপথ্যে :-
……………………..
পুলিশ ও মামলার সূত্রে জানা যায়, অসহায় কৃষক মো. শিতল মিয়া (৬৫) নিহত হবার পূর্বে ২ডিসেম্বর সন্ধায় পিকআপযোগে কাঠ যাচ্ছিল মোক্তারামপুর গ্রামের কবির মিয়ার স-মিলে। পথিমধ্যে হানিফ বাহিনীর চাঁদাবাজ ইউনিটের সদস্য মো.রহিম মিয়া জিপি নামে ২শত টাকা চাঁদা দাবি করে ব্যবসায়ী কবির মিয়ার কাছে। চাঁদাবাজির বিষয়টি নিয়ে কবির মিয়ার ছেলে ইব্রাহিম মিয়ার সাথে হানিফ গ্রুপের আব্দুর রহিম মিয়ার কথা কাটাকাটি ও বাগবিতন্ডা হয়। এর এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। বিষয়টি স্থানীয়রা সমাধান করে দেয়। তার পরও এর জের ধরে গত ৩ডিসেম্বর শনিবার সকালে মো. শিতল মিয়া সহ আরো কয়েকজন অটোরিক্সা দিয়ে সলিমগঞ্জ বাজারে যাওয়ার পথে ঘটনাস্থল মোক্তারামপুর সাকিনস্থ মো. খোকন মিয়ার পোলট্রি ফার্মের সামনে রাস্তার উপর পৌছামাত্র লুৎফর রহমান লাল মিয়া ও হানিফ বাহিনীর প্রধান আবু হানিফ মাষ্টারের পরোক্ষ উস্কানীতে ও প্ররোচনায় হানিফ ও হানিফ বাহিনীর লোকজন দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র দিয়ে শিতল মিয়াকে মারধর শুরু করে।
এসময় হানিফ মাষ্টারের নির্দেশে মো. মানিক মিয়া তার হাতে থাকা দারালো দা দিয়ে হত্যার উদ্ধেশ্যে মো. শিতল মিয়ার মাথায কোপ মারিয়া গুরুতর কাটা রক্তাক্ত জখম করে। এভাবে হানিফের নির্দেশে মো. খোকন মিয়াও তার হাতে থাকা দারালো দা দিয়ে মো. শিতল মিয়াকে আবারও কোপিয়ে জখম করে। এসময শিতল মিয়ার চিৎকারে আশে পাশের লোকজন চলে এলে খুনী হানিফ ও তার বাহিনীর লোকজন কোপিয়ে শিতল মিয়ার মৃত্যু নিশ্চিত করে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
এখানেই ক্ষান্ত হননি অপরাধ সিন্ডিকেটের গডফাদার কুখ্যাত আবু হানিফ মাষ্টার। পরে হানিফ মাষ্টারের নেতৃত্বে ও নির্দেশে মোক্তারামপুর গ্রামের মো. রফিক মিযা, কানু মিয়া, শফিকুল ইসলাম, হক সাব, আবুল হোসেন, দানা মিয়া ও লিটন মিয়াদের বাড়ি ও ঘরে একজোটে অনাধিকার প্রবেশ করিয়া লুটপাট, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে।
এসময হানিফ ও হানিফ বাহিনীর লোকজন লুট তরাজ করে নগদ টাকা ও স্বর্নালংকার সহ প্রায় ৫০লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এবং ৬টি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। এভাবে হানিফ বাহিনীর লোকজন কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ এলে হানিফ ও তার লোকজন পুলিশের উপর আক্রমন চালায়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দীর্ঘক্ষণ প্রচেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়। এতে পুলিশসহ আহত হয়েছে অন্তত ২৫জন।
এবিষয়ে ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানায় দুইটি মামলা এজাহারভুক্ত হয়েছে। হানিফ ও হানিফ গ্রুপের লোকজন পুলিশের উপর আক্রমন করার কারণে এস আই জাহাঙীর আলম বাদী হয়ে গত ৪ডিসেম্বর একটি মামলা দায়ের করেন। নবীনগর থানা মামলা নং- ২, ধারা-১৪৩/১৪৭/১৪৮/৩৩২/ ৩৫৩/। গত ৫ডিসেম্বর অন্য মামলাটি করেন নিহিত মো. শিতল মিয়ার মেয়ে তাহমিনা আক্তার। নবীনগর থানা মামলা নং- ৪, ধারা – ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩৪১/৪৪৭/৪৪৮/৩৩২/৩২৪/৩২৬/৩০৭/৩০২/৪৩৬/৪২৭/৩৭৯/৩৮০/ ১১৪/১০৯/৩৪ পেনাল কোড। তাছাড়াও হানিফ ও হানিফ বাহিনীর সদস্যদের নামে অসংখ্য মাদক মামলাসহ চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা, চোরাকারবারী, অপহরন, মদ-জুয়া ও খুন-হত্যার মতো নানা ধরনের অপরাধ অনৈতিক কর্মকান্ড করার জন্য বিভিন্ন থানায় অসংখ্য মামলা জিডি ও অভিযোগ রয়েছে। মো. আবু হানিফ মাষ্টার সিন্ডিকেট এলাকায় একের পর এক নানা অপরাধ করে গেলেও তাদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি না দেওয়ায়, গুঞ্জন উঠেছে যে, হানিফ ও তার বাহিনী কি আইনের উর্ধ্বে। তা হলে এদের রুখবে কে ?
0 Comments