রমজান হলো বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সংযম ও আত্ম-পরিশোধের পবিত্রতম মাস। এই মাসে বিশ্বের সব মুসলিমরা নিজেকে সৃষ্টিকর্তার প্রতি একটু বেশিই নিবেদন করেন।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ২০০০-২৫০০ ক্যালরি সমপরিমাণ খাবার গ্রহণ করতে হয়। তবে রমজানে ১০০০ থেকে ১৫০০ ক্যালরি সমপরিমাণ খাবার গ্রহণই যথেষ্ট। কারণ এ সময়ে অল্প খাবার গ্রহণ করলে অটোফ্যাজি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরের ক্ষতিকর কোষসমূহ পরিষ্কার হয়।
এ মাস যে ইবাদতের জন্য শ্রেষ্ঠ সময়। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধনী-গরীব সকল শ্রেণি পেশার মানুষ না খেয়ে থেকে সৃষ্টিকর্তার নির্দেশনা মোতাবেক জিবন পরিচালনা করেন।
ইফতারের সময় আরও একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, ভরপেট খাবেন না, পেটের এক-চতুর্থাংশ খালি রাখবেন। পানি ১-২ ঢোক পান করার পর এক গ্লাস ঘরে বানানো ফলের শরবত খেলে শরীর সতেজ হতে শুরু করবে।
ইফতারে অতিরিক্ত তেল ও মসলাযুক্ত খাবার না রাখাই ভালো। এগুলো খেলে ওজন তো বাড়বেই সেই সঙ্গে পেটের সমস্যা, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, অবসাদ, আলসার, অ্যাসিডিটি এবং হজমের সমস্যা হতে পারে।
রোজা রাখার পর ইফতারের প্রথম খাবার হলো পানীয়। পানীয় নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে। আমরা সাধারণত ইফতারে নানা ধরনের শরবত পান করে থাকি। এসব শরবতে থাকে চিনি এবং নানান প্যাকেটজাত ফলের পাউডার। এসব কৃত্রিম উপাদান শরীরের কোন উপকারেতো আসেই না বরং সারাদিন রোজা রেখে শরীরের যে উপকারটুকু হয় দিনশেষে তাও অপকারে পরিণত হয়।
ইফতারে যা খবেন না-
১। অতিরিক্ত তেল ও মসলাযুক্ত খাবার ছোলা ভুনা, পেঁয়াজু, বেগুনি, চপ, হালিম, বিরিয়ানি ইত্যাদি বাদ দিতে হবে। পাশাপাশি চিনিযুক্ত খাবার খাবেন না। আর ইফতারের পর বেশি দুর্বল লাগলে ডাবের পানি বা স্যালাইন খেতে পারেন।
২। একসঙ্গে অনেক বেশি খাবার খাওয়া যাবে না।
৩। টকজাতীয় ফলে যদিও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, তারপরও টকজাতীয় ফলে সাইট্রিক অ্যাসিডও থাকে। তাই রোজার সময় টক ফল সাবধানতার সঙ্গে খেতে হবে। ভালো হয় রাতের খাবার শেষ করে খেলে। কারণ সাইট্রিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার অ্যাসিডিটির পরিমাণ বৃদ্ধি করে। তাই সতর্কতা অবলম্বন দরকার।
৪। টমেটো ইফতারের সময় অনেকের প্রিয় খাবার। তবে টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে সাইট্রিক অ্যাসিড ও ম্যালিক অ্যাসিড থাকে যা পাকস্থলীতে ইরিটেশন তৈরি করে। তাই টমেটো বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভালো।
৫। ঝাল খাবার পাকস্থলীতে অ্যাসিডিটির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই কাঁচা মরিচ কিংবা অতিরিক্ত ঝাল খাবার পরিহার করে চলতে হবে। গরম খাবার যেমন চা-কফি পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ক্ষরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই রোজার সময় চা-কফি পরিহার করে চলা উচিৎ।
আশা করা যায়, রোজার মাসে উপরের পরামর্শগুলো অনুসরণ করলে মাসজুড়েই সুস্থ থাকা সম্ভব।
ইফতারে যা খাবেন-
খেজুর বা খোরমা দিয়ে ইফতার শুরু করবেন। ইফতারের পর থেকে সেহরির আগ পর্যন্ত ৮-১০ গ্লাস পানি না খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই ইফতারের পর পানি পান করার চেষ্টা করুন। ইফতারে রাখবেন আমিষ, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন, খনিজ জাতীয় খাবার। সঙ্গে ইসবগুল, লেবুর শরবত ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। এগুলোও রোধ করবে পানিশূন্যতা।
আঁশযুক্ত খাবারের মধ্যে লাল আটা, বাদাম, বিনস, ছোলা, ডাল ইত্যাদি খেতে পারেন। বেশি করে কলা খাবেন। কারণ, একটি কলায় প্রায় ১০৫ ক্যালরি থাকে। রোজার শেষে শরীর, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুকোষ খাবারের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক শক্তির যে জোগান চায় কলা সেটি পূরণ করতে পারে।
একটি ডিম খাওয়া যেতে পারে, একটি ডিম থেকে পাওয়া যায় ৮০ ক্যালরি। সঙ্গে অন্যান্য ফল যেমন- তরমুজ, আপেল, কমলা এসব পানিশূন্যতা রোধ করে।
এছাড়াও গরম পড়তে শুরু করেছে রোজায় শরীর ঠাণ্ডা রাখার জন্য ইফতারের পর হালকা টক দই খেতে পারেন। এটি শরীরকে শুধুই ঠাণ্ডা রাখে না, বরং খারাপ কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
JB BANGLA NEWS24// জেবি বাংলা নিউজ২৪
0 Comments