কলেজছাত্রী লামিয়া কঙ্কাল উদ্ধারের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মূল আসামী গ্রেফতার করেছে পিবিআই



পিরোজপুর প্রতিনিধি : 

পিরোজপুরের নাজিরপুরে নিখোঁজের চার মাস পর বালু চাপা দেওয়া অবস্থায় কলেজছাত্রী লামিয়া কঙ্কাল উদ্ধারের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মূল আসামী স্বামী মোঃ তরিকুল ইসলাম কে গ্রেফতার করে পিবিআই। আজ শুক্রবার সকালে মূল আসামী স্বামী মোঃ তরিকুল ইসলাম কে পিরোজপুর বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করলে সে নিজের দোষ স্বীকার করে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। মোঃ তরিকুল ইসলাম (২২) নাজিরপুর উপজেলার দক্ষিণ চিথলিয়া গ্রামের মিজান খান এর পুত্র। 

 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর (নিঃ) মোঃ বায়েজীদ আকন জানান সঙ্গীয় সাব-ইন্সপেক্টর (নিঃ) মোঃ রিফাত ইমরান সহ অফিসার ও ফোর্সের একটি চৌকস দল তদন্তভার প্রাপ্তির ২৪ ঘন্টার মধ্যে ইং ১৬/০৩/২০২৩ তারিখ ১২.০৫ ঘটিকায় ঢাকার মোহাম্মদপুর থানাধীন জাফরাবাদ এলাকার সাদেক খান রোডস্থ জনৈক মোহাম্মদ আলী খানের ভাড়া বাসা থেকে ভিকটিম লামিয়া আক্তার  এর স্বামী মোঃ তরিকুল ইসলাম কে গেফতার করে। 

 

গ্রেপ্তারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আসামি মোঃ তরিকুল ইসলাম নিজের দোষ স্বীকার করে পুলিশকে জানায়, গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সনে মে মাসের শেষের দিকে ঈদের ছুটি শেষে যেদিন বাড়ি থেকে আসামী ঢাকায় যাবে সেদিন ভিকটিম লামিয়া আসামীর বাড়িতে এসে ওঠে। ফেইসবুকে “তানিশা তানজিম” নামক একটি আইডি থেকে লামিয়ার দুটি নগ্নছবি ছড়িয়ে পরার কারণে লামিয়া আসামীকে দায়ী করায় এবং স্থানীয় লোকজনের চাপে ঐদিন সন্ধ্যায় আসামী তরিকুল ভিকটিম লামিয়াকে বিয়ে করে।  বিয়েতে আসামী তরিকুলের পিতা মাতার অসম্মতি ছিল। তাদের বিবাহ মেনে না নেয়ায় বিয়ের পর লামিয়া তার বাবার বাড়ীতেই থাকত। সেখানে আসামীর যাতায়াত ছিল। বিয়ের সাত মাস পর লামিয়াকে তার বাপের বাড়ী থেকে শশুর বাড়ীতে তুলে নিতে না চাইলে লামিয়া ও আসামীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। গত ইং ০৬/১২/২০২২ তারিখ রাত অনুমান ১১.০০ ঘটিকার সময় আসামী তরিকুল ভিকটিম লামিয়ার সাথে সঙ্গোপনে দেখা করে। লামিয়ার  মা ও নানী ঘুমালে লামিয়াকে বাড়ী থেকে বের হয়ে আসামী তরিকুলের সাথে দেখা করে। তারা কথা বলার এক পর্যায়ে ভিকটিম রাগান্নিত হয়ে বলে, ছাড়াছাড়ি হলে লামিয়া আসামীর বিরুদ্ধে মামলা করে দেবে বললে তরিকুল রাগে লামিয়ার গলা টিপে হত্যা করে। এরপর লাশ খালে ফেলে টেনে বালুর মাঠে নিয়ে যায়। মাঠের পাশের এক বাড়ির গোয়াল ঘর থেকে একটি বেলচা নিয়ে সেখানে বালু খুড়ে লাশ বালু চাপা দিয়ে রাখে। পরবর্তীতে ঘটনার ০৪ (চার) মাস পর গত ইং ১১/০৩/২০২৩ তারিখ আসামী মানষিক পীড়ায় অতিষ্ট হয়ে ভিকটিমের লাশ তার পরিবারের দৃষ্টি গোচরে আনার জন্য নাজিরপুর বাজারের একটি দোকান থেকে দুটি গ্লভস কিনেন। তারপর রাত অনুমান ১১.০০ ঘটিকার সময় পুনরায় ঘটনাস্থলে গিয়ে বালুর ঢিবিতে বেলচা দিয়ে খোড়ার পর লাশের হাত দেখতে পেয়ে লাশের হাত ধরে ওঠানোর চেষ্টা করলে লাশের হাত দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে হাতটা গর্তে রেখে পুনরায় লাশ বালু চাপা দিয়ে আসে। পরদিন রাতে আসামী তরিকুল একটি চিরকুট লিখে লামিয়ার ঘরের চালে ঢিল মারে। তখন ঘর থেকে লামিয়ার খালা ও নানী বাইরে বের হয়ে চিরকুট দেখতে পায়। 

 

নাজিরপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরে এ ঘটনায় থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়। আমরা পরবর্তীতে তরিকুলের বাবা ও এক প্রতিবেশীকে গ্রেপ্তার করেছিলাম। পরবর্তীতে সোমবার মেয়ের বাড়িতে একটি চিরকুট পৌঁছালে তার ভিত্তিতে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আমরা  অভিযান চালিয়ে ছেলের মেজো খালাকে গ্রেফতার করেছি। পিবিআই মূল আসামী মোঃ তরিকুল ইসলাম কে গ্রেফতার করেছে। 

 

উল্লেখ্য,নিখোঁজের ০৪ (চার) মাস পর ১২ মার্ রাতের বেলা ভিকটিম লামিয়া আক্তার এর পরিবার একটি চিরকুট পেয়ে থানা পুলিশকে অবহিত করলে পরের দিন অর্থাৎ ইং ১৩/০৩/২০২৩ তারিখ চিরকুটের তথ্যের ভিত্তিতে সাত কাছিমা গ্রামের বালুর মাঠ থেকে ভিকটিম লামিয়া আক্তার  এর কঙ্কাল উদ্ধার করে থানা পুলিশ। এ ঘটনায় থানা পুলিশের পাশাপাশি ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেফতারে ছায়াতদন্ত করে পিবিআই পিরোজপুর টিম। 

 


Post a Comment

0 Comments