নারায়ণগঞ্জের বন্দরে ব্যবসায়ী মেরাজুল ইসলাম জয় কে (২৮) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে তারা।
মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) দুপুর ১ টার দিকে বন্দর বাজার সংলগ্ন সড়কে সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এই মামলার আসামিদের স্বজনরা হুমকি দিচ্ছে বলে নিহতের পরিবার সদস্যরা শঙ্কার মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা
নিহত স্বজন জানান, দুপুর ১২ টায় বন্দর বাজারের সামনের সড়কে এসে এলাকাবাসী জড় হতে থাকে।
এ সময় তারা সড়কের এক পাশের অংশ অবরোধ করে অবস্থান নেয়। তবে সড়কের বাকি অংশের এক লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল করেছে। পরে নিহতের স্বজনরা ব্যানার হাতে জড়িতদের ফাঁসির দাবি করে বক্তব্য দিয়েছে। মানববন্ধন শেষে তারা অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে বন্দর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।
মানববন্ধনে নিহত মেরাজুল ইসলাম জয়ের মা নাসরীন বেগম কান্নাজনিত কণ্ঠে বলেন, ‘ওরা আমার ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করে নাতিকে এতিম করেছে। এখন আবার আসামির স্বজনরা মামলা তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। মামলার আসামি বিল্লুর বোন সহ স্বজনরা কয়েকদিন আগে আমাদের হুমকি দিয়েছে। এই ঘটনায় আমরা থানায় জিডি করেছি। এরপরও ওরা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। এখন আমার বাকি দুই ছেলেকে নিয়ে ভয়ে ভয়ে দিন কাটাচ্ছি। তাদের কিছু হলে আমি কী নিয়ে বাঁচবো? আমি শুধু আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
নিহতের বাবা আজহারুল ইসলাম এজা বলেন, ‘আসামিরা ও তার স্বজনরা টাকা দিয়ে সবকিছু কিনে ফেলবে, তাদের কেউ কিছু করতে পারবেনা বলে সবাইকে বলে বেরাচ্ছে তারা। আসামিরা অনেক প্রভাবশালী বলে তারা এখনো আমাদের হুমকি দিচ্ছে। আমরা ওদের বিচার চাই, ফাঁসি চাই। যাতে করে আর কারও মায়ের বুক খালি না হয়।
একই ঘটনায় আহত আল আমিনের মা সাহিদা বেগম বলেন, ‘ইফতারের সময়ে ওরা আমার ছেলেকে কুপিয়েছে। আমার ছেলে হাসপাতারে শুয়ে কাঁতরাচ্ছে। আমার ছেলে কী দোষ করেছিল? আমরা সকল আসামিদের ফাঁসি চাই।
এ সময় নিহত মেরাজুল ইসলামের স্ত্রী বেলী আক্তার ও ছেলে আয়মান সহ নিহতের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ছালেহনগর পঞ্চায়েত কমিটির সহ সভাপতি নিয়ামত উল্লাহ ও এলাকাবাসাী একই দাবি করে বক্তব্য দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘এই ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে এবং দুজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে, সোমবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে বন্দর উপজেলার রুপালী আবাসিক এলাকায় আয়মান ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের সামনে ৭-৮ জন দুর্বত্তরা মিলে মেরাজুল ইসলাম জয় ও আল আমিনের ওপরে ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে তারা দুজনে গুরুতর আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রাত ৯ টার দিকে মেরাজুল ইসলামের মৃত্যু হয়।
অপরজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে আহত আল আমিন হাসপাতালের বেডে শোয়া অবস্থায় হামলা ও হামলাকারীদের বর্ণনা দিয়েছেন। তার ভাষ্যমতে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহীন মিয়া ও তার স্বজনদের নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়েছে।
এই ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহীন মিয়া সহ ১৪ জনকে আসামি করে হত্যার মামলা করেন নিহতের মা নাসরীন বেগম। এছাড়া আরও অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে মামলার আসামি করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে আব্দুর রব ও স্বপন কে গ্রেফতার করা হয়েছে।
0 Comments