তীব্র প্রসব ব্যথা উঠায় মাঝপথে যাত্রা বিরতি দিয়ে রেলওয়ে থানা পুলিশের সার্বিক সহযোগিতায় জামালপুর রেলস্টেশন প্লাটফরমে এক পুত্র সন্তান প্রসব করেছেন সীমা বেগম (২৮) নামের এক ট্রেনযাত্রী। তার বাড়ি জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার উত্তর কালিকাপুর গ্রামে। ২৫ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এই পরিস্থিতিতে পড়েন ওই প্রসূতি। নবজাতক ও প্রসূতি সুস্থ আছেন। তারা তাদের বাড়িতে ফিরে গেছেন।
রেলওয়ে থানা ও প্রসূতি সীমা বেগমের পরিবারের স্বজনরা জানান, প্রসূতি সীমা বেগম গাজিপুরের ভাওয়াল মীর্জাপুরে প্যাকেটজাত খাবার তৈরির কারখানার শ্রমিক। তার স্বামী মো. শাহজল পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি। তাদের আরও দুই ছেলে রয়েছে। ভাওয়াল মির্জাপুরে ভাড়া বাসায় থেকে এই দম্পতি জীবিকা নির্বাহ করেন। সন্তান প্রসবের সময় হওয়ায় স্ত্রীকে গ্রামের বাড়িতে রেখে যাওয়ার জন্য ২৫ আগস্ট সকালে গাজিপুরের জয়দেবপুর রেলস্টেশন থেকে তারা দেওয়াগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনে উঠেন। ট্রেনটি ময়মনসিংহ রেলস্টেশন ছাড়ার পর থেকেই প্রসূতি সীমা বেগমের প্রসব ব্যথা উঠে। ট্রেনটি জামালপুর রেলস্টেশনে পৌঁছার কয়েক মিনিট আগে ট্রেনের ওই কামড়া থেকে যাত্রীদের মধ্যে কয়েকজন জামালপুর রেলওয়ে থানায় ফোন করে প্রসূতির বিষয়টি জানান। যাত্রীরা প্রসূতিকে জামালপুর রেলস্টেশনেই নামানোর পরামর্শ দেন।
ফোন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রেলওয়ে থানার ওসি মো. গোলজার হোসেন একদিকে ফায়ার সার্ভিসকে ফোন করেন। অন্যদিকে থানার নারী কনস্টবলদের প্রস্তুত থাকতে বলেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ট্রেনটি জামালপুর রেলস্টেশনে থামে। ট্রেনের কামড়ার দরজা থেকে প্রসূতি সীমা বেগমকে প্লাটফরমে নামানোর সঙ্গে সঙ্গে তার স্বাভাবিক প্রসব প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ সময় অন্যান্য নারী যাত্রী ও কয়েকজন হিজরা সদস্য তাদের উড়না ও সাথে থাকা বাড়তি কাপড় দিয়ে ওই প্রসূতিকে ঘের দিয়ে রাখেন। ভেতরে নারী কনস্টবল কল্পনা রানী প্রসূতিকে সার্বিক সহযোগিতা করেন। এরই মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্স স্টেশনে পৌঁছায়। ততক্ষণে ওই প্রসূতি একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেন। একই সময়ে সুমন রানা নামের একযাত্রী তার ডা. স্ত্রী খাদিজা খাতুনকে ফোনে ডেকে আনেন। তিনি সেখানে পৌঁছেই প্রথমেই প্রসূতির নাড়ি কাটেন। এরপর নবজাতককে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নবজাতক ও তার মা সুস্থ আছে বলে সবাইকে জানান। পরে ডা. খাদিজা খাতুন প্রসূতির জন্য কিছু ওষুধ প্রেসক্রিপশন করে কয়েক ঘন্টা বিশ্রাম নেওয়ার পর বাড়িতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে প্রসূতি ও নবজাতককে নিয়ে দেওয়ানগঞ্জে বাড়িতে চলে যান স্বজনরা। নবজাতকের নাম রাখা হয়েছে শাহ জামাল।
প্রসূতির স্বামী মো. শাহজল বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, আজকে রেলওয়ে থানার ওসি স্যার, অন্যান্য পুলিশ ভাইবোন, ট্রেনের যাত্রী, ডাক্তারসহ সবাই আমার স্ত্রীর পাশে দাঁড়াইছে। তার কোন ক্ষতি হয় নাই। স্ত্রীকে নিয়ে আমি খুব বিপদে পড়ছিলাম। আল্লাহর রহমতে আমার স্ত্রী ও নবজাতক সন্তান সুস্থ আছে। সবাই যেভাবে সাহায্য করছে আমি এই ঋণ কোনদিনও শোধ করতে পারমু না।
জামালপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলজার হোসেন বাংলারচিঠিডটকমকে বলেন, ট্রেন থেকে যাত্রীদের ফোনে একজন প্রসূতির জরুরি পরিস্থিতির কথা শোনা মাত্রই প্লাটফরমে শালীনতা বজায় থেকে সন্তান প্রসবের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়ে ফেলি। নারী কনস্টবল ও অন্যান্য নারী যাত্রীদের দিয়ে প্রসূতি সীমা বেগমকে ট্রেনের কামরা থেকে প্লাটফরমে নামাই। আমি নিজে উপস্থিত থেকে এবং উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুস সাত্তার, প্লাটফরমে কর্মরত হেল্প ডেস্কের নারী কনস্টবল কল্পনা রানী, কনস্টবল আল আমিন, আল ইমরান ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সিপাই শামীম ফরাজী সেখানে দায়িত্ব পালন করেন। বিশেষ করে কাপড় দিয়ে নিরাপত্তা বেস্টনির ভেতরে নারী কনস্টবল কল্পনা রানী ওই প্রসূতিকে সন্তান প্রসবে সহায়তা করেছেন। পরে খাদিজা আক্তার নামের একজন ডাক্তারও এসে প্রসূতির সেবা দেন। আমাদের নারী কনস্টবল কল্পনা রানী নবজাতককে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে তার মায়ের হাতে তুলে দেন। আমাদের কাজটাই হলো সেবামূলক। ট্রেনের যাত্রা পথে বিপদে পড়া ওই প্রসূতিকে আমরা তাৎক্ষণিক সেবা দিতে পেরেছি। নবজাতক ও তার মা সুস্থ আছে। এতেই আমরা খুব খুশি।
0 Comments