গাজীর আমলের রূপগঞ্জ বাসিন্দাদের চোখে মেগাসিটি



ঢাকার বাড্ডা লিংক রোডের বাসিন্দা আফজাল হোসেন চাকরি করেন নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসীতে অবস্থিত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। প্রতিদিনই ঢাকা থেকেই যাতায়াত করেন তিনি। প্রায় দেড় দশক ধরে তিনি চাকরি করছেন এই এলাকায়। তার মতে এই সময়ের মধ্যে রূপগঞ্জের যোগাযোগব্যবস্থা ও অবকাঠামো থেকে শুরু করে সার্বিক পরিবর্তন অল্প সময়ে কাউকে বলে বোঝানো সম্ভব না।

আফজাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, আগে এদিকেই বাসা নিয়ে থাকতাম পরিবার ছাড়া। এখন বাচ্চাদের সময় দেওয়ার জন্য ঢাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকি। কারণ আগে এই রূপসীতে আসতে সময় লাগত এক ঘণ্টারও বেশি। এখন ২৫ থেকে ৩০ মিনিটে চলে আসতে পারি। রাস্তাঘাটের যে পরিমাণ কাজ হয়েছে তাতে রূপগঞ্জ এখন ঢাকার মতো মেগাসিটির সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে। তবে ঢাকার চাইতে রূপগঞ্জ একদিন থেকে এগিয়ে— এখানে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির ছোঁয়াও মেলে।

আফজালের মতো আরও যারা রাজধানী ঢাকা কিংবা আশপাশের এলাকা থেকে রূপগঞ্জে নিয়মিত যাতায়াত করেন, তারা সবাই আফজালের সঙ্গে একমত। রূপগঞ্জের স্থানীয়দের কথা তো বলাই বাহুল্য।




রূপগঞ্জের বাসিন্দারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই শিল্প-কারখানায় সমৃদ্ধ এই এলাকা। কিন্তু এসব কারখানার কাঁচামাল সংগ্রহ এবং উৎপাদিত পণ্য আনা-নেয়ার কাজে ব্যবহৃত ভারী ট্রাকের নিত্য চলাচলে সড়কগুলোর অবস্থা ছিল নাজুক। একটু পরপরই দেখা মিলত বড় গর্তের। এর সঙ্গে সামান্য বৃষ্টিতেই প্রকট হয়ে উঠত জলাবদ্ধতা। ফলে যোগাযোগের মূল পথ রূপসী এলাকার সড়কে সবসময় লেগে থাকত যানজট।

সেই চিত্র বদলে গেছে জানিয়ে স্থানীয়রা বলছেন, রূপসীর সেই জরাজীর্ণ চেহারা আর নেই। এখানকার সড়ক এখন দেশের উন্নত যেকোনো সড়কের সমমানের। যোগাযোগব্যবস্থার এই পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে গোটা এলাকাতেই। এখন রাস্তার দুই ধারে গড়ে উঠেছে বিপণী বিতানসহ নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান। রয়েছে বাসাবাড়িও।


রূপসী প্রিমা মার্কেটের ব্যবসায়ী মাজেদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, আগে এখানকার রাস্তাঘাট তেমন ভালো ছিল না। অথচ নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী নেতারা এই এলাকা থেকে এমপি-মন্ত্রী হয়েছিলেন। এক আমলে এই আসনের এমপি ছিলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু রূপগঞ্জবাসীর কোনো উপকার হয়নি। আরেকজন প্রভাবশালী নেতা ছিলেন এই রূপগঞ্জে। বড় পদে থাকলেও তিনিও এলাকার কোনো উপকারে আসেননি।

বিজ্ঞাপন

মাজেদ চৌধুরী বলেন, ২০০৮ সালে গোলাম দস্তগীর গাজী এমপি হওয়ার পর থেকে এলাকার অবস্থা পাল্টে গেছে। উনার আমলে রাস্তাঘাটসহ আরও অনেক কিছুই পাল্টেছে। বিশেষ করে ফ্লাইওভার আর ব্রিজের কারণে এখন ঢাকার চাইতেও বেশি ভালো লাগে রূপগঞ্জে। আর রাস্তাঘাট ভালো হলে স্বাভাবিকভাবে এলাকার লোক হিসেবে আমরা সুবিধা পাই। কারণ এখন বিভিন্ন স্থান থেকে প্রচুর লোক আসছে কাজের জন্য। ফলে ব্যবসাও বাড়ছে স্থানীয়দের।

রূপসী থেকে কাঞ্চন যাওয়ার রাস্তার দিকে দেখিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, এই দিকটায় যদি সুযোগ পান তবে ঘুরে আসবেন। একটা সময় এখানের রাস্তা দেখে মনে হতো ইরি বা বোরো ধানক্ষেত, যেখানে আবাদ চলছে। আর এখন গেলে মনে হবে কোনো বিশ্বরোডে আছেন।

কথা শেষ করে সামনের দিকে এগিয়ে গেলে মাজেদ চৌধুরীর বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার কারণ খুঁজে পাওয়া গেল না। রূপসী বকুল স্তম্ভ থেকে এগিয়ে কাঞ্চন সড়কের দিকে যেতেই দেখা গেলো চার লেনের সড়ক। সেই সড়ক দেশের উন্নত অন্য যেকোনো সড়কের মতোই।




তালতলার দিকে এগিয়ে গেলে কথা হলো চা বিক্রেতা আমজাদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আগে এদিকে প্রায় সময়ই রাস্তায় পানি জমে থাকত। যাতায়াতে সমস্যা হওয়ার কারণে তেমন জনবসতি এদিকে ছিল না। কিন্তু এখন প্রচুর বিল্ডিং হচ্ছে। নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে। ঢাকার চেয়ে কোনো অংশে কম না রূপগঞ্জ।

বদলে যাওয়া এই চিত্রের নেপথ্যে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর অবদান দেখছেন এই চা বিক্রেতা। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও গোলাম দস্তগীর গাজীর আমলে যে পরিবর্তন হইছে, তাতে পুরাই মেগাসিটির মতো হয়ে যাচ্ছে রূপগঞ্জ। গাজী রূপগঞ্জকে মেগাসিটি শুনলাম আমাদের এমপি এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী নাকি আরও হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ শুরু করবেন রূপগঞ্জে।

অন্য জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে গোলাম দস্তগীর গাজীর পার্থক্যের কথা তুলে ধরে আমজাদ আলী বলেন, আসলে আগেকার এমপি-মন্ত্রীরা কেউ এলাকাতেই আসতেন না। কিন্তু গাজী নিয়মিত এলাকায় আসেন। তাই তিনি মানুষের প্রয়োজনও বোঝেন। তাই রূপগঞ্জের এত উন্নয়ন। আমার দোকানে যারা চা খাইতে আসে, তারাও সবাই একই কথা বলে। সবার এক কথা— গাজীর আমলেই রূপগঞ্জের উন্নয়নটা হইছে। আমার কথা বিশ্বাস না হলে সামনে মেজবাহ স্যার বসে আছেন, তার কাছেই শোনেন।


আমজাদ আলীর দোকানেই চায়ের অপেক্ষা করছিলেন স্কুলশিক্ষক মেজবাহুল ইসলাম। চা বিক্রেতার আলাপের সূত্র ধরে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, উনি (আমজাদ আলী) ঠিকই বলেছেন। আগে এলাকা দেখলে মনে হতো যেন বড়সড় একটা ভাগাড়। শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে যেতে চাইত না। মানুষজন সহজে এদিকে আসতে চাইত না। কিন্তু এখন সবদিকেই পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। যারা আগে এই এলাকায় আসেননি, তাদের বলে বোঝানো যাবে না যে গত দেড় দশকে এই এলাকা কতটা বদলে গেছে।

এলাকার সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় প্রধান প্রকৌশলী মো. জামাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, রূপগঞ্জের অবস্থান ঢাকার একদম অদূরে। কিন্তু এই এলাকাটি একেবারেই অবহেলিত ছিল। যোগাযোগব্যবস্থা ছিল ভীষণ নাজুক। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর নির্দেশনায় এই এলাকার রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এখনকার রূপগঞ্জের সঙ্গে সঙ্গে আগের রূপগঞ্জকে কোনোভাবেই মেলানো যাবে না।

এই প্রকৌশলী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নের অভিযাত্রায় এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তার আমলে উন্নয়নের যে যাত্রা, তার একটি বড় উদাহরণ এই রূপগঞ্জও। আর সেই যাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী। তিনি নিজে প্রতি সপ্তাহে এলাকায় আসেন। তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের অভাব-অভিযোগের কথা শোনেন। নিজে সব উন্নয়ন প্রকল্পের তদারকি করেন। তার নির্দেশনায় রূপগঞ্জের আরও অনেক উন্নয়ন প্রকল্প চলমান আছে। আশা করছি সেগুলোও খুব দ্রুতই শেষ করে ফেলতে পারব।

Post a Comment

0 Comments