মনোনয়ন পত্র উত্তোলনের তথ্যে বেশ চটেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। এক চিঠিতে জেলা নির্বাচন অফিসারের প্রতি ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন সাবেক এই সংসদ সদস্য। এটিকে গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) সকালে নিজের ব্যক্তিগত ইমেইল থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসার বরাবর ক্ষুব্ধ ভাষায় এক দরখাস্ত প্রেরণ করেন গিয়াস উদ্দিন। তিনি এবং তার ছেলে রিফাত কায়সারের নামে উত্তোলনকৃত মনোনয়নের সংবাদের প্রতিবাদপত্র সহ তা বাতিল করার আবেদন জানানো হয়। গিয়াস উদ্দিনের সাক্ষরিত এবং ব্যক্তিগত ইমেইল থেকে প্রেরিত ওই আবেদন পত্রের অনুলিপি দেয়া হয়েছে জেলা রিটার্নিং অফিসার এবং সহকারী রিটানিং অফিসারকেও।
এর আগে রোববার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসার ইস্তাফিজুল হক আকন্দ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গিয়াস উদ্দিন এবং তার ছেলে রিফাত কায়সারের নামে নির্বাচন অফিস থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। এই খবরে শুরু হয় তোলপার। তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় গিয়াস উদ্দিন নিজেই এটিকে গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ জানান।
এদিকে, তাদের নামে উত্তোলনকৃত মনোনয়ন ফরম অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়ে গিয়াস উদ্দিনের পক্ষ থেকে প্রেরিত আবেদন পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, রোববার সন্ধ্যায় কয়েকজন সাংবাদিক আমাকে ফোন করে জানতে চান যে, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নির্বাচনি আসন নারায়ণগঞ্জ-৪ এর জন্য আমার এবং আমার ছেলে জি.এম কায়সার এর নামে মনোনয়ন পত্র কিনেছি কিনা? আমি এই প্রশ্নের উত্তরে সাথে সাথে তাদের জানাই, মনোনয়ন পত্র কিনার বা তোলার প্রশ্নই উঠে না। তখন সাংবাদিকরা বলে এই সংবাদটি তারা নির্বাচন অফিস থেকে জেনেছে। এতে আমি বিষ্মিত হই। সাথে সাথে আমি আমার পক্ষ থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন স্থানীয় মিডিয়াকে জানাই। সাংবাদিক ভাইদের মধ্যে যারা আমার সাথে যোগাযোগ করে, তাদেরকে এই বিষয়টি মিথ্যা ষড়যন্ত্র এবং বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রচারিত বলে প্রতিবাদ জানিয়েছি।
কয়েকটি স্থানীয় পত্রিকায় এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। আমি দৃঢ়তার সাথে জানাতে চাই, আমি এবং আমার ছেলে নির্বাচন অফিসের কার্যালয় থেকে আমাদের নামে কাউকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করার জন্য বলিনি এবং কাউকে ক্ষমতাপত্রও দেইনি। যতি কেউ আমাদের নামে মনোনয়ন পত্র তুলে নিয়ে থাকে তাহলে আমি বলতে চাই যে, আমার মত একজন রাজনৈতিক দায়িত্বশীল মানুষের মনোনয়ন পত্র প্রদানের সময় মনোনয়ন পত্র গ্রহণকারীর নিকট থেকে আমাদের দেয়া কোনো অনুমতি পত্র বা ক্ষমতা পত্র আছে কিনা, তা যাচাই না করে কিভাবে তা প্রদান করা হলো?
পত্রে গিয়াস উদ্দিন আরও বলেন, আমি যুদ্ধকালীন একজন মুক্তিযোদ্ধা অধিনায়ক। আমি মুক্তি যুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পদত্যাগ এবং সুষ্ঠ নির্বাচনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, আইনের শাসন এবং জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। এই সংগ্রামে সফল না হওয়া পর্যন্ত আমি এবং আমার সন্তান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পতাকাতলে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে বদ্ধ পরিকর। কোনো লোভ, লালসা এবং প্রলোভন আমাদেরকে আদর্শচ্যুত করতে পারবে না।
পরিশেষে পত্রের মাধ্যমে নির্বাচন অফিসারকে উদ্দেশ্যে করে গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমার এবং আমার সন্তানের নামে যদি আপনারা কারো নিকট মনোনয়ন পত্র বিক্রি বা প্রদান করে থাকেন, তার সাথে আমাদের কোনো সম্মতি বা সম্পর্ক নেই। তাই অনুগ্রহ করে মনোনয়ন ফরম দুটি বাতিল ঘোষণা করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে আমাকে অবহিত করবেন।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসার ইস্তাফিজুর হক আকন্দ গিয়াস উদ্দিনের পক্ষ থেকে প্রেরিত এই পত্র পেয়েছেন কিনা, তা জানতে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে, নারায়ণগঞ্জের রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক জানিয়েছেন, তিনি গুরুত্বপূর্ন কাজে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তাই গিয়াস উদ্দিনের পক্ষ থেকে এমন কোনো চিঠির বিষয়ে এখনো তিনি জানতে পারেননি। অফিসে খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
0 Comments