অন্য সরকারগুলোর মতো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার বিচার বিভাগে কখনও হস্তক্ষেপ করেনি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগের অধিকার-উন্নয়নের জন্য বা দেশের মানুষের জন্য কী করেছি সেটা আর আমি এত বেশি বলতে চাই না। তবে আমি এটুকু বলবো, যেহেতু আমার বাবা চাইতেন স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, আমরা সরকারে এসে সেই স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি।’
মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু ও বিচার বিভাগ’ শীর্ষক স্মারকগ্রন্থ এবং ‘ন্যায় কণ্ঠ’ শীর্ষক মুজিববর্ষ স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কখনও বিচার কাজে হস্তক্ষেপ করিনি। এর আগে অনেক ঘটনা আছে, আপনারা জানেন। দেখা গেছে, ফলস সার্টিফিকেটের ব্যবহার বা ছাত্রদলের কাঁধে হাত রেখে কাকে কী রায় দেওয়া হবে সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ রকম বহু ন্যক্কারজনক ঘটনাও বাংলাদেশে ঘটেছে।’
‘অন্তত আমি এটুকু বলতে পারি আমরা সরকারে আসার পর, সেটা করার সুযোগ নিইনি। সবসময় একটা ন্যায়ের পথে যেন সবাই চলতে পারে, আমরা সেই ব্যবস্থা করেছি।’
স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে টানা তিনবারের সরকারপ্রধান বলেন, ‘প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনারা দেখবেন একের পর এক আমরা কাজ করে গেছি। দ্বিতীয়বার যখন এসেছি, তখন আমরা দ্য কোর্ট অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট-২০০৯ পাস করি এবং বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের স্থায়ী রূপ দিই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এমনকি অর্থনৈতিকভাবেও যেন বিচার বিভাগ স্বাধীনতা অর্জন করে সেই ব্যবস্থাটাও কিন্তু আমি ‘৯৬ সালে এসে করে দিয়েছিলাম। পরে এসে সব রকম সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগ নিই। এর মাঝে আপনারা জানেন, বিভিন্ন জেলায় বোমা মেরে বিচারকদের হত্যা করা হয়েছে। সেখানে আমরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সবসময় বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়েই চলতে হবে। আমাদের দেশটাও যেমন বিশ্বে একটা মর্যাদা নিয়ে চলবে, সঙ্গে সঙ্গে একটি দেশের সব অঙ্গও যেন সেভাবে মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে, আমরা সেটাই করতে চাই। সেভাবেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
বিচারকদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিচারকদের থাকার ব্যবস্থা, চলার ব্যবস্থা; সব ধরনের ব্যবস্থা, সুযোগ সুবিধা আমরা সাধ্যমতো করে দিয়েছি।’
বিচারকদের দক্ষতা বাড়াতে দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টির কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আইন কমিশন আমরা গঠন করি। বিচারকদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট আমি প্রতিষ্ঠা করে দিই। এখন তো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ট্রেনিং নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। অন্য দেশে কীভাবে হয় সেটা আমাদের দেশের মানুষের জানা উচিত, সেই ব্যবস্থাটাও আমরা করে দিয়েছি।’
গ্রামের হতদরিদ্র মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘গ্রামের হতদরিদ্র মানুষ বিচার পায় না। তাদের জন্য লিগাল এইড কমিটি ও আলাদা অর্থ বরাদ্দ করে বিচারের ব্যবস্থাটা আমরা করে দিয়েছি। আইনগত সহায়তা ২০০০ সালে আমরা প্রণয়ন করি।’
অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেখানে মাত্র হাতে গোনা ৭ জনের বেশি বিচারক বসতে পারতেন না, এনেক্স ভবন করে দিয়েছি। ৪০টি চেম্বারের ব্যবস্থা করে দিলাম। পাশাপাশি প্রত্যেকটা জেলা কোর্ট নতুনভাবে গড়ে তোলা হলো। এরপর এসে তো আরও কাজ করে দিয়ে গেছি সেটা আপনারা জানেন। অর্থাৎ মানুষ যেন ন্যায় বিচার পায়, সেদিকে লক্ষ রাখা।’
উচ্চ আদালতে নারী বিচারক নিয়োগে নিজের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে যে আইন ছিল সেখানে বিচার প্রক্রিয়ায় নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারবে না। জাতির পিতা সেই আইন পরিবর্তন করে সুযোগ দিলেন। কিন্তু আমি এসে দেখলাম আমাদের উচ্চ আদালতে কোনও নারী নেই। আমি প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রপতিকে নারীদের সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ করলাম।’
অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ছাড়াও অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
0 Comments