৯৫ ভাটা বন্ধ ও জরিমানা
আদালতে দেওয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলায় গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ৯৫টি ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ সময় জরিমানা বাবদ ৩ কোটি ২৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। কিন্তু বন্ধ করে দেওয়া ইটভাটার বেশির ভাগকেই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে দেখা গেছে
ঢাকা জেলার ভাটাগুলো মূলত সাভার, ধামরাই ও কেরানীগঞ্জে অবস্থিত। এসব এলাকায় ১১৩টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি ভাটা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। গাজীপুরে ৪৬টি অবৈধ ইটভাটার মধ্যে ৩৩টি বন্ধ করে দেওয়া হয়। জরিমানা আদায় করা হয় ৪৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, নারায়ণগঞ্জে ১২৩টি অবৈধ ইটভাটার মধ্যে গত ১ বছরে ১৩টিতে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং ভাটা মালিকদের ৬৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মানিকগঞ্জে ১১টি অবৈধ ভাটার মধ্যে ৮টি বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং পরিবেশ আইন ভঙ্গের দায়ে ২৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। মুন্সিগঞ্জে ২৬টির মধ্যে ১৬টিতে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ভাটা মালিকদের ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
বন্ধের পরও চলছে ভাটা
ঢাকার সাভার ও ধামরাইয়ে অবৈধ ইটভাটা আছে ৮৬টি। গত ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৫১টি ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সাভার ও আশুলিয়ায় অভিযান চালানো হয়। তবে জরিমানা দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে মালিকপক্ষ।
সম্প্রতি সাভার ও ধামরাইয়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অবৈধ ইটভাটাগুলো দিব্যি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সাভারের নামাগেন্ডায় মেসার্স মধুমতি ব্রিকসে কয়লার পাশাপাশি লাকড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে।
মেসার্স মধুমতি ব্রিকসের ব্যবস্থাপক মো. শিবলু প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ভাটা আর চালাব না। বন্ধ করে দেব।’ লাকড়ি পোড়ানোর ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
এদিকে সাভারের নামাগেন্ডার একলাছ ব্রিকস, মেসার্স মধুমতি ব্রিকস, শাহদল্লাপুরের মাহিন ব্রিকস, রিপন ব্রিকসকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে আর্থিক জরিমানাসহ ভাটা ভেঙে দেওয়া হয়। গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে ধামরাই উপজেলার কালামপুর, ডাউটিয়া, জলসিন কুল্লা ও বাসনা এলাকার ১৮টি ভাটায় জরিমানাসহ ইটভাটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায় ভাটাগুলোর কার্যক্রম চলছে।
ভেঙে দেওয়া ভাটা পুনরায় চালু প্রসঙ্গে মেসার্স খান ব্রিকসের ব্যবস্থাপক আবদুল জলিল বলেন, প্রতি মৌসুমে প্রায় চার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। মৌসুম চলাকালে ভেঙে দিলে কি কেউ এত টাকা লোকসান দিতে চাইবে? তাই ১০ থেকে ১৫ দিন লাগে ঠিক করতে। ঠিক করার পর আবার শুরু করা হয়। তিনি আরও জানান, ভাটার মালিক বলেন, সামনের বছর ভাটা বন্ধ করে দেবেন।
গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল মির্জাপুর এলাকার তুরাগ ব্রিকসে গত ২৬ জানুয়ারি ও ২১ মার্চ দুবার অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। তাদের চিমনি ভেঙে দিলেও কয়েক দিন পর টিনের চিমনি লাগিয়ে আবার ভাটা চালু করা হয়েছে। পাইনশাইল এলাকার এন আর ব্রিকসের চিমনি ভেঙে দিলেও ফের চালু করা হয়েছে ভাটা।
ভাওয়াল মির্জাপুর এলাকার বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান বলেন, ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই ভাটা চালু করা হয়। গত ২৮ মার্চ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিন গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকার বন্ধ করে দেওয়া ১২টি ইটভাটায় আবার ইট পোড়াতে দেখা গেছে।
0 Comments