এটি নির্মাণ করছেন ভারতের কিংবদন্তি নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল।
আগামী ২৫ জানুয়ারি মুম্বাইতে সিনেমাটির শুটিংয়ে অংশ নেবেন শুভ। এর আগে সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন আরিফিন শুভসহ সিনেমাটি সংশ্লিষ্ট শিল্পীরা। এসব প্রসঙ্গে আরিফিন শুভ কথা বলেছেন বাংলানিউজের সঙ্গে—
প্রশ্ন: করোনা থেকে সেরে উঠলেও আপনার শ্বাসকষ্ট রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন, এখন শারীরিক অবস্থা কেমন?
আরিফিন শুভ: শরীরটা এখনো অনেক দুর্বল। শ্বাসকষ্টের চেয়ে দুর্বলতাটা বেশি। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গেলে পা কাঁপে। এর আগে বহুবার অসুস্থ হয়েছি, সার্জারিও হয়েছে আমার, কিন্তু এতটা দুর্বল জীবনে আর কখনো হইনি। শরীর আমার কথার বাইরে চলে গেছে। চিকিৎসক বলেছেন, দুর্বলতা কাটতে সময় লাগবে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও মেডিসিন নিচ্ছি।
প্রশ্ন: কিছুদিন পরতো শুটিং, তাহলে…
আরিফিন শুভ: শুধু আল্লাহ্র রহমত ও মনের জোর- এই দু’টা নিয়ে যাচ্ছি। দেখা যাক…।
প্রশ্ন: ‘বঙ্গবন্ধু’ বায়োপিক নিয়ে প্রস্তুতি কেমন?
আরিফিন শুভ: এই কাজটা করার ব্যাপারে গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি আমি নিশ্চিত হয়েছি। তার আগে তিন মাসে দেশে-বিদেশে মিলিয়ে চার থেকে পাঁচবার আমি অডিশন দিয়েছি। ফেব্রুয়ারিতে আমাকে কনফারমেশন দেওয়া হয়। মার্চে শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার জন্য আটকে গেল। এতদিন বলিনি, কারণ বলার অনুমতি ছিল না। সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত যতটুকু সম্ভব হয়েছে জাতির পিতাকে পড়া, ওনার ফুটেজ দেখা, ওনার সম্পর্কে শোনার চেষ্টা করেছি। যারা ওনাকে কাছ থেকে দেখেছেন, তাদের কাছে ১৯২০ থেকে শুরু করে ১৯৭৫ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ও ব্যক্তি জীবন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি।
প্রশ্ন: শুটিংয়ে অংশ নিতে মুম্বাই যাচ্ছেন কবে?
আরিফিন শুভ: আমি ১৯ জানুয়ারি যাচ্ছি। ২০-২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত শুটিংয়ের আগে আমার শেষ ওয়ার্কশপ হবে। সেখানে আমার শুটিং চলছে এপ্রিলের ১০ তারিখ পর্যন্ত। এরপর বাংলাদেশে শুটিং হবে সেপ্টেম্বরে।
প্রশ্ন: যখন শুনলেন, আপনি জাতির জনকের চরিত্রটিতে চূড়ান্ত হয়েছেন, তখন অনুভূতি কেমন ছিল?
আরিফিন শুভ: শোনার পর সবার সামনে চোখে পানি আসেনি। কিন্তু আড়াল হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে চোখ দিয়ে পানি ঝরেছে। সেটা আনন্দ অশ্রু। মানুষ যখন এক্সট্রিম হ্যাপি হয়, সেটা প্রকাশ করার ভাষা থাকে না। পার্থিব জগতের যত সুখ বা প্রাপ্তি, সেগুলো মানুষ প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু এই প্রাপ্তিটা পার্থিব জগতের অনেক উপরে- যেটা প্রকাশ করার কোনো ভাষা আমার জানা নেই। একজন মানুষ হিসেবে, একজন বাঙালি হিসেবে এবং একজন শিল্পী হিসেবে- এই তিন জায়গা থেকে এই অনুভূতি প্রকাশ করার কোন শব্দ-ভাষা আমি খুঁজে পাচ্ছি না।
প্রশ্ন: প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে দোয়া নিয়েছেন, সে অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল?
আরিফিন শুভ: উনি ওনার বাবা সম্পর্কে অনেককিছু বলেছেন। যতটুকু সম্ভব হয়েছে জানার চেষ্টা করেছি। ওনার মুখ থেকে যতটুকু শুনেছি, কাজটা করাতে অনেক অনেক বেশি সহায়ক হবে। এই এক বছরে যতবার ওয়ার্কশপ করেছি, সেটার চেয়ে ওনার সঙ্গে দেখা হওয়ার অল্প মুহূর্তটায় জানা বিষয়গুলোর জন্য কাজ করতে অনেক বেশি সহায়ক হবে।
প্রশ্ন: যখন প্রধানমন্ত্রী বললেন, শুভ আমার বাবার চরিত্রটা ভালো করে কোরো, তখন উত্তরে কী বলেছিলেন?
আরিফিন শুভ: আমি বলেছি দোয়া করবেন। সে দৃশ্যটা এখনো চোখে ভাসছে, তিন-চার ঘণ্টা আমাদের সঙ্গে আলাপ করার পর প্রধানমন্ত্রী যখন বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন, সবাই ওনাকে ঘিরে রেখেছিল। আমি ওনাকে দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম আর ওই দৃশ্যটা আমি মনের কোনে বেঁধে রাখার চেষ্টা করছিলাম। একদম যখন বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন উনি আমাকে দেখতে পাচ্ছিলেন না, হাসি দিয়ে ডাক দিলেন, ‘আমার আব্বা কই?’ তারপর আমি সামনে এগিয়ে গেলাম, আবারও দোয়া চাইলাম। বললেন, ‘মন দিয়ে কোরো। ’ এইটুকুই সারাজীবনে আগলে রাখার মতো সম্পত্তি আমার। এখন পর্যন্ত আমার জীবনের সব থেকে বড় সম্পত্তি এটা।
প্রশ্ন: জাতির জনকের চরিত্রে নিজেকে তুলে ধরবেন, কতটা চ্যালেঞ্জ অনুভব করছেন?
আরিফিন শুভ: আমরা তো মুক্তিযুদ্ধেরের সময় ছিলাম না, বায়ান্নতেও ছিলাম না। ওই সময়ের একজন মুক্তিযোদ্ধা বা একজন মানুষ, যেভাবে ওনাকে ফিল করতে পারবেন-সেটা তো আমরা দেখিনি। তবে ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমি বিমোহিত এবং প্রেমে পড়েছি। যখন কারো সঙ্গে প্রেম হয়ে যায়, তখন সে অন্ধ হয়ে যায়। কথায় আছে-প্রেমেতে অন্ধ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলে যে মানুষটা, আমি তার প্রেমে পড়ে গেছি। আর প্রেম হয়ে গেলে চ্যালেঞ্জটা আসে না। প্রেম থেকে করবো কাজ, চ্যালেঞ্জ নিয়ে না। আমি যুদ্ধে যাচ্ছি না, আমি একটা মহান কাজ করতে যাচ্ছি, মহান কাজে গেলে হার-জিত কোনো বিষয় না। আমার কাছে প্রেমের বিষয়, ওনার আদর্শকে উপজীব্য করে কাজটা করবো নিজের সর্বস্ব দিয়ে।
প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে নিজেকে উপস্থাপন করার জন্য শারীরিক কোনো পরিবর্তন আনতে হয়েছে?
আরিফিন শুভ: আমাদের চোখে যে শেখ মুজিব লেগে আছেন, সেই বঙ্গবন্ধু আর ২৬-২৭ বছরের বঙ্গবন্ধু তো এক ছিলেন না। অনেক লিকলিকে ছিলেন। করোনার আগ পর্যন্ত সবকিছুই ঠিক মতো যাচ্ছিল। কিন্তু করোনার পর ক্লান্তির জন্য চিকিৎসক আমাকে অনেক খেতে বলেছেন। এখন তো চাইলেও কোনো ডায়েট করতে পারছি না। তাহলে আবার কাজটা আর করতে পারবো না। এটা নিয়ে টিমের সঙ্গে কথা হয়েছে; টিম বলেছে চিন্তা না করতে। আর আমি বিশ্বাস করি পরিচালক শ্যাম বেনেগাল নিশ্চয়ই আমার মধ্যে কিছু দেখেছিলেন, না হলে তিন চারমাস ধরে চার-পাঁচবার আমার অডিশন নিতেন না। নিশ্চয় তিনি আমার মধ্যে কিছু পেয়েছিলেন, আমার উপর বিশ্বাস রেখেছেন। তাই আমাকে নিয়েছেন।
প্রশ্ন: ঐতিহাসিক একটা কাজ করতে যাচ্ছেন, মায়ের দোয়া নিয়েছেন?
আরিফিন শুভ: আমার মা তো অসুস্থ, বাংলায় মানসিক ব্যাধি বলে এটাকে। উনি যে সব কথা বোঝেন সেটা নয়। নিশ্চিত হওয়ার পর প্রথম আমি ঘরে ঢুকেই ওনাকে কথাটা বলেছি। উনি তখন আমার মাথায় হাত রেখেছেন।
প্রশ্ন: ভক্তদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?
আরিফিন শুভ: শুধু সবার কাছে একটি অনুরোধ- আমার জন্য দোয়া করবেন, আমার জন্য আশীর্বাদ করবেন, আমাকে শুভ কামনা জানাবেন; যাতে সুস্থ থেকে আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজটা সম্পন্ন করতে পারি। মাত্র করোনা থেকে উঠেছি আমি, শারীরিক দুর্বলতাও আছে। এটা তো আর ইচ্ছাকৃত ছিল না। ঘটনাচক্রে হয়ে গিয়েছে। দেশবাসী, আমার বন্ধু ও শত্রুদেরও বলবো, আমার জন্য দোয়া করতে।
0 Comments