এভার কেয়ার হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর বাসায় ফিরেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বুধবার (৬ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে চারটায় গুলশানের বাসা থেকে রওয়ানা হয়ে বিকাল ৫টায় এভার কেয়ার হাসপাতালে পৌঁছেন তিনি।
প্রায় এক ঘণ্টা শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষার পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন এবং সাড়ে ৬টায় গুলশানের বাসায় পৌঁছেন।
বাসায় ফেরার পর খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় বারের মতো হাসপাতাল থেকে বাসায় আসার পর আজকে ৬ এপ্রিল উনাকে এভার কেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রফেসর ডা. এফএম সিদ্দিকী ও ডা. শাহাবুদ্দীন তালুকদারের নেতৃত্বে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। যে পরীক্ষা নিরীক্ষাগুলো বাসায় করা সম্ভব না সেগুলো করা হয়েছে। এগুলোর রিপোর্ট বৃহস্পতিবার নাগাদ পেয়ে যাব।
ডা. জাহিদ বলেন, আপনারা জানেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন যাবত ক্রনিক ডিজিসে ভুগছেন। উনার ডায়াবেটিস আগে থেকে আছে। তার সঙ্গে রিউমাটেড আর্থারাইটিসের কারণে শারিরীক জটিলতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে অন্যের সাহায্য ছাড়া তিনি চলতে পারেন না। উনার এখন হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে হয়। এ অবস্থায় উনার পরিবারের পক্ষ থেকে দলের পক্ষ থেকে চিকিৎসার জন্য উনাকে বাইরে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।
তিনি এ দেশের একজন বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকই নন, উনি এই দেশের সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, জিয়াউর রহমানের সহধর্মীনি ও এ দেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক। আজকে উনার চিকিৎসার জন্য অনেক বলার পরেও সরকারের অনুমতি না পাওয়ার কারণে বাইরে যেতে পারছেন না। শত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও উনার চিকিৎসায় যেন কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য, পরিবারের সদস্য এবং আমাদের দলের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তার সহধর্মীনি ডা. জুবাইদা রহমান সব সময় উনার সুচিকিৎসার জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল। সে লক্ষ্যে আজকে চতুর্থবারের মতো এভার কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে চিকিৎসার কোনো পরিবর্তন অথবা কোনো কিছু করার প্রয়োজন রয়েছে কি না সেটা আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) নাগাদ স্পষ্ট হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডা. জাহিদ বলেন, আপনারা দেখেছেন যে মানুষটি আলিয়া মাদরাসায় (মাঠের বিশেষ আদালতে) হেটে গিয়েছিলেন। চার বছরের মাথায় ২০২০ সালের ২৫মার্চ থেকে উনি হুইল চেয়ার বাউন্ড হয়েছেন। একজন হাটা মানুষ যদি হুইল চেয়ারে চলে তাহলে সে কি ভাল আছেন? যে মানুষটি এভার কেয়ার হাসপাতালে তিন বারে প্রায় ছয় মাস ভর্তি থেকেছেন। অনেকে অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু আজকের বাস্তবতা হচ্ছে উনি অসুস্থ। এই অসুস্থ মানুষের অসুস্থতা নিয়ে যারা ব্যঙ্গ করে কথা বলেন, তাদেরকে বুঝ দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই।
তিনি বলেন, উনি অসুস্থ যদি নাই হতেন আজকে মেডিক্যাল চেক আপের কি প্রয়োজন ছিল? মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা এমন কি জিনিস অবলোকন করলেন যে উনার পরীক্ষা করা প্রয়োজন। সেজন্যই আজকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ডা. জাহিদ বলেন, উনার যে পরিক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে তার ৯৯ শতাংশের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা হয়েছে। ইমেজিং হয়েছে, ব্লাড, ইউরিন টেস্ট হয়েছে। একজন অসুস্থ মানুষের যেসব পরীক্ষা প্রয়োজন সব করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, লিভার ফাংশন, কিডনি ফাংশন, হার্ট, লাং স্টেটাস প্রতিটি অঙ্গ প্রতঙ্গের পরীক্ষা করা হয়েছে। ইকো, ইসিজি, আল্ট্রাসাউন্ড সবকিছু করা হয়েছে। যেহেতু অনেক পরীক্ষা খালিপেটে করতে হয় সেজন্য তিনি খালি পেটে ছিলেন। এখন উনি আহার গ্রহণ করবেন।
রোজা রাখার কারণে উনি দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন এমন শোনা গিয়েছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. জাহিদ বলেন, খালেদা জিয়া একজন ধর্মপ্রাণ মহিলা, উনি নামাজ পড়েন, কোরআন তেলাওয়াত করেন, রোজা রাখেন। উনি রমজানে জামাতে তারাবিও পড়তেন। এটা আপনারাও জানেন। কাজেই উনি ধর্মকর্ম করেন এটা নতুন করে বলার কোনো অবকাশ নেই।
0 Comments