গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অবাধ গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান: মার্কিন রাষ্ট্রদূত


 ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, একটি আইনসম্মত ও অবাধ গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। তাই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করার পাশাপাশি সাংবাদিকেরা যাতে ভয়ভীতি, হয়রানি বা সেন্সরশিপ ছাড়া সত্য প্রকাশ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে সবার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ইএমকে সেন্টারে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল।


পিটার হাস বলেন, ‘গণমাধ্যমের কর্মীরা প্রতিদিন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে সাহসিকতার পরিচয় দিচ্ছেন, সে জন্য তাঁদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। একটি অবাধ ও মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বাধ্য করেন। তাই তাঁরা যাতে অবাধে কাজ করতে পারেন এবং সত্যকে সামনে নিয়ে আসতে পারেন, তা নিশ্চিত করা জরুরি।’

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের সাম্প্রতিক সমীক্ষার উদাহরণ টেনে পিটার হাস বলেন, অবাধ গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যে ঠিক পথে আছে, তা কিন্তু নয়। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী ১৮২টি দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৪২তম। অর্থাৎ শীর্ষ তালিকার কাছাকাছি যুক্তরাষ্ট্র নেই। তাই যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতির উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে।


একই সমীক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৬২তম। গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশের ১০ ধাপ অবনতি হয়েছে। অবাধ গণমাধ্যমের সূচকে বাংলাদেশের নিম্নমুখিতার অন্যতম কারণ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ)। ওই প্রতিবেদনে ডিএসএকে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য একটি অন্যতম মধ্যযুগীয় আইন হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।


পিটার হাস বলেন, ‘মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে এবং বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট করেই তুলে ধরেছে। আলোচনায় মূল প্রাবন্ধিক সরকারের বিবেচনায় থাকা গণমাধ্যমবিষয়ক আরও কিছু আইনের খসড়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। আমরা এগুলো নিয়েও উদ্বিগ্ন। ডিজিটাল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ওটিটি নীতিমালা; ডেটা সুরক্ষা বিধি এবং গণমাধ্যমকর্মী আইনের বিষয়েও আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। এগুলো এখনো পাস না হলেও আমাদের ভয়, এগুলোতে এমন কিছু বিধান আছে, যা সাংবাদিক এবং অন্যদের মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে ভয়ভীতি দেখানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে।’

মার্কিন রাষ্ট্রদূত মনে করেন, নির্বাচনের সময় গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, যেকোনো জায়গায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণের মাধ্যমে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের জনগণ যাতে তাঁদের সরকার নির্বাচিত করতে পারেন, এটাই যুক্তরাষ্ট্রের নীতি।

আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকলস, যুক্তরাজ্যের উপহাইকমিশনার জাবেদ প্যাটেল ও প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান।

Post a Comment

0 Comments