জামালপুর পৌরসভার মেয়র ছানোয়ার হোসেন ছানু ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নূর হোসেন আবাহনীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মেয়রের বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। পরে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মরকলিপি প্রদান করেন। এ সময় বিক্ষুব্ধরা মেয়রের কুশপুতুল দাহ করেন। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন করা হয়। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে বক্তব্য দেন পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নূর হোসেন আবাহনীর বাবা আব্দুর রশিদ, বোন রিক্তা বেগম, প্রতিবেশী মো.সাজু মিয়া, সুমন মিয়া প্রমুখ। এ সময় বক্তরা বলেন, পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নূর হোসেন আবাহনীকে মেয়রের বাড়ির পাশে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। পরে তাকে পুনরায় ইটভাটায় নিয়ে নির্যাতন করে ন্যাড়া করে দেন পৌর মেয়র ও তার লোকজন। এ সময় নূর হোসেন আবাহনীর ভ্রু ফেলে দেন তারা। আমরা ভূমিদস্যু পৌর মেয়রকে আর দেখতে চাই না। তার বিচার চাই। মানববন্ধনে উপস্থিত সকলেই মেয়রের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। পরে কয়েকজন জেলা প্রশাসকের কাছে স্মরক প্রদান করেন। জেলা প্রশাসকের পক্ষে স্মরকলিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল হক মৃদুল। জানা গেছে, জামালপুর শহর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জামালপুর পৌরসভার পাথালিয়া কামারবাড়ি এলাকার মো. আব্দুর রশিদের ছেলে নূর হোসেন আবু হানি (৩৩) ২৯ মার্চ বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নিজের ফেসবুক আইডিতে লাইভে এসে জামালপুর পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেনকে ‘ভূমিদস্যু’ ও ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যায়িত করে জমি দখল সংক্রান্ত বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য দেন। মেয়রের বিরুদ্ধে জনগণকে রাস্তায় দাঁড়ানোরও আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে তিনি পৌরসভার মধ্যবর্তী নির্বাচনও দাবি করেছেন। তার ওই লাইভ ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়লে মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন এবং তার স্বজন ও সমর্থকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ২৯ মার্চ সন্ধ্যার পর মেয়রের বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা পাথালিয়া এলাকায় নূর হোসেন আবু হানিকে একা পেয়ে তাকে ব্যাপক নির্যাতন চালায়। হামলাকারীরা লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে তার দুই পা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তাক্ত জখম করেছে। এ ঘটনার খবর পেয়ে স্বজনরা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে প্রথমে শহরের একটি বেসরকারি হাসপতালে নিয়ে যায়। পরে তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে নূর হোসেনের ওপর সন্ত্রাসী হামলার পরপরই জামালপুর পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন নিজেই বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভে বানোয়াট অপপ্রচার করে মানহানির অভিযোগ এনে ২৯ মার্চ রাতে নূর হোসেনকে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জামালপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ২৯ মার্চ রাতেই পুলিশ ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। ৩০ মার্চ বিকেলে তাকে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। নূর হোসেনের ওপর সন্ত্রাসী হামলা প্রসঙ্গে জামালপুর পৌরসভার মেয়র ছানোয়ার হোসেন এ বলেন, শহরের পাথালিয়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ছয় একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত নূর হোসেন দীর্ঘ দিন ধরে সেই প্রকল্পের জন্য তাদেরও কিছু জমি অধিগ্রহণ করা নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আসছিলেন। নূর হোসেন ২৯ মার্চ বিকেলে তার ফেসবুক পেজে লাইভে এসে আমার পৈত্রিক জমির পাশে গিয়ে মাটি ভরাটের কাজের লাইভ দিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট অভিযোগসহ বক্তব্য দিয়ে আমার সম্মানহানি করেছে। এতে আমার সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হয়ে নূর হোসেনকে মারধর করেছে শুনেছি। আমি তার বিরুদ্ধে সদর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেছি। জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহনেওয়াজ এ প্রতিবেদককে বলেন, জামালপুর পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বাদী হয়ে নূর হোসেনকে একমাত্র আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন। সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৩০ মার্চ বিকেলে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। নূর হোসেনকে নির্যাতনের ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি।
0 Comments