পলাশ সেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ
নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে চলছে তোলপাড় । চলছে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা । এবার আলোচনা সমালোচনার খোড়াক হিসেবে বিতর্ক চরম আকার ধারণ করেছে । আর এই বিতর্কের কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে বিএনপির ডাকসাইটের নেতা মনিরুল আলম সেন্টুর হাতে দেয়া হয়েছে নৌকা । এ নিয়ে বড় ধরণের বিতর্ক নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে । এমন সমালোচনায় গণমাধ্যমে সাফ জবাব দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই
নারায়ণগঞ্জ সদরের কুতুবপুরে ইউপি নির্বাচনে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতাকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা করা নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
গত শনিবার রাতে মনোনয়ন বোর্ডের সভায় উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। কুতুবপুরে নৌকার প্রার্থী করা হয়েছে মনিরুল আলমকে। তিনি ফতুল্লা থানা বিএনপির সহ সভাপতি ছিলেন। তাঁকে দলটি বহিষ্কার করে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ।
মনিরুল আলম নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী সাংসদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ থেকে ইউপি নির্বাচনে দলের একক প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম পাঠানো হয়েছিল। থানা ও জেলা কমিটি থেকে অনুমোদিত হয়ে তাঁর নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয় ।
মনিরুল আলমকে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মানা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। দলে যোগ দেওয়ার তিন বছরই হয়নি, এর মধ্যে তিনি দলীয় প্রতিনিধি হলেন। তবে তিনি প্রভাবশালী সাংসদের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না। তাঁদের অভিযোগ, এর আগে ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে মনিরুল আলমকে জয়ী করতে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করে আওয়ামী লীগের একটি অংশ। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম রসুল সিকদার পান ১০ হাজার ৯৮৭ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনিরুল আলম ৪২ হাজার ৯০৩ ভোট পান। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী গোলাম রসুল সিকদারের পক্ষে ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি।
মনিরুল আলম ফতুল্লা থানা বিএনপির সহ সভাপতি ছিলেন। তাঁকে দলটি বহিষ্কার করে। তাঁকে নৌকার প্রার্থী করা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফতুল্লায় আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের পক্ষে প্রচারণা অনুষ্ঠানে নৌকায় ভোট চাওয়ায় তৎকালীন বিএনপির সহসভাপতি মনিরুল আলমকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির আন্দোলন–সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন মনিরুল আলম। তাঁর বিরুদ্ধে নাশকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে।
জানতে চাইলে কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জসীম উদ্দিন বলেন, এলাকাটি বিএনপির দুর্গ। এখানে তিনবার নৌকা পরাজিত হয়েছে। কোনো প্রার্থী জয়ী হতে না পারায় বিএনপির বহিষ্কৃত নেতাকেই আওয়ামী লীগে যোগদান করিয়ে নৌকার প্রার্থী করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে নাশকতার সাত-আটটি মামলা রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে মনিরুল আলম সেন্টু বলেন, ২০১৮ সালে দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর ২০১৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এর আগে থেকে তিনি বিএনপির রাজনীতির স্লোগান দিলেও এখন আওয়ামী লীগের স্লোগান দেবেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই বলেন, মনিরুল আলম আওয়ামী লীগের কেউ নন। তিনি তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুলের লোক। তাঁর নাম কীভাবে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব করা হয় ? মনোনয়ন প্রস্তাবে এ কারণে তিনি সই করেননি উল্লেখ করে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত এককভাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সই করলেও তিনি আপত্তি জানিয়ে সই করেননি। তাঁর সাক্ষর ছাড়াই মনিরুলের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা ধরেননি।
0 Comments