মালেশিয়ায় আল জয়নাল পুত্র কন্টিনার মাফিয়া নাদিমের কালো টাকায় “হাওয়া ভবন”


 নারায়ণগঞ্জে সারা বছর জুড়ে নানা অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে ব্যাপক সমালোচনায় থাকেন জয়নাল আবেদিন ওরফে আল জয়নাল। নানা জনের কাছে তিনি নানা ভাবে পরিচিত। কেউ তাকে চিনেন জাতীয় পার্টির নেতা হিসেবে, আবার কেউ চিনেন শিল্পপতি হিসেবে। তবে নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত ভূমিদস্যু হিসেবেই। বছরে এ জমিসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কারো না কারোর সাথে তার বিরোধ হবেই। বিধবার জমি থেকে শুরু করে প্রতিবন্ধি কিংবা অসহায় মানুষের জমিও তার কাছ থেকে রক্ষা পায়না।

তবে আল জয়নালের এমন অভিযোগ থাকলেও তার ছেলে মো: নাদিম হোসাইনের বিরুদ্ধে কিন্তু এতদিন কোন অভিযোগই ছিলো না। মানুষ ভাবছিলো, পিতা যেমন তেমন সন্তান মাশাআল্লাহ্ অনেক ভালো। কিন্তু মানুষের সেই চিন্তা ভাবনাকে ধূলিসাৎ করে দিলো নাদিমের বিরুদ্ধে এমন সব অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে স্মাগলারের মত অভিযোগ ছাড়াও রয়েছে আরও কিছু অভিযোগ। সম্প্রতি এসব অভিযোগের বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে দেশ ও দেশের বাইরের কিছু ব্যবসায়ী। তবে তারা কেউ নাম প্রকাশ করতে বারণ করেছেন।

মালেশিয়ার কন্টিনার মাফিয়া আল জয়নালের পুত্র ওরফে কন্টিনার মাফিয়া এবং বিকেএমইএর সদস্য নামিরা অ্যাপারেলস এর মালিক নাহিদ গড়ে তুলেছে বিশাল কালো টাকায় হাওয়া ভবন।

আবার এদিকে মালয়েশিয়ায় বসিয়েছে কালো টাকা সাদা করার মেশিন যার নাম দিয়েছে নামিরা ফ্যাশান।

জানা যায় দীর্ঘদিন যাবত সে এমন ব্যবসা করে আসছেন অনেক পত্র পত্রিকায় ও এসেছেন কিন্তু তার টাকার ক্ষমতার কাছে হার মেনে গেছে প্রশাসনিক ক্ষমতা। তাছাড়া রয়েছে অনেক বিত্ত শালীদের শেল্টার। বাংলাদেশের অনেকেই এর মধ্যে মালয়েশিয়া একজনের নাম জানা গেছে তার নাম হচ্ছে মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে মুস্তাফিজ ওরফে ফরমা মোস্তাক।  তিনি হান্তুয়া মার্কেটে পুলিশের ইমিগ্রেশন ফরমা নামে পরিচিত। তিনি একজন বাংলাদেশী হয়ে বাঙালির ক্ষতি করে সে সাধারণ বাঙ্গালীদের এরেস্ট করিয়ে আবার নিজে পুলিশের হাত থেকে ছাড়িয়ে আনেন এতে বড়  অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। সেই লোকের শেল্টার এসে গর্বে গর্বিত কন্টিনার মাফিয়া নাহিদ।

গত চার সেপ্টেম্বর ২০২৩ দৈনিক প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, পোশাক শিল্পের নামে ৩০০ কোটি টাকা পাচার দশটি কোম্পানির মাধ্যমে, এই ১০ কোম্পানির এক কোম্পানির মালিক মাফিয়া নাহিদ।

সম্প্রতিকালে আরো অনেক পত্রপত্রিকায় এই ব্যাপারে অনেক কথা লেখালেখি হলেও তা আইনের  নজর এড়িয়ে গেছে।

তেমনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মালোয়েশিয়ান প্রবাসী ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশ থেকে ইনস্টি ট্রান্সপোর্ট নামক কোম্পানি দেখিয়ে মালামাল কালেকশন করা হয় এবং সেই মালামাল মালয়েশিয়াতে পাঠানো হয় কন্টেইনারের মাধ্যমে। কিন্তু এই কন্টেইনারের কোন রেকর্ড থাকে না। সবাইকে বলা হয় যে, স্যাম্পল। কিন্তু স্যাম্পল হিসেবে দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে এই মাল মালয়েশিয়াতে পাঠানো হয় এবং মালয়েশিয়াতে যাবার পর যখন এই কন্টেইনার আনলোডিং হয়, তখন যার যার মালামাল কন্টেইনারে থাকে সবাই এসে নিজ দায়িত্বে যার যার মালামালগুলো বুঝে নিয়ে চলে যায় কোন প্রকার রেকর্ড ছাড়াই।

অপর এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, মালেয়েশিয়ার বাংলাদেশী ব্যবসায়ী এজে ফ্যাশনের নাদিমের কল্যাণে মালয়েশিয়ার হাংতুয়া মার্কেট এখন হান্তুয়া পোর্টে পরিনত হয়েছে। মালোয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অবস্থিত এ মার্কেট। যে মার্কেট সারা মালেয়েশিয়া এবং বাংলাদেশের কাছেও পরিচিত টি-শার্টের হোলসেল মার্কেট হিসেবে। সেই মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের আল-জয়নালের ছেলে নাদিম। তিনি একজন ভালো মানের ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত হলেও তার সকল ব্যবসার আড়ালে তিনি একজন কন্টেইনার ব্যবসায়ী এবং সিএনএফ ব্যবসায়ী নামেই সর্বমুখে পরিচিত। তিনি সেখানে তার টাকার ক্ষমতার জোরে বিশাল সা¤্রাজ্য তৈরি করেছেন। যে সা¤্রাজ্যে তিনি একজন বেতাজ বাদশা।

তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, তিনি বাংলাদেশ থেকে মালোয়েশিয়াতে কন্টেইনার নিয়ে আসেন কোন কাগজপত্র ছাড়া, কোন ট্যাক্স প্রদান ছাড়া, কোন প্রকার সিএনএফ বিল, কোন প্রকার কাস্টম ছাড়া স্যাম্পল হিসেবে মাল নিয়ে আসেন এবং সেই মালের জন্য কোন টাকা পয়সা বাংলাদেশে যায় না। কোন প্রকার টিটি এলসি করতে হয় না। বাংলাদেশ থেকে তিনি বাংলাদেশ পোর্টে যোগাযোগ করে সেখান থেকে তার ক্ষমতা আর টাকার জোর দেখিয়ে মালোয়েশিয়াতে মালামাল নিয়ে আসেন। কন্টেইনার ভরা থাকে, বলা হয় কন্টেইনার শুন্য ‘স্যাম্পল’। সেই কন্টেনারে থাকে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর  । সেই মালমাল মালোয়েশিয়ার মার্কেটে লোকাল পারচেজ দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে সেল করেন। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে যে মাল নিয়ে আসেন, সেই মালগুলোর রেকর্ড থাকে না। প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৭ টি কন্টেইনার আনলোডিং হয়। তিনি এখানে প্রত্যেকটি কন্টেইনার আনার জন্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সিবিএম হিসেবে টাকা আদায় করেন। প্রতিদিন সিবিএম প্রতি তিনি ৩০০ রিঙ্গিত চার্জ করেন।

প্রমাণ সাপেক্ষ হাতে নিয়ে আরেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, কিছুদিন আগে বাংলাদেশে নাদিম হোসাইনের একটি বিশাল চালান ধরা পড়েছিলো। সেই চালানে নাদিমের ৬৬ টি কন্টেইনার ছিলো। বাংলাদেশে তার বাবার ক্ষমতা দেখিয়ে কিছু অসাধু কাস্টমস অফিসারদের হাত করেছেন এবং মালোয়েশিয়াতে এসে সেই টাকার জোর দেখিয়ে সবকিছু করেছেন। প্রতি রাতে হাংতুয়া মার্কেটে নাহিদের ১৭ থেকে ১৮ টি কন্টেইনার আনলোডিং হয় এবং প্রতিটি কন্টেইনারে তার ইনকাম থাকে ২০ থেকে ২৫ হাজার রিঙ্গিত, যা বাংলা টাকায় ৬ থেকে ৭ লক্ষ টাকা।

Post a Comment

0 Comments